ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দৈনন্দিন জীবনের নানান ব্যস্ততায় রাতে ঘুমাতে(Insomnia Treatment) যেতে দেরি হয়ে যায় অনেকেরই। যে কারণে রাত যত বাড়তে শুরু করে তখন সহজে ঘুম আসতে চায় না। এ কথা ঠিক যার রাতে ঘুম নেই তার জীবনে কোনো সুখ নেই। পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষই এখন ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা সমস্যায় ভুগছেন। ঘুম পর্যাপ্ত না হলে দেখা দিতে পারে বিরাট জটিলতা। এমনকি শরীরের নিশ্চিত ক্ষতি হয়। অনিদ্রা থেকে অন্যান্য অসুখ শরীরে বাসা বানাতে পারে। তবে একে মূল থেকে ধ্বংস করা জরুরি। ঘুমের ওষুধ সবসময় খাওয়া উচিত নয়। বরং সহজ কিছু টিপসেই সমস্যার সমাধান করুন।
ঘুমের সময় পার হয়ে গেলে আসেনা ঘুম (Insomnia Treatment)
যারা রাত জেগে পড়াশোনা করে কিংবা অফিসের কাজ করে তাদের সবারই একটি সমস্যা রয়েছে(Insomnia Treatment)। সেটি হলো ঘুমের সময় যখন ঘুম পায় তখন জোর করে জেগে থাকতে হয়। আর ঘুমের সময় পার হয়ে গেলে কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। আর এই কারণে রাতে দেরি করে ঘুমানোর ফলে সকালে ঘুম ভাঙতেও তাদের সমস্যা হয়। ঘুমের এই সমস্যায় অনেকেরই মেজাজ হয়ে ওঠে যথেষ্ট খিটখিটে। ফলে সারাদিন মন মেজাজ ঠিক থাকেনা তাদের একেবারেই। আসেপাশের মানুষদের সাথেও খিটখিটে ব্যবহার করে তারা।
কতক্ষণ ঘুম জরুরী? (Insomnia Treatment)
পর্যাপ্ত ঘুমই আদতে সুস্থ জীবনের অন্যতম চাবিকাঠি। প্রতি দিন অন্তত ছ’ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম না হলে দেখা দিতে পারে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা(Insomnia Treatment)। ঘুম কম হলে তার প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও পড়ে। কাজেই অনিদ্রার সমস্যা থাকলে তা অবহেলা করা উচিত নয়। অনিদ্রার সমস্যা দীর্ঘ দিন ধরে থেকে গেলে তা একটি স্থায়ী রোগ ডেকে আনতে পারে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ইনসমনিয়া’। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেমন তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যেতে পারেন না, তেমনই এক বার তাঁদের ঘুম ভেঙে গেলে ফের কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে অন্ততপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুম চাই। তবে ঘুমের ওষুধ যতটা পারবেন এড়িয়ে চলতে বলছেন তাঁরা। নয়তো রোজ ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে দেখা দেবে শরীরের আরও অনেক সমস্যা।
আরও পড়ুন:Dandruff Treatment: খুশকির সমস্যায় ভুগছেন? জানুন খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
অনিদ্রা থেকে সমস্যা
১. অবসাদ আসে, ২. কোনো কাজে মন বসে না, ৩. সারাদিন ক্লান্তিভাব থাকে, ৪. খেতে ভালো লাগে না, ৫. বিপাকের সমস্যা হয়, ৬. ডায়াবিটিস, হাই প্রেশারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়, ৭। মেজাজ হয় খিটখিটে (Insomnia Treatment)
মানসিক চাপে মনোবিদের পরামর্শ
মানসিক চাপে জর্জরিত থাকলে ঘুম না আসাটা স্বাভাবিক। যদি মানসিক চাপের সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে। ধ্যান ও সঠিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম ঘুমে খুবই সহায়তা করতে পারে। প্রতি দিন নিয়ম করে এই ধরনের অনুশীলন করলে মানসিক চাপ ও অনিদ্রা, দুই সমস্যা থেকেই মুক্তি মিলতে পারে।
রোজ প্রাণায়াম ব্যায়াম
রোজ করতে হবে ব্যায়াম। দিনে অন্তত পক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এইটুকু সময় শরীরচর্চা করলেই ঘুম ভালো হয়। কারণ শরীরে কিছু শান্তির হরমোন বের হয়। তবে ঘুমের দুই ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করবেন না। এতে সমস্যা বৃদ্ধি পাবে বলে জানাচ্ছে ওয়েবমেড। রিল্যাক্সেশন ভীষণই জরুরি। এই পদ্ধতি মেনে চললে ঘুম পায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত প্রাণায়াম করুন। প্রাণায়াম হল শ্বাসের ব্যায়াম। স্ট্রেস লেভেল কমে। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা কমে। ফলে ঘুমের সময় ঘুম আসে।
আরও পড়ুন:Acidity Home Remedy: গ্যাস-অম্বলের সমস্যা?রান্নাঘরের জিনিসেই সমাধান!
ডায়েট লিস্টে রাখুন এইসব খাবার
ডায়েট লিস্টে এমন সব খাবারকে প্রাধান্য দিন যেগুলো ঘুমের জন্য ভালো। তাই খাবার তালিকায় রাখতে পারেন বাদাম, দুধ, আখরোট, মধু, কলা, ডিম কিংবা মিষ্টি আলুকে। অনিদ্রা দূর করতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
খেয়াল রাখুন কতটা পরিমাণ ক্যাফিন যাচ্ছে শরীরে
সঠিক সময়ে ঘুম আনতে ঘুমের ৪ ঘণ্টা আগে কফি, সিগারেট ও মদ্যপানের অভ্যাস আজই ত্যাগ করুন এবং রাতের খাবার গ্রহণ করুন ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩ ঘণ্টা আগে। অনিদ্রা দূর করতে হলে রোজ কতটা পরিমাণ ক্যাফিন শরীরে যাচ্ছে তার উপর খেয়াল রাখুন। ক্যাফিনযুক্ত খাবারে রাশ টানুন। এমন সমস্যা থাকলে সন্ধ্যার পর চা-কফি না খাওয়াই ভাল।
শোয়ার ঘরের পরিবেশ
মনে রাখতে হবে যে শোয়ার ঘরে আলো ব্যবহার করা একবারেই উচিত হবে না। চেষ্টা করুন আলো বন্ধ করে শোয়ার। ছোট নাইট বাল্ব জ্বালালেও সমস্যা হতে পারে। তাই তো সচেতন থাকা সবার আগে জরুরি। শোয়ার ঘর হতে হবে নিস্তব্ধ। এছাড়া জায়গাটা আরামদায়ক হওয়া চাই। একটু শীতল হলেই সবথেকে ভালো হয়। ঘুমোতে যাওয়ার সময় যেন আশপাশের পরিবেশ থাকে শান্ত। উজ্জ্বল আলোর বদলে মৃদু নীল রঙের আলো থাকলে সুবিধা হতে পারে ঘুমোতে।
আরও পড়ুন:Sweet Potato: জানেন কি রাঙা আলুর গুণ? কমাতে পারে ক্যান্সারের ঝুঁকি
নির্দিষ্ট অভ্যাস গড়ে তুলুন
প্রতি দিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটি নির্দিষ্ট অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। বই পড়তে পারেন, লিখতে পারেন রোজনামচা। আপাত ভাবে তুচ্ছ মনে হলেও এই ধরনের অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী ভাবে অনিদ্রা উপশমে সহায়তা করে। অসুবিধা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
স্লিপ হাইজিন
আপনাকে অবশ্যই স্লিপ হাইজিন মেনে চলতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যান। এতে স্লিপ সাইকেল সঠিক পদ্ধতিতে এগিয়ে যাবে। আর দুপুরে ঘুমালে চলবে না। চোখ বন্ধ হয়ে আসলেও ঘুমাবেন না। বরং রাতে ঘুমাতে হবে। ঘুমোতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই বন্ধ করতে হবে বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবহার। শুতে যাওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে থেকে ল্যাপটপ বা মোবাইলের পর্দায় চোখ রাখা চলবে না একেবারেই।