ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা বাড়তে থাকায় “ডুমসডে ক্লক” (Doomsday Clock) রাত ১২টার মাত্র ৮৯ সেকেন্ড আগে সরিয়ে আনা হয়েছে। এই সময় গণনার ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্ত।
এই ভয়াবহ পরিবর্তন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি প্যানেলের সতর্কবার্তা (Doomsday Clock)। তারা মনে করছেন, বিশ্ব এখন একাধিক ক্রমবর্ধমান হুমকির সম্মুখীন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার পরমাণু হুমকি, বিশ্বব্যাপী সামরিক উত্তেজনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সামরিক ব্যবহার এবং জলবায়ু সংকটের আরও অবনতি।
ডুমসডে ক্লক কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? (Doomsday Clock)
“ডুমসডে ক্লক” (Doomsday Clock) হল এক ধরনের প্রতীকী ঘড়ি, যা দেখায় পৃথিবী ধ্বংসের (গ্লোবাল ক্যাটাস্ট্রোফি) কতটা কাছাকাছি রয়েছে।
১৯৪৭ সালে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় “দ্য বুলেটিন অব অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস” এই ক্লক তৈরি করে (Doomsday Clock)। তখন থেকেই এটি মানবজাতির বিপদের মাত্রা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঘড়ির কাঁটা যত মধ্যরাতের কাছাকাছি আসে, তত বেশি বিপদের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
এই বছর ক্লকটি এক সেকেন্ড এগিয়ে আনা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে আরও গুরুতর সংকেত বহন করে।
বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা: বিপদ ক্রমেই বাড়ছে (Doomsday Clock)
“আমরা ডুমসডে ক্লক এক সেকেন্ড এগিয়ে এনে একটি কঠোর বার্তা দিচ্ছি: পৃথিবী ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির কিনারায় রয়েছে। মাত্র এক সেকেন্ড এগোনোও চরম বিপদের ইঙ্গিত দেয়। সময় নষ্ট করলে বিশ্বব্যাপী ধ্বংসের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে,” একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে বোর্ড (Doomsday Clock)।
পরমাণু যুদ্ধের হুমকি ক্রমশ বাড়ছে
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো পুরো মাত্রায় চলছে, যা একটি প্রধান পারমাণবিক হুমকির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই যুদ্ধ যেকোনও মুহূর্তে পরমাণু সংঘাতের রূপ নিতে পারে। ভুল সিদ্ধান্ত, দুর্ঘটনা বা ভুল হিসাবের কারণেও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
২০২২ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, যদি রাশিয়ার উপর প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ হয়, তাহলে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবতে পারে। এর ফলে বিশ্ব এখন আরও বড় ঝুঁকির সম্মুখীন।
২০২৬ সালে “নিউ স্টার্ট” পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কিন্তু রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এখনও নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে নারাজ। এটি ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা, তাইওয়ান ইস্যু এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
জলবায়ু সংকটের ভয়াবহ অবনতি
জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) জানিয়েছে, ২০২৩ সাল ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন, চরম আবহাওয়া, দাবানল, ঘূর্ণিঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে আগামী কয়েক বছরে বিপর্যয়ের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও তথ্যপ্রবাহের অপব্যবহার
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সামরিক ব্যবহার এবং জৈবিক বিজ্ঞানের অপব্যবহার একটি বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, মিথ্যা তথ্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা গণতন্ত্র ও বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
আরও পড়ুন: Donald Trump: আমেরিকায় আয়কর বাতিলের প্রস্তাব ট্রাম্পের, লক্ষ্য আমেরিকার চাহিদা পূরণ
বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান: “সময় খুব কম, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে”
যদিও পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তবুও এখনও কিছু করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কলম্বিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস বলেছেন, “এখনও সময় আছে। আমাদেরকে অবশ্যই দ্রুত এবং বুদ্ধিমানের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান।”
বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রত্যেক সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত বুদ্ধিমানের মতো ব্যবহার করতে হবে, না হলে বিপর্যয় আসন্ন।”
ধ্বংসের ঘণ্টা
বিশ্ব এখন এক অভূতপূর্ব সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পারমাণবিক যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভুল ব্যবহার—এই সমস্ত কিছু মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎকে চরম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশ্বনেতারা যদি দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে “ডুমসডে ক্লক” (Doomsday Clock) আসলেই ধ্বংসের ঘণ্টা বাজাতে দেরি করবে না।