ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: অতিরিক্ত জনসংখ্যা, জলের অভাব ও বিদ্যুতের সংকটের কারণে (Change of Capital City) ইরান তাদের বর্তমান রাজধানী তেহরান থেকে দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকা মাকরান অঞ্চলে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে। সম্প্রতি ইরানের এক সরকারি মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।
“নতুন রাজধানী অবশ্যই দক্ষিণে, বিশেষ করে মাকরান অঞ্চলে হবে,” তেহরান টাইমস-এ জানিয়েছেন ফাতেমেহ মোহাজেরানি (Change of Capital City)।
কেন এই ঘটনা (Change of Capital City)
তিনি উল্লেখ করেছেন, রাজধানী স্থানান্তর (Change of Capital City) কোনও জরুরি বিষয় নয়, তবে তেহরানের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের কারণে গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
কী বলেছেন মুখপাত্র?
মোহাজেরানি জানান, তেহরানে জলের অভাবসহ পরিবেশগত চাপ বেড়েছে (Change of Capital City)। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুটি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তারা রাজধানী স্থানান্তরের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ এবং মাকরান অঞ্চলে সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি উন্নয়নের পরিকল্পনা করবে।
আরও পড়ুন: Ritwick Chakraborty: মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে গুণী অভিনেতা, নিজেকে ভাগ্যবান বললেন ঋত্বিক
মাকরান অঞ্চল: ইরানের কৌশলগত দৃষ্টিকোণ
ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের মাকরান অঞ্চল ওমান উপসাগরের নিকটবর্তী হওয়ায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকা এখনও সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হয়নি। এটি বাণিজ্য ও সমুদ্রপথে যোগাযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে, যা তেহরানের উপর অর্থনৈতিক চাপ কমাবে।
কী বলেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট?
ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেন, “সমুদ্রকেন্দ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি মাকরানের উন্নয়ন বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে।”
মাকরান উপকূল ঐতিহাসিকভাবেই আচেমেনিড সাম্রাজ্যের সময় থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ১,০০০ কিলোমিটারের বেশি উপকূলরেখা রয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে চাবাহার ফ্রি ট্রেড-ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন তৈরি করা হচ্ছে, যা মধ্য এশিয়াকে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযোগ করবে।
খরচ এবং চ্যালেঞ্জ
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তেহরান স্থানান্তরের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দক্ষিণ থেকে কাঁচামাল পরিবহন করে তেহরানে প্রক্রিয়াকরণ এবং তারপর রপ্তানির জন্য আবার দক্ষিণে ফেরত পাঠানো আমাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস করে।”
তবে সমালোচক আলি গোলহাকি বলেন, “আজাদি স্টেডিয়াম পুনর্নির্মাণ করতে ১৮ মাস সময় লাগে এবং খরচ হয় ১৯ ট্রিলিয়ন রিয়াল (২৩.৭৫ মিলিয়ন ডলার)। তবে রাজধানী স্থানান্তর করতে শতাব্দী লাগবে এবং খরচ হবে শত শত বিলিয়ন ডলার।”
আরও পড়ুন: Raghu Dakat: খাদানের পর ঝড় তুলবে দেবের রঘু ডাকাত, প্রস্তুতি শুরু
তেহরানের পরিবেশগত সমস্যা
তেহরানের জনসংখ্যা আগামী ৩০ বছরে ২০ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেতে পারে, যা শহরের ব্যবস্থাপনা অসম্ভব করে তুলবে।
বায়ু দূষণ তেহরানের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ২০২২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর ২০,৮০০ জন মারা যায়, যার মধ্যে ৬,৪০০ জন তেহরানে।
তেহরান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। শহরের ৬০ শতাংশ বাড়ি ভূমিকম্পের মানদণ্ড পূরণ করে না। এছাড়াও, তেহরানের মাটি প্রতি বছর গড়ে ২৫ সেন্টিমিটার ধসে পড়ছে।
তেহরান স্থানান্তর নিয়ে আলোচনা
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই রাজধানী স্থানান্তরের আলোচনা চলছে। তবে উচ্চ খরচ এবং লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের কারণে এটি বাস্তবায়িত হয়নি।
তেহরান ১৭৯৬ সালে কাজার রাজবংশের আমলে রাজধানী হয়। এটি ইরানের ৩২তম জাতীয় রাজধানী। ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং তেলের ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ।