ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ‘ক্যান্সার’ মাত্র কয়েক অক্ষরের এই শব্দ যে কোনও মানুষের জীবনে যে কোনও সময়ে অন্ধকার নামিয়ে আনতে। মারণ এই ব্যাধি মানুষের শরীরের যে কোনও জায়গায় বাসা বাঁধতে পারে। বর্তমানে মানুষের শরীরের যে অঙ্গে সবথেকে বেশি ক্যান্সারের জীবাণু বাসা বাঁধে সেটি হল ফুসফুস (Lungs)। ফুসফুসের ক্যান্সার বা লাংস ক্যান্সার আমাদের প্রায় সকলের কাছে একটি খুব পরিচিত শব্দ। ক্যান্সার নামক এই মারণ রোগ নিঃশব্দে আমাদের ফুসফুসে আক্রমণ করতে পারে। তবে অনেক সময় ধূমপান বা মদ্যপানের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়। যদিও সঠিক সময়ে এই রোগ ধরা পড়লে বা স্বাস্থ্য সচেতন ভাবে জীবনযাপন করলে ক্যান্সার সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হতে পারে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, অ্যালার্জি প্রতিরোধের ওষুধ মানব দেহে ক্যান্সার বা কর্কট রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এই বিষয়ে গত ৬ ডিসেম্বর ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণায় মাউন্ট সিনাইয়ের আইকান স্কুল অফ মেডিসিনের (Mount Sinai’s Icahn School of Medicine) গবেষকরা দেখিয়েছেন, অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে আমরা সাধারণত যে ওষুধগুলি ব্যবহার করি, তা দিয়ে ফুসফুসের ক্যান্সার বা ক্যান্সারের প্রথম পর্যায়ে টিউমার আটকানো সম্ভব।
গবেষকদের দাবি, অ্যালার্জি প্রতিকারের ওষুধ আমাদের ফুসফুসে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে ওঠা টিউমার বা অতিরিক্ত মাংসপিন্ডকে বাড়তে দেয় না। শুরু বা গোড়া থেকেই তা আটকে দিতে পারে। ফুসফুস ক্যান্সার রোধেব অ্যালার্জির ওষুধ নিয়ে মানবদেহের উপর গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকরা দেখিয়েছেন, ডুপিলুম্যাবের (dupilumab) সঙ্গে ইমিউনোথেরাপির (immunotherapy) সংমিশ্রণে একটি ইন্টারলিউকিন (IL-4) রিসেপ্টর ব্লকিং (receptor blocking antibody) অ্যান্টিবডি বা ওষুধ যা বেশিরভাগ সময় অ্যালার্জি এবং হাঁপানির চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এটি রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই অ্যান্টিবডি ছ’জন রোগীর মধ্যে একজনের টিউমার নিরাময়ে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:https://tribetv.in/know-the-health-benefits-of-tomatoes/
জেনিফার লিপশুল্টজ প্রিসিশন ইমিউনোলজি ইনস্টিটিউট, মাউন্ট সিনাইয়ের আইকান স্কুল অফ মেডিসিনের ইমিউনোলজি এছাড়াও ইমিউনোথেরাপি বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিক তথা গবেষক মিরিয়ম মিরাড জানিয়েছেন, ফুসফুসের ক্যান্সার রোধে ইমিউনি থেরাপি ভীষণ কার্যকরী। এটি প্রয়োগের ফলে দেখা গিয়েছে, ফুসফুসের কোষগুলির অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে ওঠা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ওষুধ ব্যবহারে অন্তট এক তৃতীয়াংশ রোগী নীরবে সেরে উঠছেন। শুধু তাই নয়, এই গবেষণায় গবেষকদের মূল লক্ষ্যই হল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, একক কোষ ব্যবহার করে মলিকুলার ইমিউন শনাক্ত করা।
কারণ, এটি শনাক্ত করা না গেলে ফুসফুসের কোষে টিউমার বেড়ে ওঠা বা তার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও এই গবেষণার মাধ্যমে গবেষকরা দেখতে চেয়েছেন যে, সাধারণ অ্যালার্জির ওষুধ ব্যবহার করে আদেও ফুসফুসের টিউমার বা ক্যান্সার কোষ নষ্ট করে দেওয়া সম্ভব কিনা। নেচার পত্রিকার গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে আমজনতার কাছে ডুপিলুম্যাব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করিয়ে ফুসফুসের ক্যান্সার নিরাময় করা যায় কিনা বা এটি কতটা কার্যকরী সেই বিষয়ে সত্যতা তুলে ধরতে চাইছেন।
পাশাপাশি অদূর ভবিষষ্যতে চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ডুপিলুম্যাব মানুষকে ‘কর্কট’ রোগমুক্ত করতে পারে কিনা সেই বিষয়েও নজর দিয়েছেন গবেষকরা। যেহেতু ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সুতরাং শুধু ওষুধের উপর ভরসা করলেই চলবে না। আপনার শরীরে যদি ক্যান্সারের কোনও লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে দেরী না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন ও নিজের যত্ন নিতে ভুলবেন না।