ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতসহ অন্যান্য দেশকে অর্থ সাহায্য বন্ধ করল আমেরিকা(US Funds For India And Others)। সম্প্রতি ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (DOGE) এই অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা ডজের তরফে একটি এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারে Department of Government Efficiency (DOGE) বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনিই ভারতের জন্য বরাদ্দ আর্থিক সাহায্য বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। উপমহাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, মানুষকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে এতদিন এই অনুদান দিয়ে এসেছে আমেরিকা। ট্রাম্প এবং মাস্ক সেই অনুদান বাতিল করলেন। তবে শুধু ভারত নয় বিশ্বের নানা দেশে কোন প্রকল্পগুলি বন্ধ হবে বলে জানা যাচ্ছে।
মোদীর আমেরিকা সফরের পরেই সিদ্ধান্ত (US Funds For India And Others)
সম্প্রতিই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন মোদি। সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সময় অনুদান বাতিলের প্রসঙ্গ ওঠেনি। কিন্তু সফর সেরে মোদি ফেরার পরই এই সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা(US Funds For India And Others)। বিশ্বের নানা প্রান্তে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিল জো বাইডেন প্রশাসন। তার মধ্যে ভারতের জন্য বরাদ্দ ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার। সেই অনুদান বন্ধ করছে মার্কিন প্রশাসন। উল্লেখ্য, আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের পরেই প্রকাশ্যে এল মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপ।
ইলনকে ভরসা করেছিলেন ট্রাম্প (US Funds For India And Others)
ইলন মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, যার উদ্দেশ্য ফেডারেল খরচ কমানো এবং নিয়ন্ত্রন শিথিল করা। সংস্থাটির লক্ষ্য হলো ফেডারেল প্রযুক্তি আধুনিকীকরণ এবং সরকারি কার্যক্রমে দক্ষতা উন্নয়ন করা। দ্বিতীয় বারের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে ইলনকে ভরসা করেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পকে জেতাতে চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি ইলনও। প্রচারে নিজেেই কোটি কোটি টাকা খরচ করেন তিনি। ক্ষমতায় এসে সরকারে তাই ইলনকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। সরকারের খরচ বাঁচানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। করদাতাদের টাকা নিজেদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে বলে জানান। তারই বাস্তবায়নের চেষ্টায় মাস্ক(US Funds For India And Others)।
খরচ না কমালে দ্রুতই দেউলিয়া আমেরিকা
কেবল ভারত নয়, বাংলাদেশ-নেপালের মতো আরও নানা দেশের অনুদানও বন্ধ করে দিয়েছে মাস্কের দপ্তর(US Funds For India And Others)। বিশ্বজুড়ে লিঙ্গসমতা, গণতন্ত্র, নারী ক্ষমতায়নের খাতে বরাদ্দও বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, দপ্তরের দায়িত্ব নেয়ার পরেই মাস্ক সাফ জানিয়েছিলেন, খরচ না কমালে দ্রুতই দেউলিয়া হয়ে যাবে আমেরিকা। তাই এই ঘোষণা করে মাস্কের দপ্তর জানিয়েছে, বিদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব কার্যকলাপ নিয়ে ‘প্রশ্ন’ রয়েছে, মার্কিন করদাতাদের টাকায় চলা সেসব কাজ বন্ধ করতে হবে।
অনুদান বন্ধ ভারত-বাংলাদেশে
রবিবার মাস্কের দপ্তরই ঘোষণা করেছে, ভারতে ভোটদানের হার বাড়াতে বরাদ্দ ২ কোটি ১০ লক্ষ মার্কিন ডলারের অনুদান বন্ধ করা হচ্ছে। ভারতে ২.১ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প, যা দেশটির ‘নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ’ বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল, বাতিল করা হয়েছে। ডিওজিই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে এ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশেও ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের উন্নয়নে’ বরাদ্দকৃত ২.৯ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।
কোন অনুদান বন্ধ হচ্ছে অন্য দেশগুলির?
এছাড়াও মোজাম্বিক: ১ কোটি ডলার – ‘স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল পুরুষ খতনা’ কর্মসূচি, কম্বোডিয়া: ৯.৭০ লাখ ডলার – ‘উদ্যোক্তা-ভিত্তিক দক্ষতায় কম্বোডিয়ান তরুণদের দক্ষ করে তোলা, কম্বোডিয়া: ২৩ লাখ ডলার – ‘স্বাধীন কণ্ঠকে শক্তিশালী করা’, প্রাগ সিভিল সোসাইটি সেন্টার: ৩.২ কোটি ডলার, সার্বিয়া: ১.৪ কোটি ডলার – ‘সরকারি ক্রয় ব্যবস্থার উন্নয়ন’, নেপাল: ১.৯ কোটি ডলার – ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ’, ২ কোটি ডলার – ‘অর্থনৈতিক ফেডারেলিজম’, লাইবেরিয়া: ১৫ লাখ ডলার – ‘ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধি’, মালি: ১.৪ কোটি ডলার – ‘সামাজিক সংহতি উন্নয়ন’, দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৫ লাখ ডলার – ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র’, এশিয়া: ৪.৭ কোটি ডলার – ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন’, কসোভো: ২০ লাখ ডলার – ‘টেকসই পুনর্ব্যবহারযোগ্য মডেল তৈরি’।
আন্তর্জাতিক ব্যয় কমিয়ে দেশীয় অগ্রাধিকার
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ প্রচেষ্টাকে প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, এই উদ্যোগটি ইতোমধ্যেই সরকারের বিপুল পরিমাণ সঞ্চয় খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছে। ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি ডলার সঞ্চয় করতে পেরেছি… কিন্তু আপনি যে সংখ্যা নিয়ে কথা বলছেন তা হতে পারে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এটা প্রচণ্ড বড় সংখ্যা।’ এই বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক ব্যয় কমিয়ে দেশীয় অগ্রাধিকারগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন।