ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সিরিয়ায় চলমান হিংসার ঘটনার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি এড়াতে ইজরায়েলি (Israel-Syria agree to ceasefire) কর্মকর্তারা দ্রুজ নাগরিকদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ঐতিহাসিকভাবে ক্ষমতার পালাবদলের মধ্য দিয়ে চলা দ্রুজরা আসাদের পতনের পর রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত রয়েছে।
ড্রুজ অঞ্চলে ভয়াবহ সংঘর্ষ, মৃত ৩০০-র বেশি (Israel-Syria agree to ceasefire)
ড্রুজ অধ্যুষিত অঞ্চলে কয়েকদিনের তীব্র লড়াইয়ের পরে ইজরায়েল এবং সিরিয়া যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে (Israel-Syria agree to ceasefire)। শুক্রবার এই কথা জানান তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন দূত টম ব্যারাক। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। হিংসা শুরু হয় যখন ইজরায়েল দামাস্কাসে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালায় এবং দক্ষিণ সিরিয়া থেকে বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানায়। ইজরায়েল জানায়, তারা ড্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সিরিয়া, লেবানন এবং ইজরায়েলে ছড়িয়ে থাকা ড্রুজরা একটি প্রভাবশালী কিন্তু সংখ্যায় ছোট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও, সুয়েইদা প্রদেশের উত্তর এবং পশ্চিমাংশে এখনও সংঘর্ষ চলছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা এবং স্বাধীন সংবাদ সংস্থা Sweida24-এর প্রধান রায়ান মারুফ।
ইজরায়েল কেন সিরিয়ায় হামলা চালালো? (Israel-Syria agree to ceasefire)
সিরিয়ায় আনুমানিক ৭ লক্ষ ড্রুজ বসবাস করে এবং ইজরায়েলে রয়েছেন প্রায় ১.৫ লক্ষ ড্রুজ (Israel-Syria agree to ceasefire)। ইজরায়েলের ড্রুজ সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এসেছে। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তারা নিজেদেরকে ইহুদি নাগরিকদের ‘রক্তচুক্তির অংশ’ বলে মনে করে। যদিও বর্তমানে অনেক ড্রুজ নাগরিক মনে করেন, তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো ব্যবহার পাচ্ছেন, তবুও তাদের একটা বড় অংশ এখনও রাষ্ট্রের পক্ষে রয়েছেন এবং সামরিক পরিষেবায় অংশ নেন। সুয়েইদার ড্রুজদের রক্ষার কথা বললেও, ইজরায়েলের সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বাশার আল-আসাদের পতনের আগে ও পরে, ইজরায়েল বহুবার বিমান হামলা চালিয়েছে। বর্তমানে তারা সিরিয়ার প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম গোলান হাইটস, যা ১৯৬৭ সাল থেকেই ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণে।
“এই সাহায্যের নামে কূটনীতি”— প্রাক্তন ইজরায়েলি কূটনীতিকের কটাক্ষ (Israel-Syria agree to ceasefire)
নিউ ইয়র্কে ইজরায়েলের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও কনসাল জেনারেল আলোন পিঙ্কাস আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এটা নিছক সুবিধাবাদ।” তিনি ইজরায়েলের ড্রুজদের রক্ষার দাবিকে ভণ্ডামি বলে কটাক্ষ করেছেন। পিঙ্কাস বলেন, “আমরা বলছি ড্রুজদের সাহায্য করছি, যেমনটা আমরা আমাদের আরেক বন্ধু কুর্দদের কখনও করিনি।” তিনি বলেন, ইজরায়েলের এই সাম্প্রতিক হামলার পেছনে একাধিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে চিত্র তুলে ধরা, তার দুর্নীতির মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা, এবং সাম্প্রতিক ২১ মাস ধরে সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা প্রদর্শনের ভ্রান্ত ধারণা বজায় রাখা।
আরও পড়ুন: Martian Meteorite : সাহারার বুকে পাওয়া মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ডের নিলাম, বিক্রি হল ৫৩ লক্ষ ডলারে!
তিনি আরও বলেন, “নেতানিয়াহু চান না সিরিয়ায় শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হোক। তিনি চান, উত্তরাঞ্চলে কুর্দদের এবং দক্ষিণে ড্রুজ ও বেদুইনদের নিয়ন্ত্রণে বিভক্ত একটি দুর্বল সিরিয়া থাকুক। এর ফলে দক্ষিণ সিরিয়ায় ইজরায়েল নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারবে।”
নেতানিয়াহুর বার্তা: সীমান্ত পেরোবেন না
এর আগে এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ একটি পোস্টে নেতানিয়াহু লেখেন, “আমার প্রিয় ড্রুজ ভাইরা, সুয়েইদা ও দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ার পরিস্থিতি খুবই সংকটজনক। আইডিএফ, বিমান বাহিনী এবং অন্যান্য বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। আমরা আমাদের ড্রুজ ভাইদের রক্ষায় কাজ করছি।”
তিনি আরও লেখেন, “আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা ইজরায়েলের নাগরিক। সীমান্ত পার হবেন না। এতে আপনারা প্রাণ হারাতে পারেন বা অপহৃত হতে পারেন। এটি আইডিএফ-এর অভিযানকে বাধা দেবে। বাড়িতে ফিরে যান, বাহিনীকে তাদের কাজ করতে দিন।”
ড্রুজ সম্প্রদায় কারা?
ড্রুজ ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রায় ১,০০০ বছর আগে শিয়া ইসলামের একটি শাখা ইসমাইলিজম থেকে আলাদা হয়ে গঠিত হয়। সিরিয়ার ক্ষমতার পরিবর্তনশীল কেন্দ্রগুলির মধ্যে টিকে থাকার কৌশলে ড্রুজদের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। ইতিহাসে তারা ওসমানীয় ও ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। বাশার আল-আসাদের শাসনকালে ড্রুজদের কিছুটা স্বায়ত্তশাসনের অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের বাধ্যতামূলক সেনা পরিষেবার হাত থেকে অব্যাহতি ছিল। পরিবর্তে তারা স্থানীয় কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনে ড্রুজদের মধ্যে আশাবাদ জাগে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার নেতৃত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সাম্প্রতিক হিংসার ঢেউ ড্রুজদের নতুন নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা বাড়িয়ে তুলেছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আশাও অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।