ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চিন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করার পর এবার আমেরিকার লক্ষ্য ভারত। তবে নয়াদিল্লির সঙ্গে সেই চুক্তি এখনও অধরা (India US Trade Talks)। হোয়াইট হাউস বারবার আলোচনায় গতি আনার চেষ্টা করলেও ভারতের পক্ষ থেকে কিছু নির্দিষ্ট ‘লক্ষ্মণরেখা’ স্পষ্টভাবে টেনে দেওয়া হয়েছে, যার কারণে আপাতত অচলাবস্থায় পৌঁছেছে দুই দেশের বাণিজ্য বোঝাপড়া।
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman) সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাতের স্বার্থে কোনও আপস করবে না ভারত। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চারটি প্রধান রফতানিযোগ্য পণ্য—ভুট্টা, ইথানল, সয়াবিন ও দুগ্ধজাত সামগ্রী—নিয়েই মূলত আপত্তি রয়েছে দিল্লির।
ভুট্টা ও জিনগত শস্য, ভোট রাজনীতিতে ধাক্কার আশঙ্কা (India US Trade Talks)
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আমেরিকা উৎপাদন করেছে প্রায় ৩৭ কোটি ৭৬ লক্ষ টন ভুট্টা, যার ৯৪ শতাংশই জিনগতভাবে পরিবর্তিত (India US Trade Talks)। কিন্তু ভারতে এখনও এমন শস্য আমদানি ও চাষ নিষিদ্ধ। সামনেই বিহার বিধানসভা নির্বাচন—যে রাজ্য দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ভুট্টা উৎপাদনকারী। এমন পরিস্থিতিতে এই আমদানিকে ছাড় দিলে রাজনৈতিকভাবে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির জন্য। ফলে এ বিষয়ে আপসের সম্ভাবনা প্রায় নেই।
ইথানল বিতর্ক, জ্বালানি নয়, শুধু শিল্পক্ষেত্রেই অনুমতি (India US Trade Talks)
আমেরিকা ২০২৪ সালে ৪৩০ কোটি ডলারের ইথানল রফতানি করেছে, যার বড় বাজার ভারত। কিন্তু ভারতে এখনও পেট্রলের সঙ্গে মিশিয়ে জ্বালানি হিসেবে ইথানল ব্যবহার করার অনুমতি নেই আমদানিকৃত ইথানলের ক্ষেত্রে। আমেরিকা এই নিয়ম শিথিল করতে চাইলেও ভারত এখনও অনমনীয়।

সয়াবিন ও দুগ্ধ, খাদ্য নিরাপত্তা বনাম বাজার খুলে দেওয়া (India US Trade Talks)
ব্রাজিলের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সয়াবিন রফতানিকারক দেশ আমেরিকা (India US Trade Talks)। তাদের উৎপাদিত সয়াবিনও জিনগতভাবে পরিবর্তিত, যার কাঁচা শস্য ভারতে নিষিদ্ধ। শুধু তেল আমদানির ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে।
অন্যদিকে, চিজ়, মাখন ও মিল্ক পাউডারের উপর ভারতের চড়া শুল্ক আমেরিকাকে বারবার আপত্তি জানাতে বাধ্য করেছে। চিজ়ে ৩০%, মাখনে ৪০% এবং মিল্ক পাউডারে ৬০% শুল্ক কার্যকর রয়েছে। ভারতীয় দুগ্ধ শিল্প ও কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এই শুল্ক কমাতে নারাজ নয়াদিল্লি।

আলোচনার পথে এগোতে চায় দিল্লি (India US Trade Talks)
পরিস্থিতি যতই জটিল হোক, আশাবাদী ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সম্প্রতি Newsweek-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা এই জটিল বাণিজ্য আলোচনার মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছি, হয়তো মাঝামাঝির থেকেও এগিয়ে গিয়েছি।” তিনি জানান, আলোচনা ফলপ্রসূ হলে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব।
৯ জুলাইয়ের সময়সীমা (India US Trade Talks)
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬% শুল্ক আরোপ করা হবে (India US Trade Talks)। যদিও পরে ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত রাখা হয়। এই সময়সীমার শেষ দিন ৯ জুলাই। তার আগে ভারত-আমেরিকা আলোচনায় কোনও চূড়ান্ত সমাধান না হলে আবারও নতুন শুল্কের হুমকির মুখে পড়তে পারে ভারতীয় রফতানি।
চিন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে আমেরিকা ভারতের দিকে কড়া নজর দিচ্ছে। তবে কৃষি, খাদ্য এবং স্বদেশীয় শিল্পক্ষেত্র রক্ষায় ভারত আপস করতে নারাজ। এখন দেখার, ৯ জুলাইয়ের আগে দুই পক্ষ কোনও সমঝোতায় পৌঁছতে পারে কি না। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষাই এ আলোচনার মূল চাবিকাঠি(India US Trade Talks)।