ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২৮ এপ্রিল কানাডার ফেডারেল নির্বাচন অভিজ্ঞ রক্ষণশীল পিয়েরে পোইলিভর এবং লিবারেল নবাগত মার্ক কার্নির মধ্যে একটি নাটকীয় প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে (Canada Election 2025)। মার্কিন বাণিজ্য হুমকি এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংগ্রাম নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পাশাপাশি, ভোটাররা নতুন নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতাকে তুলনা করছেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছতে প্রস্তুত কানাডা (Canada Election 2025)
২৮ এপ্রিল কানাডায় ভোট। দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে দুই প্রধান নেতা মুখোমুখি হয়েছেন—লিবারাল নেতা মার্ক কার্নি এবং কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পইলিয়েভর (Canada Election 2025)। এই নির্বাচন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বছরের শুরুতেই দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর পদত্যাগ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
লিবারাল নেতা মার্ক কার্নি (Canada Election 2025)
মার্ক কার্নি, যিনি লিবারাল পার্টির নতুন নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, নিজের দলে ৮৫ শতাংশের বেশি সমর্থন পেয়ে শীর্ষপদে আসীন হয়েছেন (Canada Election 2025)। তবে কার্নির আগে কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই।তিনি মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এবং মাত্র ৯ দিন পর তড়িঘড়ি নির্বাচন ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কথা জানিয়ে তিনি জনগণের কাছ থেকে সরাসরি ম্যান্ডেট নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝান।
৬০ বছর বয়সী কার্নি অর্থনীতির জগতে পরিচিত নাম (Canada Election 2025)। তিনি ব্যাংক অফ কানাডা এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর ছিলেন। ২০০৮ সালের বিশ্ব আর্থিক সংকট ও ব্রেক্সিট চলাকালীন সময়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কার্নি সরকারী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আবাসন উন্নয়ন বাড়ানোর এবং আমেরিকার অর্থনৈতিক হুমকির মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব এবং সংসদে কোনও আসন ছাড়াই নির্বাচন ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
আরও পড়ুন: Blast in Pakistan: শান্তি বৈঠকের মাঝেই রক্তস্নান, দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ!
কনজারভেটিভ শিবিরের অভিযোগ, তিনি বিনিয়োগ সংস্থা ব্রুকফিল্ডে থাকার সময় কিছু বিতর্কিত আর্থিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এখন কিছু কনজারভেটিভ নীতি, যেমন কার্বন ট্যাক্স বাতিল করা, গ্রহণ করেছেন। তবুও কার্নি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, কানাডা কখনও “আমেরিকার ৫১তম রাজ্যে” পরিণত হবে না এবং মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পইলিয়েভর (Canada Election 2025)
৪৫ বছর বয়সী পইলিয়েভর প্রায় দুই দশক ধরে কানাডার রাজনীতিতে সক্রিয়। ছোট সরকার এবং কম নিয়ন্ত্রণের পক্ষে তিনি বরাবরই সওয়াল করেছেন। তিনি “কমন সেন্স” নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রচার চালাচ্ছেন—ট্যাক্স কমানো, বাড়ি নির্মাণে বাধা কমানো এবং অপরাধ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি প্রয়োজনে কানাডার অধিকার সনদের কিছু অংশ অগ্রাহ্য করারও প্রস্তাব দিয়েছেন।
পইলিয়েভরের আগ্রাসী রাজনৈতিক ভঙ্গি প্রশংসা এবং সমালোচনা দুই-ই টেনেছে। তাঁর সমর্থকেরা মনে করেন, তিনি “ভুলে যাওয়া” কানাডিয়ানদের কণ্ঠস্বর, আবার সমালোচকরা তাঁকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো বলে আখ্যা দেন। তবে পইলিয়েভর নিজে দাবি করেছেন, তাঁর রাজনীতির ধরন ট্রাম্পের থেকে আলাদা। ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, পইলিয়েভর “পর্যাপ্ত ম্যাগা (MAGA)” নন।
এখন সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন এগিয়ে থাকার পর কনজারভেটিভরা পিছিয়ে পড়েছে এবং লিবারালরা আবারও এগিয়ে গেছে। অনেকে বলছেন, কার্নির নেতৃত্বে লিবারালরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে পারে।
আরও পড়ুন: Nawaz Sharif On Pahalgam : ক্ষুব্ধ ভারতকে শান্ত করতে ভাই শাহবাজকে কী পরামর্শ দিলেন নওয়াজ শরীফ?
তৃতীয় শক্তি: উপস্থিতি আছে, শক্তি কম
যদিও মূল লড়াই কার্নি ও পইলিয়েভরের মধ্যে, অন্য নেতারাও নির্বাচনে রয়েছেন, তবে তাঁদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা কম।
জগমিত সিংহ
এনডিপি (নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি)-র নেতা জগমিত সিংহ কানাডার ইতিহাসে প্রথম শিখ দলের নেতা। আগে তিনি লিবারাল সংখ্যালঘু সরকারের “সাপ্লাই অ্যান্ড কনফিডেন্স” চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু গত বছর শ্রমিক সমস্যার কারণে তিনি এই সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে এনডিপির জনপ্রিয়তা প্রায় ৮.৫ শতাংশের আশেপাশে। সিংহের বক্তব্য, লিবারালরা “মানুষকে হতাশ করেছে” এবং “আরেকটা সুযোগের যোগ্য নয়”।
ইভ-ফ্রঁসোয়া ব্লাঁশে
কেবল কুইবেক অঞ্চলের ব্লক কুইবেকোয়া পার্টির নেতা ইভ-ফ্রঁসোয়া ব্লাঁশে সরাসরি ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে তাঁদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই। তবে কুইবেকে কিছু আসনে প্রভাব ফেলতে পারেন।
অন্যান্য দল
এছাড়াও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে গ্রিন পার্টি (নেতৃত্বে এলিজাবেথ মে ও জনাথন পেদনো) এবং পিপল’স পার্টি অব কানাডা (নেতৃত্বে ম্যাক্সিম বার্নিয়ার)।
নির্বাচনী নিয়ম ও what’s at stake
কানাডার সংসদে ৩৪৩টি আসন। যারা অন্তত ১৭২টি আসন জিতবে, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়বে। এর কম হলে ছোট দলগুলির সমর্থন নিতে হবে। ২০২১ সালে লিবারালরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি এবং এনডিপির সমর্থনে সরকার চালিয়েছিল। এইবার তারা শক্তিশালী ম্যান্ডেট চায়, যাতে আর আস্থা ভোটের আশঙ্কা না থাকে।
প্রাক-ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে। মূল ভোট ২৮ এপ্রিল। মার্কিন সীমান্তের উত্তেজনা এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচের মধ্যে কানাডিয়ানরা এবার খুব সতর্কতার সঙ্গে ভোট দিতে চলেছে।