ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইজরায়েলের সঙ্গে সদ্যসমাপ্ত ১২ দিনের যুদ্ধে শীর্ষ সামরিক আধিকারিকদের হারানোর পর, দেশের ভিতরে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বা গুপ্তচরদের খোঁজে তোলপাড় শুরু করেছে ইরান (Iran Israel Conflict)। শাসক গোষ্ঠী মনে করছে, সেনা দফতরের গোপন তথ্য শত্রুপক্ষের হাতে পৌঁছেছে দেশের ভিতর থেকেই। আর তাই এখন যুদ্ধ থামলেও শুরু হয়েছে অন্য এক নিঃশব্দ যুদ্ধ—নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধেই।
সূত্রের খবর, যুদ্ধ চলাকালীন ইরানের সামরিক বাহিনীর একাধিক প্রথম সারির সেনা-আধিকারিক নিখুঁত নিশানায় নিহত হয়েছেন। ইরান মনে করছে, এত নিখুঁত হামলা শুধুমাত্র ‘ভিতরের খবর’ না থাকলে সম্ভব নয়। তেহরানের দাবি, ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ বহু দিন ধরেই তাদের সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর ভিতরে নিজের চর ঢুকিয়ে রেখেছে। সেই সন্দেহেই শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়(Iran Israel Conflict)।
ফাঁসি আর স্বীকারোক্তির ভয়াবহ পরিণতি (Iran Israel Conflict)
ইতিমধ্যেই ‘ইজরায়েলের চর’ সন্দেহে অন্তত ছ’জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে (Iran Israel Conflict)। আরও কয়েকশো মানুষকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গোপন জিজ্ঞাসাবাদ কেন্দ্রে। ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যমে কয়েক জনের “স্বীকারোক্তি”-র অডিয়ো ক্লিপও সম্প্রচার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এরা ‘জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি’ এবং পশ্চিমি গুপ্তচর সংস্থার ‘অন্তর্বর্তী কর্মী’। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই অভিযানকে ‘ভুয়ো শুদ্ধিকরণ’ বলেই চিহ্নিত করছে। তাদের দাবি, আগেও বহু বার দেখা গিয়েছে, ইরানে বিচার না করেই দোষ স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় ধৃতদের। অনেকে নিরপরাধ হলেও শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কিংবা কোনও পুরনো শত্রুতার জেরে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় (Iran Israel Conflict)।

আরও পড়ুন: Benjamin Netanyahu : দুর্নীতি মামলায় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অব্যাহতির আর্জি খারিজ!
চর খোঁজার নামে ‘গাঁ উজাড়’ (Iran Israel Conflict)
তেহরানের প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে এক ইরানি মানবাধিকার কর্মী বলেন, “ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হচ্ছে। মোসাদের চর খুঁজতে গিয়ে সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী, এমনকি কিছু প্রাক্তন সেনাকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এটা ভয়ংকর স্বৈরতন্ত্র।” ধৃতদের মধ্যে শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: US Citizenship : ট্রাম্পের নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন উদ্যোগ ধাক্কা খেলেও এবার স্বস্তি সুপ্রিম কোর্টে
পশ্চিমি গোয়েন্দা সংস্থাকে দায় (Iran Israel Conflict)
ইরানের গোয়েন্দা দফতরের অভিযোগ, এই গোটা ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছে পশ্চিমি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি—বিশেষত ইজরায়েলের মোসাদ, আমেরিকার (Donald J. Trump) সিআইএ এবং ব্রিটেনের এম১৬ (Iran Israel Conflict)। তাদের অভিযোগ, এরা ইরানের ভিতরে থেকে সরকার-বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে, এবং গোপন তথ্য পাচার করছে বিদেশে। তবে এই অভিযোগগুলির কোনও নিরপেক্ষ প্রমাণ এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি। আন্তর্জাতিক মহলও বিষয়টিকে উদ্বেগের চোখে দেখছে। বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ড ও ‘স্বীকারোক্তি প্রচার’-এর মতো কৌশলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি ‘নির্যাতনের প্রতীক’ বলে বর্ণনা করেছে।
যুদ্ধ শেষ হলেও ইরানের ভিতরে ভয় আর সন্দেহের নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে (Iran Israel Conflict)। প্রশাসনের দাবি, তারা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এই অভিযান ইরানিদের জীবনে আরও অনিশ্চয়তা ও দমননীতির ছায়া ফেলছে। প্রশ্ন একটাই—চর ধরা যাবে তো? নাকি নিজেদের মধ্যেই হারাবে ইরান?