ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : নানা রকমের সুস্বাদু মাংসের পদ খাওয়ার পর যা পড়ে থাকে, তা হলো হাড়। অনেকেই সেই হাড় ফেলে না দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন, আবার কেউ কেউ হাড়ের মজ্জা (Chicken Bone Marrow) চুষে খেতে খুব পছন্দ করেন। তবে এর পাশাপাশি অনেকের মধ্যেই একটি প্রশ্ন দেখা দেয়—হাড় চিবিয়ে খাওয়া কিংবা হাড়ের মজ্জা খাওয়া কি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর? বিশেষ করে চিকেনের হাড়ের মজ্জা কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?
চিকেনের হাড়ের মজ্জা: উপকারী না ক্ষতিকর? (Chicken Bone Marrow)
পুষ্টিবিদদের একাংশের মতে, মাংসের হাড়ের মজ্জা (Chicken Bone Marrow) মোটেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়—বরং এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং শরীরের জন্য অনেক দিক থেকে উপকারী। হাড়ের মজ্জা সাধারণত খুব বেশি ফ্যাট যুক্ত নয়, বরং এতে থাকা উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে। হাড়ের মজ্জা খাওয়া নিরাপদ এবং সঠিকভাবে প্রস্তুত করলে এটি হতে পারে এক ধরনের প্রাকৃতিক সুপারফুড।
হাড়ের মজ্জায় কী কী পুষ্টিগুণ থাকে? (Chicken Bone Marrow)
হাড়ের মজ্জায় (Chicken Bone Marrow) থাকা উপাদানগুলো শুধু পুষ্টিকরই নয়, বরং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। এতে পাওয়া যায়:
অ্যাডিপোনেকটিন (Adiponectin) : এটি একটি প্রোটিন যা শরীরের ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বজায় রাখে।
গ্লুকোস্যামাইন (Glucosamine) : জয়েন্ট ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক, বিশেষ করে আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে কার্যকরী।
গ্লাইসিন (Glycine) : এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড (Amino Acid) যা স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখে এবং ঘুমের মান উন্নত করে।
কনজুগেটেড লিনোলেয়িক অ্যাসিড (CLA) : এটি একটি ফ্যাটি অ্যাসিড যা ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ হ্রাস করে।
ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12) : স্নায়ুতন্ত্র ও রক্ত তৈরির জন্য অপরিহার্য।
এছাড়া চিকেনের হাড়ের মজ্জায় রয়েছে আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, থিয়ামিন, ফসফরাস, রাইবোফ্লাভিন—এসব খনিজ ও ভিটামিন শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।
হাড়ের মজ্জা খাওয়ার উপকারিতা কী?
প্রদাহ হ্রাস করে
হাড়ের মজ্জায় থাকা গ্লুকোস্যামাইন, গ্লাইসিন ও CLA প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই উপাদান গ্রহণ করলে আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিসসহ অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
ভিটামিন বি১২-এর উপস্থিতি মস্তিষ্কের কোষগুলিকে রক্ষা করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে। বয়স বাড়লেও মানসিক স্বাস্থ্য সচল রাখে এবং স্মৃতিশক্তি টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধ
অ্যাডিপোনেকটিন হরমোন শরীরের ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পাশাপাশি এটি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে, যা ডায়াবেটিসসহ মেটাবলিক সিনড্রোম সম্পর্কিত নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকা রাখে
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে অ্যাডিপোনেকটিনের পরিমাণ কম, তাদের মধ্যে ওবেসিটি ও ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। অতএব, হাড়ের মজ্জা এই গুরুত্বপূর্ণ হরমোন সরবরাহ করে শরীরকে ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
আরও পড়ুন : Baeler Sharbat Benefits: অত্যধিক গরমে শরীরের নানান সমস্যা এড়াতে খান বেলের শরবত
সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়া হলে হাড়ের মজ্জা কেবল সুস্বাদু নয়, বরং অত্যন্ত পুষ্টিকর। এটি আমাদের শরীরকে শক্তি দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অতএব, হাড়ের মজ্জা চুষে খাওয়ার অভ্যাস একেবারে ত্যাগ না করলেও চলে—বরং উপযুক্ত পরিমাণে নিয়মিত গ্রহণ করা যেতে পারে।