ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : বেঙ্গালুরু এফসিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant)। লিগ শিল্ডের সঙ্গে এক মরশুমে আইএসএল খেতাবও জিতল মোহনবাগান। টানা তিনবার ফাইনালে উঠে দু’বার চ্যাম্পিয়ন। ২০২২-২৩ মরশুমেও ফাইনালে এই বেঙ্গালুরুকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। মুম্বই সিটি এফসি’র পর মোহনবাগান হল আইএসএলে দ্বিতীয় দল, যারা একই মরশুমে লিগ শিল্ড ও আইএসএল- জোড়া খেতাব জিতল। সেইসঙ্গে ইতিহাসের পাতাতেও নাম লিখিয়ে ফেলল মোহনবাগান। আইএসএলের ইতিহাসে মোহনবাগানই (Mohun Bagan Super Giant) হল প্রথম দল যারা ঘরের মাঠে আইএসএল খেতাব জিতল। কলকাতার কোচ হিসেবে দু’বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হলেন হোসে মোলিনা। ২০১৬ সালে মোলিনার কোচিংয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এটিকে। এবার মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকেও খেতাব জেতালেন।
প্রথমার্ধের খেলা (Mohun Bagan Super Giant)
শনিবার যুবভারতীতে ফাইনালে প্রয়ি দলের ট্রফি জয় দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রায় ৬০ সবুজ-মেরুন সমর্থক। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও জমাট বাঁধছিল না মোহনবাগানের (Mohun Bagan Super Giant) খেলা। একাধিক গোলের সুযোগ মিস এবং মিস পাসে কিছুটা ছন্নছাড়া লাগছিল শুভাশিসদের। করেন জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস। ৯ মিনিটের মাথায় গোল করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন জেসন কামিংস। জেমি ম্যাকলারেন গোল লক্ষ্য করে শট নিলে গুরপ্রীত সেই বল বাঁচালেও বল পেয়ে যান কামিংস।কিন্তু গোল করতে পারেননি। উল্টে আক্রমণে চাপ বাড়ায় বেঙ্গালুরু। তাতে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল বাগান রক্ষণ। কিন্তু কোনও দলই গোল করতে না পারায় প্রথমার্ধের খেলা গোল শূণ্য ভাবেই শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা (Mohun Bagan Super Giant)
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ৪৯ মিনিটে মোহনবাগানের অ্যালবার্টো রড্রিগেজের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। ডানদিক থেকে বেঙ্গালুরুর রায়ান উইলিয়ামসের নেওয়া ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন সবুজ-মেরুন (Mohun Bagan Super Giant) ডিফেন্ডার রড্রিগেজ। এরপরই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মোহনবাগান। ৬১ মিনিটে সবুজ-মেরুন কোচ মোলিনার জোড়া পরিবর্তন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অনিরুদ্ধ থাপার জায়গায় সামাদ এবং লিস্টন কোলাসোরা জায়গায় আশিক কুরেনিয়ান নামতেই মোহনবাগানের আক্রমণে গতি আসে। এরপর আর গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি মোহনবাগানকে। ৬৯ মিনিটে কামিংসের ক্রস থেকে বল পেয়ে শট নেন জেমি ম্যাকলারেন। সেই বল বক্সের মধ্যে বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার চিংলেনসানার হাতে লাগলে পেনাল্টি দিতে ভুল করেননি রেফারি। ৭২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে মোহনবাগানকে সমতায় ফেরান কামিংস।
এক্সট্রা টাইম
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ফলাফল ১-১ থাকায় ম্যাচ গড়ায় এক্সট্রা টাইমে। অতিরিক্ত সময়ের খেলার শুরুতেই অধিনায়ক শুভাশিস বোসের জায়গায় দীপক টাংরিকে নামান মোলিনা। তখন মোহনবাগান যেন চ্যাম্পিয়নের গন্ধ পেয়ে গিয়েছে। ৯৫ মিনিটে মোহনবাগানের হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ গোলটি করেন জেমি ম্যাকলারেন। গ্ৰেগ স্টুয়ার্টের বাড়ানো বল থেকে গোল করে যান সবুজ-মেরুনের অজি তারকা। এদিন সারা ম্যাচে যেভাবে একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছেন, তারই যেন ‘শাপমোচন’ করলেন অজি তারকা। আর তাতেই আবারও সবুজ-মেরুন ডেরায় কাপ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ নিশ্চিত হয়ে যায় বেঙ্গালুরুর। দু’বছর আগের মতো এবারও খালি হাতেই ফিরতে হলো সুনীল ছেত্রীকে।
সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সেলিব্রেশন
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজাতেই ফেটে পড়ল যুবভারতীর গ্যালারি। যুবভারতীর আকাশে আসমানগোলার আলপোনার সঙ্গে গগনচুম্বী চিৎকার। গ্যালারিতে উড়ছে সবুজ-মেরুন আবির। মাঠে মোলিনা, কামিংস, জেমি, দিমি, শুভাশিসদের ট্রফি জয়ের সেলিব্রেশনের সঙ্গে গ্যালারিতেও সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সেলিব্রেশনে বাঁধ ভাঙল। মাঠে মোহন,বাগান সচিব দেবাশিস দত্ত মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অন্যতম কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কারাও সামিল হলেন সেলিব্রেশনে। ট্রফিও শুভাশিসদের হাতে তুলে দিলেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। ট্রফি নিয়েও সবুজ-মেরুণ ফুটবলারদের আরও একপ্রস্থ সেলিব্রেশন চলল। যুবভারতীতে তখন সবুজ-মেরুণ উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফেরার কথা বেমালুম ভুলে সেলিব্রেশন চালিয়ে গেলেন বাঁধনহারা সবুজ-মেরুন জনতা।
পুরস্কার
প্রতিযোগিতার শেষে একাধিক পুরস্কারও পেলেন বিভিন্ন দলের একাধিক ফুটবলার ও বিভিন্ন ক্লাব। ঘরোয়া ফুটবলারদের নিয়ে সেরা কাজের জন্য পুরস্কার পেলে জামশেদপুর এফসি। যুব ফুটবলারদের নিয়ে সেরা কাজের পুরস্কারও জিতে নিয়েছে জামশেদপুর। গোটা টুর্নামেন্টে ১৫ ম্যাচে একটিও গোল না খেয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করা মোহনবাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথ পেলেন গোল্ডেন গ্লাভস। চলতি মরশুমে সর্বাধিক ২৩ গোল করে গোল্ডেন বুট পেলে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের আলাদিন আজেরাই। আইএসএলের ইতিহাসে এক মরশুমে এত গোল আর কারও নেই। ২৩টি গোল করার পাশাপাশি ৭ গোল করিয়েছেন মরক্কোর এই ফুটবলার। মোট ৩০টি গোলে অবদান থাকায় সোনার বলো পেয়েছেন আজেরাই। সেরা নজরকাড়া ফুটবলার হলেন এফসি গোয়ার ব্রাইসন ফের্নান্ডেস।
‘খেতাব নয় আমরা জোড়া খেতাব জিতেছি’
দলের এই ঐতিহাসিক জয় উচ্ছ্বসিত মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অন্যতম কর্ণধার সঞ্জীবব গোয়েঙ্কা। তিনি বলেন, ‘খেতাব নয় আমরা জোড়া খেতাব জিতেছি। এর থেকে সুখকর মুহূর্ত আর কিছু হতে পারে না। এই জয় সকলের।’
মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত জানিয়ে দিলেন, ‘যেভাবে আমাদের দল প্রথম থেকে খেলেছে তাতে আমরা আত্মবিশ্বাসের দিলাম যে এবার আমরাই খেতাব জিতবো। টানা তিন বছর ফাইনালে ওঠে দু’বার চ্যাম্পিয়ন এবং দু’বার লিগ শিল্ড খেতাব জিতলাম। আমরা স্বপ্নের সফরে রয়েছি। সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে আমার সব কথা হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই ক্লাবে দুই ট্রফি নিয়ে আসা হবে। দিনক্ষণ রবিবার ঘোষণা করে দেবো।’
গোল করতে পেরে উচ্ছ্বসিত জেমি ম্যাকলারেন। জানিয়ে দিলেন, ‘এক মরশুমে জোড়া খেতাব জিততে পেরে দারুণ খুশি। ফাইনালে গোল করতে পারাটা খুবই স্পেশাল।এটা দলের সমস্ত ফুটবলার, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ এবং সমর্থকদের মিলিত সাফল্য।’ দলগত ঐক্যেই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়ে দিলেন সবুজ-মেরুন অধিনায়ক শুভাশিস বোস। জোড়া খেতাব জয়ের সেলিব্রেশন শেষ করে খুব শীঘ্রই তাঁরা সুপার কাপের জন্য অনুশীলন শুরু করে দেবেন বলেও জানিয়ে দিলেন সবুজ-মেরুন অধিনায়ক।
মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা
আইএসএল কাপ জেতার পর মোহনবাগানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘বাংলার দল মোহনবাগানের জন্য আমরা গর্বিত। আইএসএলের চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার জন্য তোমাদের শুভেচ্ছা। তোমাদের এই দুর্দান্ত জয়কে কুর্নিশ। আমরা তোমাদের নিয়ে গর্বিত।’