ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা (Rezzak Mollah Passed Away)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। জানা গেছে, দক্ষিণ কলকাতার ভাঙড়ের বাকড়ি গ্রামে নিজের বাড়িতেই জীবনাবসান হয় তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। সক্রিয় রাজনীতি থেকেও দীর্ঘদিন ধরে দূরেই ছিলেন। অবশেষে শুক্রবার সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।
রেজ্জাকের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রাজনৈতিক মহল (Rezzak Mollah Passed Away)। নিজের এক্স হ্যান্ডলে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, “আমার সহকর্মী, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা’র প্রয়াণে আমি শোকাহত ও মর্মাহত। তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী ছিলেন। তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করতাম, সম্মান করতাম।”
আরও পড়ুন: SSC Case: এসএসসি দুর্নীতি, চার ‘প্রভাবশালী’র ছায়ায় চাকরি হারালেন হাজার হাজার যোগ্য প্রার্থী!
মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, “বাংলার গ্রামজীবন, কৃষি-অর্থনীতি ও ভূমি-সংস্কার বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল সুবিদিত। তাই একসময় অন্য ধারার রাজনীতি করলেও, মা-মাটি-মানুষের সরকারে তাঁর মিলিত হয়ে যাওয়া ছিল সহজ ও স্বাভাবিক। তাঁর প্রয়াণে বাংলার রাজনৈতিক জীবনে অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হল। আমি তাঁর পরিবারবর্গ, অসংখ্য অনুগামী ও শুভানুধ্যায়ীকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।”
রাজনৈতিক জীবন (Rezzak Mollah Passed Away)
রেজ্জাক মোল্লার রাজনৈতিক জীবন শুরু সিপিআইএমের হাত ধরে। ১৯৭২ সালে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। কৃষক পরিবারে জন্মানো রেজ্জাক নিজেকে পরিচয় দিতে ভালবাসতেন “চাষার ব্যাটা” হিসেবে। ১৯৮২ সালে প্রথম মন্ত্রী হন এবং দীর্ঘ দিন ধরে ভূমি সংস্কার দফতরের দায়িত্ব সামলান। জ্যোতি বসু থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য—দুই মুখ্যমন্ত্রীরই মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি (Rezzak Mollah Passed Away)।
আরও পড়ুন: Kasba Case: চাকরিহারাদের বিক্ষোভে ‘লাথি’ মারার অভিযোগ, তদন্তের দায়িত্ব পেলেন সেই এসআই রিটন
২০১১ সালের রাজনৈতিক পালাবদলের পরে ধীরে ধীরে সিপিআইএম থেকে বিচ্ছিন্ন হন রেজ্জাক। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন এবং ভাঙড় থেকেই ফের বিধায়ক নির্বাচিত হন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভাতেও ছিলেন তিনি। তবে ২০২১ সালের পর অসুস্থতার কারণেই রাজনীতি থেকে পুরোপুরি সরে দাঁড়ান।

রাজনীতি থেকে অবসর (Rezzak Mollah Passed Away)
ঘনিষ্ঠ মহলের সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পরে অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন রেজ্জাক। নিজের অভিমানের কথা ব্যক্ত করেছিলেন একাধিকবার—সিপিআইএমের কয়েকজন পুরনো সহকর্মী মাঝেমধ্যে খোঁজ নিলেও তৃণমূলের বর্তমান নেতৃত্ব তাঁর খোঁজ রাখতেন না। তবে এক সময়ের ‘শিষ্য’ শওকত মোল্লা, বর্তমানে তৃণমূলের ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক, একাধিকবার রেজ্জাকের সঙ্গে দেখা করতে যান। রেজ্জাক (Rezzak Mollah Passed Away) তাঁকে এক সময় নিজের ‘দুই হাত’ হিসেবে ভাবতেন। তাঁর সঙ্গেই রাজনীতিতে হাতে-কলমে পথ চলা শুরু করেছিলেন শওকত ও সাত্তার মোল্লা।
রাজনীতির আঙিনায় রেজ্জাক মোল্লা ছিলেন এক ব্যতিক্রমী চরিত্র—সোজাসাপ্টা, নির্ভীক এবং বর্গা চাষিদের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা এক নেতার বিদায়ে রাজ্য রাজনীতিতে এক অধ্যায়ের অবসান ঘটল।