ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (Donald J. Trump) ও চিনের (Xi Jinping) মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল বেজিং-এর এক চাঞ্চল্যকর সামরিক পরীক্ষার মাধ্যমে (Chinese Hydrogen Bomb)। সম্প্রতি চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA) একটি অতি শক্তিশালী অ-পরমাণু হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই পরীক্ষাকে শুধু একটি সামরিক কৌশল হিসেবেই নয়, বরং তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবেও ব্যাখ্যা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা।
প্রযুক্তির দিক থেকে যুগান্তকারী সাফল্য (Chinese Hydrogen Bomb)
এই অ-পরমাণু হাইড্রোজেন বোমাটি তৈরি করেছে চিনের চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশনের (CSSC) অধীনে থাকা ৭০৫ রিসার্চ ইনস্টিটিউট(Chinese Hydrogen Bomb)। মূলত সাবমেরিন ও জলের নিচে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র তৈরিতে খ্যাত এই প্রতিষ্ঠান এবার সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি প্রকল্পে সাফল্য পেল। এই হাইড্রোজেন বোমাটিতে ব্যবহৃত হয়েছে কঠিন অবস্থার ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড—যা প্রচলিত চাপযুক্ত ট্যাঙ্কের তুলনায় অনেক বেশি হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, একবার সক্রিয় হলে এই ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে, ফলে কয়েক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটি অগ্নিকুণ্ড সৃষ্টি হয়। পরীক্ষার সময় এই বোমাটি মাত্র দু’কিলো ওজনের হলেও তা থেকে প্রথাগত টিএনটি বিস্ফোরণের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি শক্তি উৎপন্ন হয়। বিস্ফোরণের সময় সাদা রঙের অগ্নিগোলকের সৃষ্টি হয়, যার স্থায়িত্ব ছিল দুই সেকেন্ডের বেশি।
সুনির্দিষ্ট ধ্বংস ও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ (Chinese Hydrogen Bomb)
চৈনিক সামরিক গবেষকদের মতে, এই ধরনের অস্ত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ সম্ভব, যা নির্দিষ্ট স্থানে বড় মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে (Chinese Hydrogen Bomb)। এমনকি বোমার মাত্র দুই মিটার দূরত্বে সর্বোচ্চ চাপ পৌঁছেছিল ৪২৮.৪৩ কিলোপাস্কালে—যা একটি বিপুল শক্তিশালী প্রভাব নির্দেশ করে। গবেষণা জার্নাল ‘Projectiles, Rockets, Missiles and Guidance’-এ এই বোমা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।বিশ্লেষকেরা আরও বলেন, বিস্ফোরণের সময় বোমার ভিতরের ম্যাগনেশিয়াম হাইড্রাইড গুঁড়ো তাপে উত্তপ্ত হয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত করে, যা মুহূর্তের মধ্যেই বাতাসে জ্বলে উঠে একটি বিস্তৃত অঞ্চলকে দগ্ধ করে ফেলে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

PLA-এর সম্ভাব্য ব্যবহার ও সামরিক কৌশল (Chinese Hydrogen Bomb)
সাবেক সেনাকর্তাদের মতে, PLA এই হাইড্রোজেন বোমাটি যুদ্ধক্ষেত্রে দু’ভাবে ব্যবহার করতে পারে—প্রথমত, শত্রুপক্ষের রসদ সরবরাহের রাস্তা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা যোগাযোগ ব্যবস্থা নিমেষে পুড়িয়ে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, সুনির্দিষ্ট এলাকাকে ধ্বংস করে শত্রু বাহিনীর অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া। এটি সরাসরি কোনো পারমাণবিক অস্ত্র না হলেও এর বিধ্বংসী ক্ষমতা তাকে কার্যত ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’-এর কাতারে স্থান দেয়।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বার্তা (Chinese Hydrogen Bomb)
এই অস্ত্র পরীক্ষা শুধু তাইওয়ান নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও চিনের এক স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হচ্ছে(Chinese Hydrogen Bomb)। বেজিং বরাবরই তাইওয়ানকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ বলে মনে করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইপে’র সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে চরমভাবে বিরোধিতা করে। এমন পরিস্থিতিতে চিনের এই পদক্ষেপ তাইওয়ানকে ঘিরে মার্কিন-চিন সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।২০২২ সালের অক্টোবর থেকে PLA তাইওয়ানকে ঘিরে বিভিন্ন সামরিক মহড়া চালিয়ে আসছে। তাইওয়ান দখলের সম্ভাব্য পরিকল্পনার আভাসও একাধিকবার দিয়েছে চিন। এদিকে আমেরিকা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেকোনো মূল্যে তাইওয়ানকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দেবে।
আরও পড়ুন: Harvard University : হার্ভার্ড বনাম ট্রাম্প প্রশাসন! অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে আইনি লড়াই
চিনের প্রতিরক্ষা বাজেট ও আধুনিকীকরণ(Chinese Hydrogen Bomb)
চিনের সামরিক আধুনিকীকরণ দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অগ্রাধিকার(Chinese Hydrogen Bomb)। চলতি বছরের মার্চ মাসে জাতীয় প্রতিরক্ষা বাজেট ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪,৯০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। শুধু সেনাবাহিনী নয়, মহাকাশ গবেষণা, রণতরীর আইইপি প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং সৌর, বায়ু ও হাইড্রোজেন শক্তিকে ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব অস্ত্র তৈরিতেও মনোযোগ দিচ্ছে বেজিং।এই অ-পরমাণু হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা বিশ্ব রাজনীতির অঙ্গনে চিনের এক নতুন শক্তি প্রদর্শন। এটা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, কৌশলগত ক্ষেত্রেও এক বড় অগ্রগতি। বেজিং এই মাধ্যমে যে বার্তা দিয়েছে, তা স্পষ্ট—তারা প্রস্তুত, এবং যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে তাইওয়ানসহ যে কোনও ‘শত্রু’ শক্তির মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম। এই নতুন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের কৌশল কী হবে, তা এখন সময়ই বলবে।