ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দিঘার উপকূল জুড়ে আজ বইছে এক আলোকময়, আধ্যাত্মিক হাওয়া। বছরের সবচেয়ে শুভদিন — অক্ষয়তৃতীয়া। আর এই শুভ লগ্নেই ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সাক্ষী থাকছে দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির (Digha Jagannath Temple Inauguration)। মহাযজ্ঞ, ধ্বজা ওড়ানোর পর আজ অক্ষয়তৃতীযাতে দিঘার মন্দিরে জগন্নাথের প্রাণপ্রতিষ্ঠা এবং দ্বারোদ্ঘাটন।
সকালের আলো ফোটার আগেই দিঘার মন্দির চত্বরে শুরু হয় প্রস্তুতি। আচার্যদের পঠনপাঠন, মহাযজ্ঞের ধোঁয়া, এবং বেদমন্ত্রের ধ্বনিতে পবিত্র হয়ে ওঠে গোটা পরিবেশ। এর আগে সম্পন্ন হয়েছে ধ্বজা উত্তোলন, যাকে জগন্নাথ উপাসনায় অত্যন্ত পবিত্র ও প্রারম্ভিক ধাপ হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রাণপ্রতিষ্ঠার শুভ মুহূর্তে রুদ্ধ দ্বারে দেবতার ‘জাগরণ’ (Digha Jagannath Temple Inauguration)
সকাল ১১টা ১০ মিনিট থেকে ১১টা ৩০ মিনিট — এই সময়সীমার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় দেবতার প্রাণপ্রতিষ্ঠা। নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথ মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়েছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে পুরোহিতেরা প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এই পবিত্র কর্ম একেবারে রুদ্ধদ্বার মন্দিরের ভিতরে সম্পন্ন হয়, সাধারণ দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছাড়াই। শাস্ত্রীয় মতে, এই ক্রিয়ায় মূর্তির মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যাতে তিনি পূজিত দেবতায় পরিণত হন।

প্রতিষ্ঠাকালে দেবতার সর্বাঙ্গে স্পর্শ করা হয় কুশ ও জল দিয়ে। এই সময় মন্ত্রোচ্চারণ ও বিশেষ যজ্ঞ চলছে মন্দিরের অন্তঃস্থলে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষ লগ্নে দেবতা হিসেবে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা-কে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, ঠিক যেমন পুরীর আদলে।
স্নান, রাজবেশ ও ৫৬ ভোগ অর্পণ (Digha Jagannath Temple Inauguration)
প্রাণপ্রতিষ্ঠার পরপরই দেবতাদের স্নান করানো হয় পবিত্র জল দিয়ে। তারপর মহাপ্রভু জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা-কে সাজানো হয় রাজকীয় পোশাকে ও সোনার গয়নায়। এই পোশাক পুরীর রথযাত্রার আদলে তৈরি (Digha Jagannath Temple Inauguration)। মূর্তিগুলিতে পরানো হয় রঙিন রেশমের বসন, এবং অলঙ্করণে ব্যবহৃত হয় সোনার কংকণ, টিকলি, নাকের নথ ইত্যাদি।
এরপর দেবতাদের উদ্দেশে নিবেদন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ৫৬ ভোগ — মিষ্টি, ফল, ক্ষীর, পুরি, ছানার নানা রকমের প্রস্তুতি, ফলমূল ও নানা উপাদেয় খাদ্যে পরিপূর্ণ এই ভোগ। ভোগ অর্পণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় সানাই, ঢাক, কাঁসর-ঘণ্টার ধ্বনি।
দ্বারোদ্ঘাটনে মুখ্যমন্ত্রী, করবেন প্রথম সন্ধ্যারতি (Digha Jagannath Temple Inauguration)
বিকেল ৫টা থেকে ৫টা ১০ মিনিট — এই শুভ লগ্নে মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে রূপকথার মতো সুসজ্জিত মন্দিরের দ্বার উন্মোচন করবেন সাধারণ মানুষের জন্য। বহু মানুষের উপস্থিতিতে মন্দির চত্বর ইতিমধ্যেই আধ্যাত্মিক আবেগে ভরপুর।
দ্বারোদ্ঘাটনের পরেই মুখ্যমন্ত্রী প্রথম সন্ধ্যারতি সম্পন্ন করবেন মহাপ্রভুর উদ্দেশ্যে। শঙ্খধ্বনি, ঢাক, ঘণ্টার আওয়াজের মাঝে আরতির আলো ছড়িয়ে পড়বে গোটা মন্দির চত্বরে।

বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মন্দিরে ভক্তের ঢল (Digha Jagannath Temple Inauguration)
দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীরা পরিবেশন করবেন ওড়িশি নৃত্য, কীর্তন, বাউল গান সহ নানা লোকনৃত্য ও সংগীত।
দিঘার এই জগন্নাথ মন্দির রাজ্য সরকারের এক অনন্য উদ্যোগ। পুরীর আদলে নির্মিত এই মন্দির একদিকে যেমন পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়াবে, তেমনই ধর্মীয় ভক্তিমূলক স্থান হিসেবেও সমৃদ্ধ করবে দিঘাকে।
আজ অক্ষয়তৃতীয়ার এই দিনটা শুধু একটি স্থাপনার উদ্বোধন নয়, বরং এক ভক্তির সূচনা, সংস্কৃতির সংরক্ষণ, এবং সামাজিক সংহতির এক অনন্য নিদর্শন হয়ে থাকল।