ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: অবশেষে ইলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ককে ছাড়পত্র দিল ভারত সরকার(Starlink)। এবার থেকে ভারতে বাণিজ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছে স্টারলিঙ্ক। ২০২২ সাল থেকে এই ছাড়পত্রের জন্য মাস্ক অপেক্ষা করছিলেন। শুক্রবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের টেলিকম মন্ত্রক স্টারলিঙ্ককে লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার বা মাস্কের সংস্থার তরফে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
স্টারলিঙ্ক কী? (Starlink)
স্টারলিঙ্ক হল ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সার্ভিস(Starlink)। এটি একটি লোয়ার আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা। এর সাহায্যে বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে যে ভারতে স্টারলিঙ্ক পরিষেবা চালু করা হবে। স্টারলিঙ্ক ৫০০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় অনেক ছোট উপগ্রহের মাধ্যমে কাজ করে। ভারতে স্টারলিঙ্ক নিয়ে আলোচনা এই প্রথম নয়। কোম্পানিটি ২০২১ সালে ভারতে প্রি-বুকিং শুরু করে। তবে, ভারত সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স না পাওয়ার কারণে সেই সময়ে কোম্পানিকে প্রি-বুকিং বন্ধ করতে হয়েছিল।অবশেষে মাস্কের সংস্থা কাঙ্ক্ষিত সেই ছাড়পত্র পেল।

স্টারলিঙ্কের চুক্তি (Starlink)
ভারতের অন্যতম প্রধান দুই টেলিকম তথা ইন্টারনেট প্রদানকারী সংস্থা এয়ারটেল এবং রিলায়ান্স জিও-র সঙ্গে ইতিমধ্যে স্টারলিঙ্কের চুক্তি হয়েছে। ভারতের বাজারে স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট আনার জন্য গত মার্চে মাস্কের স্পেসএক্সের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছিল এয়ারটেল। পরে মুকেশ অম্বানিরাও একই চুক্তি করেন। তবে উভয়ক্ষেত্রেই চুক্তি ছিল শর্তাধীন। বলা হয়েছিল, ভারত সরকারের ছাড়পত্র পেলে তবেই স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট এ দেশে ব্যবহার করবে এয়ারটেল বা জিও।

আরও পড়ুন- Dino Morea: ৬৫ কোটির দুর্নীতি! অভিনেতা ডিনো মোরিয়ার বাড়িতে তল্লাশি ইডি-র
স্টারলিঙ্কের পরিষেবা (Starlink)
স্টারলিঙ্কের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ‘লো আর্থ অরবিট’-এ অবস্থিত ছোট ছোট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে এই সংস্থা(Starlink)। পৃথিবীপৃষ্ঠের ১৬০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে কক্ষপথগুলিকে ‘লো আর্থ অরবিট’ বলা হয়ে থাকে। নিচু অবস্থানের কারণে এই স্যাটেলাইট থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া যায়। ভারতের বাজারে স্টারলিঙ্ক ব্যবসা শুরু করলে ইন্টারনেট পরিষেবা আরও জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে স্টারলিঙ্কের অধীনে রয়েছে ৬,৭৫০টি স্যাটেলাইট। সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
আরও পড়ুন- Uttar Pradesh: যোগীরাজ্যে শিশুকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ! অভিযুক্তের এনকাউন্টার
ডিশ এবং রাউটার প্রয়োজন (Starlink)
স্টারলিঙ্ক পরিষেবা ব্যবহার করতে একটি ছোট ডিশ ইনস্টল করতে হবে, যাকে স্টারলিঙ্ক টার্মিনালও বলা হয়। গ্রাহককে এটি বাড়িতে সেট আপ করতে হবে। এই ডিশগুলি আকাশে উপস্থিত উপগ্রহ থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং প্রেরণ করে। এরপরে এই ডিশটি ঘরের ভিতরে ইনস্টল করা ওয়াইফাই রাউটারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।

ভারত উপকৃত (Starlink)
যদি আমরা স্টারলিঙ্ক কীভাবে কাজ করে তা দেখি, তাহলে এটি ভারতে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করতে পারে(Starlink)। এর সুফল গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা যাবে। ভারতের এখনও অনেক গ্রাম এবং পাহাড়ি এলাকা আছে যেখানে ফাইবার ইন্টারনেট পৌঁছায়নি, এমন পরিস্থিতিতে তারা স্টারলিঙ্ক থেকে উপকৃত হতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত স্কুল এবং হাসপাতালগুলি এর ফলে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।আমেরিকায় স্টারলিঙ্ক-র জন্য সেটআপ এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়। ভারতের জন্য প্ল্যান এবং হার্ডওয়্যারের দাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তবে আমেরিকায় বুকিং করার পরে হার্ডওয়্যারের জন্য ৪৯৯ মার্কিন ডলার চার্জ দিতে হবে, যা ভারতীয় মুদ্রায় রূপান্তর করলে ৪৩ হাজার টাকা। একই সঙ্গে মাসিক সাবস্ক্রিপশন ১১০ মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার টাকা হবে।

মাস্ক-ট্রাম্প সম্পর্কের অবনতি (Starlink)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্প্রতি মাস্কের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মাস্ক। প্রকাশ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে মাস্কের সংস্থার ভর্তুকি বাতিল এবং তাঁর সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই দ্বৈরথের মাঝেই মাস্কের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দর পড়ে গিয়েছে হু হু করে। কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মাস্ক। সেই আবহেই ভারতের বাজারে মাস্কের সংস্থার ছাড়পত্রের খবর প্রকাশ্যে এল।