ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর দেশে যখন তীব্র প্রতিক্রিয়া, সেই আবহে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও (যদিও সেই ভিডিও-এর সত্যতা যাচাই করেনি ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল) পোস্ট করে বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এলেন ভোজপুরি লোকসঙ্গীত শিল্পী নেহা সিংহ রাঠৌর(Neha Singh Rathore)। তাঁর বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্টের অভিযোগে লখনউয়ের হজরতগঞ্জ থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।নেহার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নিশানা করে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন, যার ফলে সমাজে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে পারে। তাঁর পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নিরাপত্তা ব্যর্থতার প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে।
নেহার বিতর্কিত ভিডিও ও অভিযোগ (Neha Singh Rathore)
২৫ এপ্রিল সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও (এই ভিডিও-এর সত্যতা যাচাই করেনি ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল) পোস্ট করেন নেহা(Neha Singh Rathore)। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘(রাশিয়া-ইউক্রেন) যুদ্ধ থামাতে সক্ষম প্রধানমন্ত্রী নিজের দেশে সন্ত্রাসী হামলা রুখতে পারছেন না।’’ একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ইস্যুগুলি এখন ব্রাত্য, জাতীয়তাবাদ ও হিন্দু-মুসলিম রাজনীতিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী (Narendra Modi) পহেলগাঁও হামলাকে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করবেন, যেমন ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর করেছিলেন(Neha Singh Rathore)।এই মন্তব্য ঘিরেই তৈরি হয় প্রবল বিতর্ক। অভয়প্রতাপ সিংহ নামে এক ব্যক্তি হজরতগঞ্জ থানায় এফআইআর দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, নেহার পোস্ট জাতীয় অখণ্ডতার পরিপন্থী এবং ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যপ্রসূত। নেহার ভিডিও পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রশংসা পায় এবং ভারতের বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যবহার হয়, এমন তথ্যও এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলা ও আইনি ধারা(Neha Singh Rathore)
নেহার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত ধারা, জনশান্তি বিঘ্নিত করার অভিযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে(Neha Singh Rathore)। অভিযোগ অনুযায়ী, নেহার বক্তব্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে পারে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার শামিল।

কে এই নেহা সিংহ রাঠৌর?(Neha Singh Rathore)
বিহারের কৈমুর জেলার বাসিন্দা নেহা সিংহ রাঠৌর জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৭ সালে(Neha Singh Rathore)। পড়াশোনা করেছেন কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালে তিনি ভোজপুরি লোকসঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন। সামাজিক সমস্যার প্রতি তাঁর সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে তাঁর গানে— যেখানে উঠে আসে বেকারত্ব, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পরিবেশ দূষণের মতো ইস্যু।তিনি প্রথাগত ভোজপুরি গানের ধারা থেকে আলাদা এক ঘরানার সৃষ্টিতে বিশ্বাসী। ভিখারি ঠাকুর ও মহেন্দ্র মিসির মতো কিংবদন্তি ভোজপুরি কবিদের অনুপ্রেরণায় তিনি সামাজিক বক্তব্যধর্মী গান রচনা করেন।

আরও পড়ুন: Nawaz Sharif On Pahalgam : ক্ষুব্ধ ভারতকে শান্ত করতে ভাই শাহবাজকে কী পরামর্শ দিলেন নওয়াজ শরীফ?
রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা(Neha Singh Rathore)
২০২০ সালে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন(Neha Singh Rathore)। এরপর ‘বিহার মে কা বা’, ‘ইউপি মে কা বা’, ‘এমপি মে কা বা’ ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক গানের মাধ্যমে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করেন। এই গানগুলির মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক এবং সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, যা তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়, কিন্তু একই সঙ্গে নানা বিতর্কেও জড়িয়ে ফেলে।

অতীতের বিতর্ক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ(Neha Singh Rathore)
এর আগেও নেহা একাধিকবার আইনি ঝামেলায় জড়িয়েছেন(Neha Singh Rathore)। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে কটাক্ষ করে গাওয়া ‘ইউপি মে কা বা-২’ গানের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া, মধ্যপ্রদেশে এক দলিতের উপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে পোস্ট করায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল।নেহার সাম্প্রতিক মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক বিতর্কই সৃষ্টি করেনি, জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রশ্নও তুলেছে। সমালোচকরা মনে করছেন, যখন সারা দেশ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে চায়, তখন এমন মন্তব্য উস্কানিমূলক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। অন্যদিকে, নেহার সমর্থকরা বলছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারে তিনি তাঁর বক্তব্য রেখেছেন এবং সরকারের সমালোচনা অপরাধ নয়।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা বনাম জাতীয় নিরাপত্তা(Neha Singh Rathore)
নেহা সিংহ রাঠৌরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা ভারতের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বনাম জাতীয় নিরাপত্তার বিতর্ককে নতুন করে উস্কে দিয়েছে(Neha Singh Rathore)। এখন দেখার বিষয়, আদালত এই মামলায় কী অবস্থান নেয় এবং সামগ্রিকভাবে এটি দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কী প্রভাব ফেলে।