ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: জামশেদপুরকে ‘টাটা’ করে টানা তৃতীয়বার আইএসএল ফাইনালে (ISL Final) মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সোমবার যুবভারতীতে আইএসএল-এ জামশেদপুরের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের সেকেন্ড লেগ মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কাছে ছিল মরণ-বাঁচন লড়াই। প্রথম লেগের ম্যাচে ১-২ গোলে হেরে যাওয়ায় ফাইনালে পৌঁছতে দুই গোলের ব্যবধানে জিততেই হতো মোহনবাগানকে।
ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে সবুজ-মেরুণ ফুটবলারদের একটাই লক্ষ্য ছিল আক্রমণ আর আক্রমণ। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজা থেকে শেষ শেষ পর্যন্ত সেই কাজটাই করে ফাইনালে (ISL Final) ওঠার হ্যাটট্রিক করে ফেলল হোসে মোলিনার দল। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জামশেদপুরকে ২-০ গোলে হারালো মোহনবাগান। পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলটি করেন জেসন কামিংস। এবং ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে অবিশ্বাস্য ও আন্তর্জাতিক মানের গোলে মোহনবাগানের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে দেন আপুইয়া।

ম্যাচের শুরু থেকেই যেমন আক্রমণে ঝড় তুলল মোহনবাগান, উল্টোদিকে গোটা ম্যাচে ১১ জন মিলে রক্ষণ সামলে গেল জামশেদপুর। গোটা ম্যাচে হাতে গুনে দুই থেকে তিনবার আক্রমণে উঠে সবুজ বেলুন বক্সে ঢুকতে দেখা গেল জামশেদপুরকে। লিড ধরে রাখতে এদিন সারা ম্যাচে গোটা দলকে দিয়ে রক্ষণ করিয়ে গেলেন কোচ খালিদ জামিল (ISL Final)। এদিন মনে হয় দলের ফুটবলারদের খালিদ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যেন কেউ হাফ লাইন অতিক্রম না করে। করলে তা হবে ফৌজদারি অপরাধ!’ সেই নির্দেশ পালন করে গোটা ম্যাচে ‘কুৎসিত’ ফুটবল খেললো জামশেদপুর। তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল ৯০ মিনিট যাতে প্রতিপক্ষ গোল করতে না পারে। কিন্তু সারা ম্যাচে ডিফেন্স করে যে জেতা যায় না, তা মনে হয় ভুলে গিয়েছিলেন কোচ খালিদ জামিল সহ গোটা জামশেদপুর দল।
মায়াবী রাত ফিরল যুবভারতীতে (ISL Final)
একে তো প্রিয় দলের ফাইনালে ওঠার লড়াই। তার উপর প্রথম লেগের ম্যাচে যেভাবে জামশেদপুরের মাঠে মোহনবাগান সমর্থকদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার বদলা নিতে এদিন যুবভারতীকে ভিড় জমিয়েছিলেন ৫৮ হাজারেরও বেশি সবুজ-মেরুন সমর্থক। এদিন শুরু থেকেই কামিংস, লিস্টেন কোলাসো, ম্যাকলারেন, আশিস রাই, আশিক কুরেনিয়ানরা আক্রমণে ঝড় তুললেও মোহনবাগানকে প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হলো ৫১ মিনিট। প্রথমার্ধে একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েও মিস করলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। তার মধ্যে একাই তিন থেকে চারটি সহজ সুযোগ মিস করলেন কামিংস। ১৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট নিলেও বল গোলে রাখতে পারেননি অস্ট্রেলিয় তারকা ফুটবলার।

পরের মিনিটে আরও একটি সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন কামিংস। কিন্তু এবারও বাইরে মারেন। ১৮ মিনিটে আশিষ রাইয়ের গোলমুখী জোড়ালো শট কোনক্রমে বাঁচিয়ে দেন জামশেদপুরের গোলরক্ষক অ্যালবিনো গোমেস। প্রথমার্ধে প্রায় একা হাতেই দুর্গ অক্ষত রাখেন গোমেস (ISL Final)। কখনও গোমেস মোহনবাগানের একাধিক আক্রমণ রুখে দিলেন, আবার কখনও জামশেদপুরের রক্ষণভাগের ফুটবলাররা গোল লাইন থেকে দলের পতন আটকালেন। গোটা ম্যাচে যেমন একতরফাভাবে আক্রমণ করে গেল মোহনবাগান, তেমনি নষ্টও করলো একের পর এক সহজ গোলের সুযোগ। নাহলে প্রথমার্ধেই অন্তত তিন গোলে এগিয়ে যেতে পারত মোহনবাগান। কিন্তু একাধিক সহজ সুযোগ হেলায় হারিয়ে প্রথমার্ধে গোলশূন্যভাবেই শেষ করে মোহনবাগান।
শেষ মুহূর্তে আপুইয়ার বিশ্বমানের গোল (ISL Final)
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল জামশেদপুর। জাভি হার্নান্দেজের মাটি ঘেঁষা জোরালো শট অল্পের জন্য সবুজ-মেরুন পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৫১ মিনিটে অবশেষে গোলের দরজা খোলে মোহনবাগান। বক্সের মধ্যে জামশেদপুরের বাঙালি ফুটবলার প্রণয় হালদার হ্যান্ডবল করলি পেনাল্টি দিতে ভুল করেননি রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে সমতা ফেরান কামিংস। কিন্তু তারপরও একাধিক আক্রমণ করেও জামশেদপুরের রক্ষণ ভেদ করতে পারছিলেন না কামিংস, ম্যাকলারেনরা (ISL Final)।
৬৮ মিনিটে আশিককে তুলে মনবীর সিং এবং ৮০ মিনিটে কামিংসকে তুলে দিমিত্রি পেত্রাতোসকে নামান সবুজ-মেরুণ কোচ। ম্যাচ যখন এক্সট্রা টাইম বা টাইব্রেকারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছিল যুবভারতীর গ্যালারি, তখনই কাহানি মে টুইস্ট। ম্যাচের অতিরিক্ত সময় (৯৩ মিনিটে) বক্সের বাইরে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুরন্ত শটে বিশ্বমানের গোল করে মোহনবাগানের টানা তৃতীয়বার ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে দেন আপুইয়া। এইগুলোর ক্ষেত্রেও কাঠগড়ায় সেই প্রণয়। তাঁর মিস থেকে বল ধরেই ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা আপনি যাকে বাড়ান অনিরুদ্ধ থাপা। সেখান থেকে জোরালো শটে গোল করে যান বাগানের মিজো মিডফিল্ডার।

আপুইয়ার গোলের পরই যুবভারতীর গ্যালারিতে শুরু হয়ে যায় সেলিব্রেশন। সবুজ-মেরুন আবিরে রঙিন যুবভারতীর গ্যালারির গগনচুম্বি চিৎকার এবং পটাকার আওয়াজে তখন কান পাতা দায়। জামশেদপুর থেকে সবুজ-মেরুন সমর্থকরা যে আঘাত নিয়ে ফিরেছিলেন, সোমবার যুবভারতীতে সেই সমস্ত শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণা মিটিয়ে দিলেন আপুইয়া। তাই ম্যাচ শেষে আপুইয়ার গোলের প্রশংসা করার পাশাপাশি এই জয় সমর্থকদের উৎসর্গ করে গেলেন অ্যালবার্টো রড্রিগেজ, অধীনায়ক শুভাশিস বোস।
আরও পড়ুন: MS Dhoni: ‘২০২৩-এই নেওয়া উচিৎ ছিল অবসর’, ধোনিকে বেনজির আক্রমণ প্রাক্তন ব্যাটারের
রাত পোহালেই মঙ্গলবার ইডেনে কেকেআরের বিরুদ্ধে ম্যাচ (ISL Final)। তবুও ইডেনে প্রাকটিস সেরে যুবভারতীতে মোহনবাগানের ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন লখনৌ সুপার জায়ান্টের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ। মোহনবাগানের জয়ের পর তাঁকেও সেলিব্রেশন করতে দেখা গেল। প্রিয় দলের খেলা দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন বাগানের ‘সবুজ তোতা’ হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। প্রিয় দলের জয়ে বিজয় খুশি সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান তারকা। মোহনবাগান এবার চ্যাম্পিয়ন হবে বলেও জানিয়ে গেলেন তিনি।

টানা দ্বিতীয়বারের জন্য লিগ শিল্ড আগেই জেতা হয়ে গিয়েছিল (ISL Final)। এবার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে আর মাত্র এক ধাপ দূরে দাঁড়িয়ে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। আগামী ১২ তারিখ শনিবার এই যুবভারতীতে নিজেদের ঘরের মাঠেই সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে খেতাব জয়ের লড়াইয়ে নামবেন শুভাশিস বোস, লিস্টন কোলাসোরা। গতবার লিগ শিল্ড জিতলেও খেতাব জেতা হয়নি। তাই এবার জোড়া খেতাব জয়ের সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছে না সবুজ-মেরুন ফুটবলার, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সমর্থকরাও।