ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দীর্ঘদিনের টানাপড়েন ও সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারত এবং পাকিস্তান অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে(India Pakistan Ceasefire)। এই অগ্রগতি কিছুটা হলেও অঞ্চলে স্বস্তির নিঃশ্বাস এনেছে। তবে শান্তির এই আবহেই ফের চাপানউতোর শুরু হয়েছে—কারণ, এখনও পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতই রেখেছে ভারত।
পাক বিদেশমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি (India Pakistan Ceasefire )
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার (Ishaq Dar) এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—
“যদি ভারত সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে সদর্থক ও দায়িত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না করে, তা হলে পাকিস্তান একে শত্রুতামূলক আচরণ হিসেবে দেখবে। এমনকি যুদ্ধ বলেও বিবেচনা করতে পারে।”
কী বললেন পাক বিদেশমন্ত্রী?(India Pakistan Ceasefire)
সাক্ষাৎকারে ইশাক দার জানান, সাম্প্রতিক সংঘর্ষবিরতির জন্য মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো মধ্যস্থতা করেছেন(India Pakistan Ceasefire)। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়, যদি না কাশ্মীর ও সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারত সদর্থক অগ্রগতি দেখায়।
তিনি বলেন—
“কাশ্মীর ইস্যু সীমান্ত উত্তেজনার মূল কারণ। ভারত যদি এই বিষয়ে কোনও গঠনমূলক পদক্ষেপ করে, তাহলেই জঙ্গি কার্যকলাপ বা সংঘর্ষের আশঙ্কা কমবে।”

ভারতের অবস্থান কী?(India Pakistan Ceasefire)
রবিবার ভারতের বিদেশমন্ত্রকের একটি সূত্র সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি(India Pakistan Ceasefire)। অর্থাৎ, ভারত এখনও পর্যন্ত এই চুক্তির শর্ত পালনে প্রস্তুত নয় বা স্থগিতাবস্থা বজায় রাখছে।
সিন্ধু চুক্তি(India Pakistan Ceasefire)
১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয় সিন্ধু জলচুক্তি(India Pakistan Ceasefire)। চুক্তি অনুযায়ী,
- পশ্চিমবাহিনী তিনটি নদী—সিন্ধু, চন্দ্রভাগা (ঝেলম), ও বিতস্তা (চিনাব)—এর জল ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান
- পূর্ববাহিনী তিনটি নদী—রবি, বিয়াস ও শতদ্রু—এর উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে
পাকিস্তানে কৃষিকাজের ৮০ শতাংশ এই চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত জল সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। ফলে ভারত যদি চুক্তি স্থগিত রেখে বা সম্পূর্ণ বাতিল করে পশ্চিমবাহিনী নদীগুলোর জল বাধা দেয়, তবে পাকিস্তানের কৃষি অর্থনীতি এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ(India Pakistan Ceasefire)
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইশাক দারের এই কড়া বক্তব্য দুই দেশের মধ্যে অস্থায়ী শান্তির ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, জল এবং কাশ্মীর—এই দুটি ইস্যু ভবিষ্যতের মূল সংঘাতের কেন্দ্র হতে চলেছে।বিশ্ব সম্প্রদায় এই মুহূর্তে নজর রাখছে—ভারত কূটনৈতিকভাবে কী বার্তা দেয় এবং পাকিস্তান কতটা চাপ সৃষ্টি করে। এই সংকটময় মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির মধ্যস্থতা ফের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
কূটনৈতিক সাফল্য(India Pakistan Ceasefire)
সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য, তবে সিন্ধু জলচুক্তি ও কাশ্মীর প্রশ্নে অচলাবস্থা বজায় থাকলে এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে না—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাকিস্তান ইতিমধ্যেই জলচুক্তিকে যুদ্ধের প্রসঙ্গে টেনে এনে উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছে।পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত স্পর্শকাতর। দু’পক্ষের সংযম ও কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তা না থাকলে, অচিরেই এই শান্তি ভঙ্গ হতে পারে। জল এখন শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়—এটি ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক অস্ত্র।