ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কুমোরটুলি ঘটনায় নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য এল সামনে(Madhyamgram Incident)। কুমোরটুলিতে ট্রলি ব্যাগে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ আটক করেছে দু’জনকে। আরতি ঘোষ ও ফাল্গুনী ঘোষ মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লি এলাকার বাসিন্দা। সংবাদমাধ্যমে কুমোরটুলির ঘটনা জানাজানি হতেই মুখ খোলেন পড়শিরা। তারা বললেন তাঁরা মা মেয়ের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল না। তারা সাধারনের তুলনায় বিলাসে মত্ত থাকতেন সর্বদা। মা ও মেয়ের উশৃঙ্খল জীবনযাত্রায় তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন বলে অভিযোগ। মৃত মহিলা ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি বলেই জানা গেছে।
গভীর রাত চলত মধুচক্র (Madhyamgram Incident)
মঙ্গলবার সকালে কলকাতার কুমারটুলি এলাকায় ট্রলি ব্যাগে করে দেহ ফেলতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন মা আরতি ঘোষ ও মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষ। তাঁরা দু’জনে গত আড়াই বছর ধরে মধ্যমগ্রামের(Madhyamgram Incident) বীরেশপল্লি এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। সংবাদমাধ্যমে এদিন কুমারটুলির ঘটনা দেখানোর পরেই বীরেশপল্লির বাসিন্দারা জানান, মা ও মেয়ে বিলাশবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন। প্রায়ই রাতের দিকে অপরিচিত যুবকরা ওই বাড়িতে যাতায়াত করত বলে পড়শিদের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, গভীর রাত পর্যন্ত ওই বাড়িতে মধুচক্র চলত।
ট্রলি নিয়ে কুমোরটুলি (Madhyamgram Incident)
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ভারতী ও ফাল্গুনী একটি ট্রলি ব্যাগে সুমিতার দেহ প্লাস্টিকে মুড়ে বীরেশপল্লি থেকে একটি ভ্যানে চেপে তারা প্রথমে মধ্যমগ্রাম দোলতলায় যান(Madhyamgram Incident)। সেখান থেকে একটি গাড়ি করে কাজিপাড়া রেলস্টেশনে যান। কাজিপাড়া থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন। প্রথমে প্রিন্সেপঘাটে তাঁরা দেহভর্তি ট্রলি গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ায় মা ও মেয়ে কুমারটুলিতে চলে যান। গঙ্গার ঘাটে ট্রলিটি ফেলার সময় দু’জন স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়ে যান।
আরও পড়ুন: Kolkata: খুনের পর ট্রলিতে দেহ ভরে বারাসাত থেকে কলকাতায় ২ মহিলা
মা ও মেয়ে কোনও কাজ করতেন না
স্থানীয় সূত্রে খবর, মা ও মেয়ে সেভাবে কোনও কাজ করতেন না । বরং তাঁরা উৎশৃঙ্খল জীবনযাত্রা বেছে নিয়েছিলেন । রাত-বিরেতে নাকি বহিরাগত ছেলেদের ভিড় লেগেই লাগত ভাড়া বাড়িতে । সেখানেই আরতি ও তাঁর মেয়ে ফাল্গুনীর দুষ্কর্ম চলত বলে অভিযোগ ৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের দু’জনের চালচলনও ঠিক ছিল না বলে অভিযোগ । এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মধ্যমগ্রাম পুরসভা এবং থানাতে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন । বাড়ির মালিককেও ভাড়াটে তুলে দিতে বলা হয়েছিল । কিন্তু, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আগেই ঘটে গেল এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ।
উদ্ধার করা হয় ইট
মঙ্গলবার রাতেই অভিযুক্ত ফাল্গুনীকে নিয়ে মধ্যমগ্রামের বীরেশপল্লীতে তাঁর ভাড়াবাড়িতে গিয়েছিল কলকাতার নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ(Madhyamgram Incident)। সঙ্গে ছিল ফরেন্সিক দলও। ভাড়াবাড়ি থেকে ২০টি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, যে ইট দিয়ে পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষের মাথা, মুখ এবং ঘাড়ে আঘাত করেছিলেন ফাল্গুনী, সেটিও উদ্ধার করা গিয়েছে। ওই ইট বাড়ির বাইরে বাগানে ফেলে দিয়েছিলেন ফাল্গুনী। ধৃতরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বচসা হয়েছিল। কিন্তু কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও ফাল্গুনী পুলিশকে জানান, সোনার গয়নার ভাগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল তাঁদের। তা থেকেই খুনের ঘটনা।
আরও পড়ুন: Kolkata: মহিলার হারানো ব্যাগ উদ্ধার করল কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ
খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়
ধৃতরা পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছেন যে তাঁরাই ওই প্রৌঢ়াকে খুন করেছেন। তবে তাঁদের বয়ানে কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছে পুলিশ। সেই ক্ষেত্রে তাঁদের খুনের মোটিভ কী ছিল, তা জানতে এখন তৎপর তদন্তকারীরা। সাংবাদিক বৈঠকে এই ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিপি মনোজ ভার্মা বলেন, ”মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে নর্থ পোর্ট থানায় খবর আসে। তবে মূল ঘটনা যেহেতু মধ্যমগ্রামে ঘটেছে তাই সেখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। আমাদের টিম সেখানে যাবে, ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে।”
পচা গন্ধ ঢাকতে রাসায়নিক স্প্রে
পুলিশি জেরায় ফাল্গুনী দাবি করেছেন, দুদিন আগে খুন করেছিলেন তিনি। মৃতদেহের পচা গন্ধ ঢাকতে রাসায়নিক স্প্রে করে রাখা হয়েছিল। এই দাবি কতটা সত্যি তা জানার চেষ্টায় পুলিশ। সিপির কথায়, সোমবার বিকেলের দিকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে দেহে পচনের লক্ষণ আসতে পারে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না। বারাসাত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি সেখানে কলকাতা পুলিশের টিম যাবে বলেই জানান তিনি।