ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সময়টা সত্যিই ভালো যাচ্ছে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার। সোমবার যুবভারতীতে জামশেদপুর এফসি’কে হারিয়ে টানা তৃতীয়বার আইএসএল ফাইনালে খেলার টিকিট আদায় করে নিয়েছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আইপিএলে তাঁর দল লখনৌ সুপার জায়ান্ট কলকাতা নাইট রাইডার্সকে তাদের ঘরের মাঠে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৪ রানে হারিয়ে দিল (LSG Beats KKR)। আইপিএলে কেকেআরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি সাক্ষাতে ৬ বারের মধ্যে চারবার জিতল লখনৌ। শুধু তাই নয়, নাইটদের বিরুদ্ধে এই নিয়ে তিনবার খুব কম রানের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিল সঞ্জীব গোয়েঙ্কার দল।
এর আগে ২০২২ আইপিএলে কেকেআর-কে ২ রানে হারিয়েছিল লখনৌ। পরের আইপিএলে অর্থাৎ ২০২৩ সালে লখনৌয়ের কাছে ১ রানে হেরেছিল শাহরুখ খানের দল। আর মঙ্গলবার ইডেনে ৪ রানে জিতলেন ঋষভ পন্থরা। লড়াই করেও রিঙ্কু সিংরা শেষ রক্ষা করতে না পারায় হাসি মুখে ক্রিকেটের নন্দনকানন ছাড়তে পারলেন না কলকাতা নাইট রাইডার্সের সমর্থকরা। ইডেনে প্রথমবারের জন্য এদিন পড়েছিল টিফো। তিনবার আইপিএল জয়কে স্মরণ করে এই টিফো নামিয়েছিলেন নাইট ভক্তরা (LSG Beats KKR)। কিন্তু তাদের প্রিয় দল ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে ফের হারের মুখ দেখতে হল। লখনৌ সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে ৪ রানে পরাজিত গতবারে চ্যাম্পিয়নরা।
টসে জিতেই হল না মান রক্ষা (LSG Beats KKR)
মঙ্গলবার ইডেনের ব্যাটিং প্যারাডাইস উইকেটে টসে জিতেও নাইট অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে লখনৌকে কেন ব্যাটিং করতে পাঠালেন তা বোধগম্য হলো না কারও। কেকেআর-এর হারের ময়না তদন্ত করতে বসলে টসে জিতে ব্যাটিং না নেওয়াটাই সবথেকে বড় কারণ হিসেবে উঠে আসবে। ইডেনের এদিনের উইকেটের চরিত্র কি ঘরোয়া দল বুঝতেই পারলো না! প্রশ্ন উঠছেই(LSG Beats KKR)। দুপুরের ম্যাচে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো শুরুতে ব্যাটিং করার সুযোগ পুরো দমে কাজে লাগালেন এডেন মার্করাম, মিচেল মার্শ ও নিকোলাস পুরান।
শুরু থেকেই নাইট বোলারদের বিরুদ্ধে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন এলএসজি-এর দুই ওপেনার মার্করাম ও মার্শ। মাত্র ৫.২ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৫০ রান তুলে ফেলে লখনৌ। ওপেনিং জুটিতেই মার্করাম-মার্শ মিলে তুললেন ৯৯ রান। ১০.২ ওভারে মার্করামকে ফিরিয়ে লখনৌ শিবিরে প্রথম ধাক্কাটা দেন হর্ষিত রানা। ২৮ বলে ৪ বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৭ রান করে বোল্ড হন মার্করাম।
আরও পড়ুন: KKR Match: মার্শ-পুরানদের জন্য ইডেনের গ্যালারিতে গলা ফাটালেন মোহনবাগানের দিমি-জিমিরা
তাতে লখনৌয়ের রান তোলার গতি কমেনি। ১১ ওভারেই একশোর গন্ডি টপকে যায় লখনৌ। এরপর মার্শ ও দুরন্ত ফর্মে থাকা নিকোলাস পুরান নাইট বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করলেন। দ্বিতীয় উইকেটে ৩০ বলে ৭১ রানের পার্টনারশিপ করলেন দু’জনে। তার দৌলতে ১৩.৩ ওভারের ১৫০ রান তুলে ফেলে লখনৌ। তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে ২৫০ রানের কাছাকাছি পৌঁছতে চলেছে লখনৌয়ের স্কোর। অবশেষে মার্শকে ফেরান রাসেল।

অল্পের জন্য শতরান হাতছাড়া করলেন অজি ব্যাটার। ৪৮ বলে হাফ ডজন বাউন্ডারি ও ৫ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৮১ রান করে মার্শ যখন সাজঘরে ফিরলেন তখন লখনৌয়ের রান ১৫.২ ওভারে ২ উইকেটে ১৭০। তবে বিধ্বংসী নিকোলাস পুরানকে থামাতে পারেননি কোনও নাইট বোলারই। ৩৬ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ৮ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৮৭ রান করে অপরাজিত থেকে যান ম্যাচের সেরা ক্যারিবিয়ান ব্যাটার (LSG Beats KKR)। তার সৌজন্যেই ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৩৮ রান তোলে লখনৌ। মাঝে আব্দুল সামাদকে (৬) ফিরিয়ে দেন হর্ষিত রানা। শেষে পুরানের সঙ্গে ৪ রান করে অপরাজিত থেকে যান ডেভিড মিলার।
লখনউয়ের রানের পাহাড়েই ধাক্কা (LSG Beats KKR)
পাহাড় প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে দুর্ধর্ষ লড়াই করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত এবং মিডিল অর্ডারের ব্যর্থতায় জয়ের কাছে পৌঁছেও ঘরের মাঠে দ্বিতীয় হার এড়াতে পারল না।দুই নাইট ওপেনার কুইন্টন ডি’কক (১৫) এবং সুনীল নারিন (১৩ বলে ৩০ রান) ওপেনিং জুটিতে ভরসা দিতে না পারলেও কলকাতাকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ৩৭ রানের মাথায় ডি’কককে ফিরিয়ে দেন বঙ্গ পেসার আকাশদীপ। এরপর নারিন ও রাহানে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ভালোই এগোচ্ছিলেন (LSG Beats KKR)। ৩.৪ ওভারেই ৫০ রান তুলে ফেলে কেকেআর। কিন্তু ৬.২ ওভারে দলীয় ৯১ রানের মাথায় দিগভেস রাঠির বলে তুলে মারতে গিয়ে মার্করামের হাতে জমা পড়েন নারিন। রাহানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ২৩ বলে ৫৪ রানের পার্টনারশিপ করেন নারিন-রাহানে।

আরও পড়ুন: MS Dhoni: ‘২০২৩-এই নেওয়া উচিৎ ছিল অবসর’, ধোনিকে বেনজির আক্রমণ প্রাক্তন ব্যাটারের
এরপর সহ অধিনায়ক ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে নিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে লক্ষ্যের দিকে ভালোই এগোচ্ছিলেন নাইট অধিনায়ক রাহানে। ৭.২ ওভারি সেঞ্চুরির গণ্ডি টপকে যায় নাইটরা। দুজনে যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল নাইটদের তৃতীয় জয় পেতে কোনও অসুবিধা হবে না(LSG Beats KKR)। তৃতীয় উইকেটে আইয়ার ও রাহানে মিলে ৪০ বলে ৭১ রানের পার্টনারশিপ করেন। যখন কেকেআর জয়ের দিকে এগোচ্ছিল তখনই ১৩ তম ওভারের শেষ বলে রাহানেকে ফিরিয়ে বড় ব্রেক-থ্রুটি দেন সার্দুল ঠাকুর।৩৫ বলে ৮ বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৬১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন নাইট অধিনায়ক। তিনি যখন ফিরেন তখন দলের রান তিন উইকেটে ১৬২। নাইটদের তখন জয়ের জন্য দরকার সাত ওভারে ৭৭ রান। হাতে তখনও ৭ উইকেট।
কেকেআরের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা (LSG Beats KKR)
রাহানে আউট হওয়ার পরই নাইট মিডিল অর্ডারে ধ্বস নামে। ১৬২ রানে ৩ উইকেট থেকে ১৮৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে। রমনদীপ সিং (১), অঙ্গক্রিস রঘুবংশী (৫), ভেঙ্কটেশ আইয়ার, আন্দ্রে রাসেল (৭) দ্রুত ফিরে যান। ২০ বলে ২৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট খুইয়ে জয় প্রায় অসম্ভব করে ফেলে কেকেআর। নাইটদের শেষ ভরসা ছিলেন রিঙ্কু সিং। হর্ষিত রানাকে নিয়ে একটা শেষ চেষ্টা করেও ছিলেন রিঙ্কু।
কিন্তু সোমবার যুবভারতীতে আইএসএল-এর সেমিফাইনালে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে গোল করে মোহনবাগানের হিরো বনে যাওয়া আপুইয়া হতে পারলেন না রিঙ্কু। শেষ ওভারে নাইটদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৪ রান। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে ৭ উইকেটে ২৩৪ রানেই থেমে যায় নাইটদের ইনিংস (LSG Beats KKR)। ১৫ বলে ৬ বাউন্ডারি ও দুই ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৮ রান করে অপরাজিতা থেকে যান রিঙ্কু। তার সঙ্গে ১০ রানে অপরাজিত ছিলেন হর্ষিত।

এদিন লখনৌয়ের বোলাররা ষোলটা হোয়াইড বল করলেন। একাই সার্দুল ঠাকুর করলেন আটটি ওয়াইড বল। তার মধ্যে ১৩তম ওভারেই করলেন পাঁচটি। ১১ বলের দীর্ঘ ওভারের সাক্ষী থাকলো গোটা ইডেন (LSG Beats KKR)। এর আগে এই ১১ বলে আইপিএল এর ইতিহাসে দীর্ঘতম ওভারের রেকর্ড রয়েছে মহম্মদ সিরাজ এবং তুষার দেশপান্ডের। ২০২৩ সালে এই লখনৌয়ের বিরুদ্ধেই ১১ বলের ওভার করেছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের পেসার তুষার। ওই বছরই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে আরসিবির জার্সিতে ১১ বলের দীর্ঘ ওভার করেছিলেন সিরাজ। মঙ্গলবার ইডেনে নাইটদের বিরুদ্ধে সেই রেকর্ড ছুঁলেন সার্দুল।
মঙ্গলবার নাইটদের বিরুদ্ধে ইডেনে অতিরিক্ত ২২ রান দিলেন লখনৌয়ের বোলাররা। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রায় তিন ওভার অতিরিক্ত পেয়েও ম্যাচ জেতাতে ব্যর্থ নাইট ব্যাটাররা। লখনৌয়ের হয়ে বঙ্গ পেসার আকাশদীপ এবং সার্দুল দু’টি করে উইকেট নিলেন। একটি করে উইকেট পেলেন দিগবেস, রবি বিষ্ণোই ও আভেশ খান। ৫ ম্যাচে দু’টোয় জিতে পয়েন্ট টেবিলে ৬ নম্বরে রইল কেকেআর। সেখানে পাঁচ ম্যাচে তিনটেয় জিতে ৪ নম্বরে উঠে এলো লখনৌ।