ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ব্রেক্সিটের প্রায় ৯ বছর পর, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সঙ্গে নতুন বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করল ব্রিটেন (Britain EU Relation)। সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেনের যৌথ সম্মেলনে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এই প্রথমবার এত বড় পরিসরে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হলো।
কী কী থাকবে নতুন চুক্তিতে? (Britain EU Relation)
চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপের বাজারে ব্রিটেনের কৃষিপণ্য, খাদ্য ও জ্বালানি রফতানি সহজ হবে (Britain EU Relation)। এতে ব্রিটেনের নাগরিকরা খাবারের দাম কমে যাওয়া এবং শক্তি নিরাপত্তা বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়িয়ে যৌথ নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান এবং সামরিক কৌশলে সমন্বয়ের পথ খুলে গেল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার এই চুক্তিকে “ভবিষ্যতের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এখন পুরনো বিতর্ক থেকে সরে এসে বাস্তব সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। এই চুক্তি ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক ১,২১০ কোটি ডলার যুক্ত করতে সাহায্য করবে।”
কেন আবার চুক্তি করলো ব্রিটেন? (Britain EU Relation)
বিশ্লেষকদের মতে, এই নতুন চুক্তি শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ (Britain EU Relation)। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ব্রিটেন ও ইউরোপের মধ্যে সম্পর্ক ধীরে ধীরে তিক্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি — বিশেষ করে রুশ-ইউক্রেন সংঘাত এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি — ইউরোপ ও ব্রিটেনকে কাছাকাছি আসতে বাধ্য করেছে। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকেই ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্কের নয়া উষ্ণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি সম্প্রতি ইউরোপকে নিজেদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব আরও বেশি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গই দুই পক্ষকে পারস্পরিক সহযোগিতার দিকটি নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে বলে কূটনৈতিক মহলের অভিমত।

ব্রেক্সিট ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত? (Britain EU Relation)
রয়টার্সের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে অনেক ব্রিটিশ নাগরিক মনে করছেন, ব্রেক্সিট ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত (Britain EU Relation)। যদিও অধিকাংশই আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফিরে যেতে চান না। এই পরিস্থিতিতে, ইউরোপের সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরি করা ব্রিটেনের কৌশলগত লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র সঙ্গে স্টার্মারের সদ্য ঘনিষ্ঠতা এবং জার্মানি, ইতালি সহ অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরিসরও এই চুক্তির পথে সুগম করেছে।

সার্বিকভাবে এই চুক্তিকে পোস্ট-ব্রেক্সিট যুগের একটি নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে (Britain EU Relation)। একদিকে যখন বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতা, অন্যদিকে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপ ও ব্রিটেনের এই ঐক্যবদ্ধতা দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক হতে পারে।