ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে আবার যুদ্ধের ছায়া। ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইজ়রায়েলি আক্রমণের পাল্টা জবাব দিয়েছে তেহরান(Iran Israel Conflict)। শুক্রবার রাতভর চলে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রতিহত আক্রমণ। দুই পক্ষের হামলা-প্রতিহামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত দু’জনের, আহত হয়েছেন ৬০-এর বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপ, আতঙ্ক আর রাজনৈতিক উত্তেজনায় তেল আভিভ থেকে তেহরান, জ্বলছে গোটা অঞ্চল।
ট্রাম্প জানতেন আগেই? (Iran Israel Conflict)
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) নিজে জানিয়েছেন রয়টার্সকে, ইরানকে তিনি ৬০ দিন সময় দিয়েছিলেন। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরই ইজ়রায়েল হামলা চালায়। আন্তর্জাতিক মহলের মতে, এই মন্তব্য ইজ়রায়েলের হামলায় মার্কিন মদতের ইঙ্গিত বহন করে। যদিও মার্কিন প্রশাসন এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
ইজরায়েলের ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’ (Iran Israel Conflict)
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালেস্টিক হামলা ব্যর্থ করা। এই অভিযানে ইরানের মাটিতে হামলা চালানো হয় একাধিক জায়গায়। ইরানের দাবি অনুযায়ী, মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন লেগেছে, যদিও এর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
ইরানের পাল্টা হামলা (Iran Israel Conflict)
ইজ়রায়েলের রাজধানী তেল আভিভ ও আশপাশের এলাকায় ইরান ছুড়েছে প্রায় ১০০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র। ইজ়রায়েলি সেনা মুখপাত্র এফি ডিফ্রিন জানিয়েছেন, এর মধ্যে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশেই ধ্বংস করা গেলেও, ধ্বংসাবশেষ ও কয়েকটি বিস্ফোরণ গুরুতর ক্ষতি করেছে। সাইরেন বেজেছে তেল আভিভ, জেরুজালেম ও গুশ দান অঞ্চলে।

হতাহতের তালিকা (Iran Israel Conflict)
- ইজ়রায়েলে মৃত্যু: রামাত গান এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে এক মহিলার মৃত্যু
- ইজ়রায়েলে আহত: মোট ৫১ জন, তার মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন গুরুতর আহত, চিকিৎসাধীন ৩টি হাসপাতালে
- ইরানে আহত: সরকারিভাবে সংখ্যা না জানালেও মেহরাবাদ ও সামরিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
মার্কিন ভূমিকা (Iran Israel Conflict)
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকা ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে সাহায্য করছে। মার্কিন সেনা বাহিনীর একাধিক ইউনিট ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছে ইজ়রায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষায়। তবে হোয়াইট হাউস এখনো মুখ খুলতে নারাজ।

দুই দেশের মধ্যে বাড়ছে উত্তেজনা (Iran Israel Conflict)
ইজ়রায়েলের মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, পরবর্তী আঘাত হবে আরও তীব্র। তেহরানও সক্রিয় করেছে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেনেই এর আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “ইজ়রায়েলকে কঠিন পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
সাধারণ মানুষের আতঙ্ক (Iran Israel Conflict)
তেল আভিভ, হাইফা, বেয়ারশেবা—প্রায় সর্বত্র আকাশে ধোঁয়া ও আতঙ্ক। নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে সাবওয়ে স্টেশন, ভূগর্ভস্থ শেল্টারে। এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছে। ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাতে শুধু পশ্চিম এশিয়া নয়, গোটা বিশ্বে জ্বালানির দামের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক চাপে পড়বে অনেক দেশ। বিশেষ করে আমেরিকা ও রাশিয়া—দুই পরাশক্তির ভূমিকা ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। শুরু হয়ে গেছে নতুন এক অধ্যায়, যেখানে জবাবের জবাবে বারুদের গন্ধ আরও তীব্র হচ্ছে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে—এই আগুন কবে নিভবে, না কি জ্বলতে জ্বলতেই ছড়িয়ে পড়বে আরও অনেক দেশে?