ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চার দশকের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ের অবসান ঘটাল কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। স্বাধীন ও সার্বভৌম কুর্দিস্তান রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইতি টানলেন কুর্দ বিদ্রোহীরা (Kurdistan Workers Party)। অস্ত্রসমর্পণের ঘোষণা দিয়ে নিজেদের সংগঠনও ভেঙে দেওয়ার কথা জানাল পিকেকে নেতৃত্ব। এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে উত্তর ইরাকে আয়োজিত সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটির বৈঠকে, এমনটাই জানিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। বহু বছরের সংগ্রামের শেষে এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পালাবদল হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ওসালানের প্রভাব ও বার্তা (Kurdistan Workers Party)
এ সিদ্ধান্তের মূল প্রেরণা সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও দীর্ঘদিন ধরে বন্দি থাকা নেতা আবদুল্লা ওসালান (Kurdistan Workers Party)। সম্প্রতি জেল থেকে তিনি একটি বার্তার মাধ্যমে অস্ত্র পরিহার ও সংঘর্ষবিরতির আহ্বান জানান। তাঁর অনুগামী নেতারাই এবার সেই নির্দেশ পালনে এগিয়ে এসেছেন।ওসালান ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হন এবং এরপর থেকে তুরস্কের কারাগারেই বন্দি। কিন্তু দীর্ঘ বন্দিজীবনের মধ্যেও কুর্দদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ও প্রভাব অটুট থেকেছে। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন কুর্দিস্তান রাষ্ট্র গঠনের, যা ছড়িয়ে রয়েছে তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া ও ইরানের অংশবিশেষ জুড়ে।
চার দশকের লড়াইয়ের অবসান(Kurdistan Workers Party)
১৯৮৪ সালে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল পিকেকে(Kurdistan Workers Party)। তাদের দাবি ছিল কুর্দদের জন্য একটি স্বাধীন মাতৃভূমি। এই লড়াইয়ে গত চার দশকে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার কুর্দ ও তুর্কি নাগরিক। তুরস্ক বরাবরই পিকেকে-কে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও পিকেকে-কে একইভাবে চিহ্নিত করে।

এর্ডোয়ানের কড়া অবস্থান ও সামরিক সাফল্য(Kurdistan Workers Party)
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ান দীর্ঘদিন ধরেই কুর্দ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন(Kurdistan Workers Party)। গত ডিসেম্বরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের আবহে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (SDF) এবং ‘পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট’ (YPG)-এর বিরুদ্ধেও তিনি সফল সামরিক অভিযান চালান। এই অভিযান কুর্দদের জন্য এক বড় ধাক্কা ছিল।এবার পিকেকে-র এই অস্ত্রসমর্পণকে এর্ডোয়ানের কূটনৈতিক এবং সামরিক বিজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

স্বাধীনতার স্বপ্নে ছেদ(Kurdistan Workers Party)
পশ্চিম এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম জনজাতি কুর্দরা, যুগের পর যুগ ধরে নিজেদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখে এসেছে। কিন্তু রাষ্ট্র গঠনের সেই স্বপ্ন বারবারই থেমে গিয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কাছে। পিকেকে-র নিরস্ত্রীকরণ এবং বিলুপ্তি সেই স্বপ্নের কফিনে শেষ পেরেক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কুর্দদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী?(Kurdistan Workers Party)
এখন প্রশ্ন একটাই—কুর্দদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী? সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে কি তারা নতুন কোনও গণতান্ত্রিক পথ বেছে নেবে? নাকি রাষ্ট্রহীন জাতি হিসেবে তারা আবারও রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের লড়াই চালিয়ে যাবে?কুর্দদের এই সিদ্ধান্ত শুধু তুরস্কই নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রেই এক স্থায়ী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে(Kurdistan Workers Party)। আর একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে, পিকেকে হয়তো আজ ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাল—তবে তা স্বাধীনতা নয়, আত্মসমর্পণের অধ্যায় হিসেবে।