ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কর্পোরেট ওয়ার্ক ফ্রম হোম হোক বা শহুরে ক্লান্তি—একঘেয়ে জীবন কাটাতে এখন অনেকেই ভরসা রাখছেন ছোট ছুটি আর অফবিট ভ্রমণের উপর। পাহাড়-সমুদ্রের চেনা পথে নয়, অনেকেই এখন খুঁজছেন রাজকীয় অভিজ্ঞতা আর বাংলার নিজস্ব শিকড়ের টান। বাওয়ালি, ঝাড়গ্রাম, ইটাচুনা—এর মতই বাঙালির পছন্দের তালিকায় এবার জায়গা করে নিচ্ছে মহিষাদল রাজবাড়ি (Mahishadal Rajbari)।
কলকাতা থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহিষাদল রাজবাড়ি আজও বহন করে বাংলার জমিদার আমলের গৌরব। ষোড়শ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই রাজপ্রাসাদ শুধু ইতিহাস নয়, বরং আজকের দিনে তা হয়ে উঠেছে এক জনপ্রিয় অফবিট ভ্রমণ গন্তব্য।
ইতিহাসের ছায়ায় হারিয়ে যাওয়া সময় (Mahishadal Rajbari)
পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে অবস্থিত এই রাজবাড়ির ইতিহাস শুরু ষোড়শ শতকে। জনার্দন উপাধ্যায় তৈরি করেছিলেন তিনটি রাজপ্রাসাদ—রঙ্গিবসান, লালকুঠি ও ফুলবাগ। পর্যটকদের জন্য বর্তমানে শুধুমাত্র তৃতীয়টি অর্থাৎ ‘ফুলবাগ’ রাজপ্রাসাদটি খোলা। এটিই আজকের মহিষাদল রাজবাড়ি। ‘ফুলবাগ’ নামের ন্যায়, এই রাজবাড়ির বাগানও সুবিশাল ও মনোহর, যা একদিনে পুরো দেখা প্রায় অসম্ভব।
আরও পড়ুন: Summer Travel Destinations: ‘তিন পাহাড়ের স্বপ্ন’ নিয়ে এই গরমে ঘুরে আসুন তিন পাহাড়ি গ্রাম থেকে
রাজকীয় স্থাপত্য আর সংগ্রহশালা (Mahishadal Rajbari)
রাজবাড়ির কড়িকাঠের ছাদ, ঝুলন্ত ঝাড়বাতি, খরখরি, চওড়া দালান, কামান, দুর্গামণ্ডপ—সবই যেন অতীতের সাক্ষী। এখানে রয়েছে একটি ছোট সংগ্রহশালা, যেখানে সংরক্ষিত আছে মহিষাদল রাজবংশের ইতিহাস। রাজবাড়ির দেওয়ালজুড়ে টাঙানো রাজাদের তৈলচিত্র, অস্ত্র ও অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী দর্শনার্থীদের অতীতে টেনে নিয়ে যায়।
থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা (Mahishadal Rajbari)
বর্তমানে এই রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে গর্গ পরিবার। পর্যটকদের জন্য এখানে তিন ধরনের ঘর রয়েছে—ঘরের ভাড়া শুরু হয় ₹২,০০০ থেকে এবং সবচেয়ে রাজকীয় ঘরের ভাড়া ₹৮,০০০।
খাবারের দিক থেকেও অভিজ্ঞতা জমিদারী আমলের মতো—শ্বেতপাথরের টেবিলে কাঁসার থালায় পরিবেশিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার—সব অন্তর্ভুক্ত। তবে যেতে হলে আগে থেকে বুকিং করে রাখা বাধ্যতামূলক।

ঐতিহ্যের উৎসব: রথ ও দুর্গাপুজো (Mahishadal Rajbari)
মহিষাদল রাজবাড়ির আরও দুটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানকার রথযাত্রা ও দুর্গাপূজা। সারা বছর বন্ধ থাকা রঙ্গিবসান প্রাসাদ শুধুমাত্র দুর্গাপুজোর সময় দর্শনার্থীদের জন্য খোলা হয়। এই সময় রাজবাড়ির পুজোর ঐতিহ্য নিজ চোখে দেখার সুযোগ মেলে। রথযাত্রার সময়েও রাজবাড়ির চারপাশে উৎসবের আবহ ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: North Sikkim: উত্তর সিকিমে পর্যটনে ছাড়, তবে শর্তসাপেক্ষে— সময় মেনে না চললে বিপদ!
কীভাবে যাবেন? (Mahishadal Rajbari)
গাড়িতে: বম্বে রোড ধরে নন্দকুমার মোড় হয়ে কাপাসিরিয়া মোড় পার করে আরও ৫ কিমি এগোলেই মহিষাদল রাজবাড়ি। ড্রাইভ প্রেমীদের কাছে আদর্শ রুট।
ট্রেনে: হাওড়া থেকে সাউথ ইস্টার্ন লাইনের ট্রেনে মহিষাদল স্টেশন। সেখান থেকে সহজেই গাড়িতে রাজবাড়ি পৌঁছানো যায়।
কেন যাবেন মহিষাদল? (Mahishadal Rajbari)
যেখানে একসাথে মেলে প্রাচীন ইতিহাস, জমিদার বাড়ির রাজকীয় আতিথেয়তা, নিরিবিলি প্রকৃতি আর বিশুদ্ধ বাঙালিয়ানা—সেই মহিষাদল রাজবাড়ি একদিনের নয়, মনজুড়ানো অভিজ্ঞতার গন্তব্য। গুগলের তালিকায় না থাকলেও হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার মতো ঠিকানা এটি।