ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক: সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর (Fact Check) একটি ভাইরাল ভাইরাল হচ্ছে যেখানে কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে বস্তাবন্দি এক যুবতীকে উদ্ধার করতে। সেখানে কয়েকজন ইতিউতি কথা বলছেন যে যুবতীটি বেঁচে রয়েছে মারা যায়নি।
ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে এটি গত ১৬ মার্চের ঘটনা, যেখানে অনিল বসাক (Fact Check) নামে এক হিন্দু যুবক এক মুসলিম যুবতীকে প্রেম নিবেদনের পর প্রত্যাখ্যাত হয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
ভি়ডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “হিন্দু অনিল বসাকের প্রেমের প্রস্তাবে (Fact Check) রাজি না হওয়ায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মাহফুজা কে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়। বন্দি অবস্থায় টাঙ্গন নদীর ব্রিজের নিচ থেকে মাহফুজা খাতুন কে উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। ১৭মার্চের ঘটনা কিন্তু কোন মিডিয়া নিউজ করে নি কারণ আসামি হিন্দু।”

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক (Fact Check) নয় বরং ২০২২ সালের জুলাই মাসের এবং ঘটনায় মূল অভিযুক্তই মুসলিম সম্প্রদায়ের এক নারী।
যেভাবে জানা গেল সত্যি (Fact Check)
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে কিছু কিওয়ার্ডের সাহায্যে রিভার্স সার্চ করা হলে ভালো মানের একই ঘটনার ভিডিও দেখা যায় সিটি নিউজ ঢাকা নামের একটি ফেসবুক পেজে। সেখানে এই ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, “ঠাকুরগাঁওয়ে (Fact Check) বস্তাবন্দি অবস্থায় মাদরাসা শিক্ষার্থীকে জীবিত উদ্ধার।” এর থেকে একটা বিষয় আন্দাজ করা যায় যে ঘটনাটি দু বছর আগেকার হতে পারে।

ফেসবুকে ভিডিও-র যে অংশটি ভাইরাল হয়েছিল, হুবহু একই অংশ দেখা যাবে সময় টিভির একটি প্রতিবেদনে যা ২০২২ সালের ২২ জুলাই থেকে ফেসবুকে রয়েছে। এখানে অবশ্য কোনও হিন্দু যুবক এই ঘটনায় জড়িত এমন তথ্যের কথা জানানো হয়নি। বরং অন্য এক নারী তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিল বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।
ভিডিওটি দেখুন এখানে
এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চের পর ঢাকা ট্রিবিউন ও আজকের পত্রিকার মতো একাধিক বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়া যায় যা ২০২২ সালের ২১ এবং ২২ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁও শহরের টাঙ্গন নদীর ব্রিজের নিচ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দী ওই মাদ্রাসা ছাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: Fact Check: মসজিদের সামনে হোলি খেলতে বাধা দেওয়ায় ‘খুন’ মুসলিম যুবক?
উদ্ধার হওয়া ওই ছাত্রীর নিজের বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের বাড়ির সাবেক ভাড়াটে গুলজান বেগম তার অন্তরঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে মাদ্রাসার মেয়ে চায়। এতে রাজি না হওয়ায় মধ্যরাতে ঘরের বাইরে থেকে আমাকে কে বা কারা তাকে ডাক দেয়। ঘুম থেকে জেগে ঘরের জানালার কাছে গিয়ে সে কয়েকজন যুবককে দেখতে পায় তার ছবি-সহ। ছবিগুলো নেওয়ার চেষ্টা করলে তারা শক্তি প্রয়োগ করে ঘরের বেড়া ভেঙে মেয়েটিকে টেনে বের করে। পরে হাত-পা বেঁধে বস্তায় ভরে। এর ফলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
ঘটনাটি নিয়ে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও একটি রিপোর্ট ২০২২ সালের ২২ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই খবর অনুযায়ী, উদ্ধারের পর নির্যাতিতার ভাই ২১ জুলাই সন্ধ্যায় ধর্ষণ ও অপহরণের একটি মামলা দায়ের করেন। সেই রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে গুলজান বেগমকে। যারা সরাসরি অপরহণকাণ্ডে যুক্ত ছিল তাদেরও সন্ধান চালানো হয়।
সবমিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ২০২২ সালের একটি ঘটনাকে বর্তমানে সাম্প্রদায়িক রং দিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবিতে পোস্ট করা হচ্ছে।
এই খবরটি শক্তি কালেক্টিভের অংশ হিসাবে প্রথমে ইন্ডিয়া টুডে দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল, পরবর্তীতে ট্রাইব টিভি বাংলার দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে। এই খবরটির হেডলাইন ও সারসংক্ষেপ বাদে বাকি খবর ট্রাইব টিভি বাংলার কর্মীরা সম্পাদনা করেনি।