ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’-এর তালিকা (Global Firepower Index)। সেই তালিকায় স্পট হয়েছে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে শক্তি ক্ষয় হয়েছে রাশিয়ার। রাশিয়ার শক্তি ক্ষয় হলেও দ্বিতীয় স্থানই ধরে রেখেছে এক সময়ের সোভিয়েত সুপার পাওয়ার। অন্যদিকে একই পয়েন্ট পেয়েও রাশিয়ার থেকে নিচে রয়েছে চিন। আমেরিকা নিজের ছন্দে এখনো সকলের উপরে স্থান পেয়েছে। ভারতও ধরে রেখেছে নিজের অবস্থান। কিন্তু কোন দেশের শক্তি বাড়লো আর কার ক্ষয় হল?
কেন প্রথমে আমেরিকা? (Global Firepower Index)
এই ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’-এর (Global Firepower Index) তালিকা প্রকাশের প্রথম দিন থেকেই প্রথম স্থান দখল করে রেখেছে আমেরিকা। এই বারের ইনডেক্সেরও কোনও বদল হয়নি। আমেরিকার ধারে কাছে নেই অন্য কোনো দেশ। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’-এ আমেরিকার প্রাপ্ত পয়েন্ট ০.০৭৪৪। এই সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, আমেরিকার কাছে রয়েছে ২১ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০০ সৈনিক। দেশের বাইরে অন্তত ১০০টি সেনাঘাঁটি রয়েছে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের কাছে। সেই সেনা ঘাঁটিগুলি থেকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আক্রমণ হানার ক্ষমতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে ‘সুপার পাওয়ার’ আমেরিকা।
দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া (Global Firepower Index)
‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’-এর (Global Firepower Index) তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এক কালের ‘সোভিয়েত সুপার পাওয়ার’ রাশিয়া। তালিকায় দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখলেও পয়েন্ট কিছুটা কমেছে এই মহাশক্তিধরের। রাশিয়াকে পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে ০.০৭৮৮ নম্বর। বিশ্লেষকদের দাবি, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ ফৌজের সুনাম কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। এর অনেকটাই প্রভাব পড়েছে ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স’-এর তালিকার র্যাংকিং-এ। তবে যেহেতু বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে রাশিয়ার কাছে আর সেই সংখ্যাটাও প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের আশপাশে বলে জানা গিয়েছে। তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্মহাদেশীয় হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’ ব্যবহার করেছে মস্কো। মারণাস্ত্রটি শব্দের প্রায় ১০ গুণ গতিতে ছুটে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় হামলা চালাতে সক্ষম। ফলে পয়েন্ট কিছুটা কমলেও তালিকায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে এককালের সোভিয়েত ‘সুপার পাওয়ার’।
আরও পড়ুন: Millitary Power: কোন দেশের ক্ষমতা কত? জানালো ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’

রাশিয়ার সমান পয়েন্ট চিনের (People’s Liberation Army)
এবারের ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’-এর (Global Firepower Index) সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল, রাশিয়ার সমান পয়েন্ট পেয়েছে চিন। কিন্তু রাশিয়ার সমান পয়েন্ট পেয়েও একধাপ নিচে স্থান পেল ড্রাগেনের দেশ। তালিকায় তিন নম্বর স্থান পেয়েছে চিন। বেজিংয়ের মোট ৩১ লক্ষ ৭০ হাজার সৈনিক রয়েছে বলে জানিয়েছে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’। এছাড়াও রণতরির সংখ্যার বিচারে আমেরিকাকেও ছাপিয়ে গেছে লাল ফৌজ। এজন্য বিশ্বের বৃহত্তম নৌশক্তির তকমা পেয়েছে চিন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত থাকলেও সম্পর্ক অনেকটাই মজবুত হয়েছে। আমেরিকার আগে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান আকাশে উড়িয়েছে পিপল্স লিবারেশন আর্মির বায়ুসেনা। শক্তিশালী ড্রোন এবং রকেট বাহিনীও রয়েছে চিনের। এমনকি আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় একাধিক সেনাঘাঁটি রয়েছে লালফৌজের। যা তাদের শক্তির দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে।
আরও পড়ুন: Gaza Ceasefire Day 1: ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতিতে প্রথম বন্দি বিনিময় সফল

নিজের স্থান ধরে রেখেছে ভারত (Indian Army)
‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সের’-তালিকায় ভারতের অবস্থান চতুর্থ। নয়াদিল্লিকে পয়েন্ট দিয়েছেন ০.১১৮৪ পয়েন্ট। তিন বাহিনী মিলিয়ে ভারতের মোট সেনা সংখ্যা ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০। স্থলবাহিনীতেই রয়েছেন প্রায় ১২ লক্ষ সৈনিক। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট ছিল ৬ লক্ষ ২১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের এটি ছিল ৫ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। গত কয়েক বছরে ঘরের মাটিতেই প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। ‘হাইপারসোনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করেছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। এছাড়া অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তিতেও উন্নতি হয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় শক্তি বৃদ্ধি করতে একের পর এক রণতরি এবং ডুবোজাহাজ নৌবাহিনীর হাতে এসেছে। এমনকি গত দু’বছরে পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডারও বাড়িয়েছে ভারত।
স্থান নির্ণয় পদ্ধতি
বর্তমান উপলব্ধ অস্ত্রশক্তির উপর ভিত্তি করে বিশ্বের দেশগুলির র্যাঙ্কিং করা হয়। ন্যাশনালাইজড গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার র্যাঙ্কিং-এ ৬০টিরও বেশি দেশের স্বতন্ত্র বিষয় ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট দেশের পাওয়ারইনডেক্স (‘PwrIndx’) স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক ইউনিটের পরিমাণ এবং আর্থিক অবস্থান থেকে শুরু করে লজিস্টিক ক্ষমতা এবং জিয়োগ্রাফি পর্যন্ত বিভাগ রয়েছে।
জিএফপি সূত্রটি ছোট, আরও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত, দেশগুলিকে বৃহত্তর, কম উন্নত শক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ দেয়। প্রতি বছর এই তালিকা করা হয়।