ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: উৎপল দত্ত ‘ফেরারী ফৌজ’ (Ferari Fauj) নাটকটি লিখছেন ১৯৬১ সালে। ছয়ের দশকে স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনের দশকে পূর্ববঙ্গে সশস্ত্র বিপ্লবের কার্যক্রম নিয়ে ‘ফেরারী ফৌজ’ নাটকটি রচনা করেন নাট্যকার উৎপল দত্ত। নাটকটি পুনর্নির্মাণ করেছে ‘নৈহাটি নাট্য সমন্বয়’। নাটকের নির্দেশক দেবাশিস রায়। এই নাটকের ৫০ তম অভিনয় হয়ে গেল গতকাল কলকাতা অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের নাট্য প্রেক্ষাগৃহে।
বিপ্লবী আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত (Ferari Fauj)
১৯৩২ সালে ভারতীয় স্বাধীনতার বিপ্লবী আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত উৎপল দত্ত ‘ফেরারী ফৌজ’ (Ferari Fauj)। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ায় পূর্ববঙ্গের কয়েকজন দুঃসাহসী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীর লড়াই নিয়ে এই নাটক লেখা হয়েছিল। কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতার নামে এই নাটকের নামকরণ। এই নাটকের জন্যই উৎপল দত্ত শ্রেষ্ঠ নাটককার হিসেবে ১৯৬৩ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। সেই বিখ্যাত নাটক মঞ্চস্থ করার সাহস দেখিয়েছে ‘নৈহাটি নাট্য সমন্বয়’, নির্দেশক দেবাশিস ও সকল অভিনেতারা।
মঞ্চায়নের শুরুর থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে (Ferari Fauj)
এই সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন নাটকের পরিবেশনা প্রশংসার দাবি রাখে। এই নাটকের মঞ্চায়নের শুরুর থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ‘নৈহাটি নাট্য সমন্বয়’ (Ferari Fauj)। নাটকের নির্দেশক দেবাশিস এই সময়ের বাংলা থিয়েটারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন পরিচালক। এই নাটক নির্মানেও দক্ষতা তিনি দেখিয়েছেন। নাটকের মঞ্চ আলো এবং সম্পাদনার কাজটিও সুচারুভাবে করেছেন দেবাশিস। মঞ্চ নির্মান করেছেন সন্দীপ বিশ্বাস। আলোক প্রক্ষেপণ করেছেন শুভঙ্কর দে। আবহ প্রক্ষেপণ করেছেন সমীর দে।
প্রশ্নের উত্তর এই নাটকের শেষে
নাটকটির পটভূমি ভুবনডাঙা। ম্যাজিস্ট্রেট উইলমাটকে খুন করে বিপ্লবী অশোক চট্টোপাধ্যায়। তারপর থেকে তিনি পলাতক, কিন্তু একদিন রাতের অন্ধকারে বাবা, মা, স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসে ধরা পড়ে যায় অশোক। পুলিসের নির্মম অত্যাচারে সে মুখ খোলেনা, তবুও তাঁকে বিশ্বাসঘাতক প্রমাণ করে পুলিশ। সকলে ভুল বোঝে তাঁকে। তাঁর আদর্শ, তাঁর গুরু শান্তি রায়ও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতক কে সেই প্রশ্নের উত্তর এই নাটকের শেষে।
আরও পড়ুন: Aamar Boss: রাজ্যসভায় ‘আমার বস’ এর প্রদর্শন! ব্যাপারটা কী? কবে দেখানো হবে?

‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’
বিপ্লবী অশোক চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকায় বুদ্ধদেব দাসের অভিনয় এককথায় অনবদ্য। চরিত্রের প্রতিটি ওঠা পড়াকে দুর্দ্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেতা বুদ্ধদেব। অশোকের যে অসহায়তা, একদিকে তাঁর পরিবারের প্রতি ভালোবাসা আরেকদিকে ব্রিটিশ শাসক তাঁকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই যে টানা পোড়েন এই রকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অশোকের শারীরিক এবং মানসিক যে অবস্থা তা অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বুদ্ধদেব। মৃত্যুর মুহূর্তে তাঁর ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ অভিব্যক্তি অসাধারণ। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক এই নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার। পেশাদার অভিনেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, প্রশংসিত। এই নাটকে তিনি কমেডির মধ্যে দিয়ে জ্যোতির্ময় লাহিড়ীর চরিত্রটিকে সুন্দর উপস্থাপন করেছেন।
ফেরারি ফৌজের সফল পুনর্নির্মাণ
ব্রিটিশের গুপ্তচর নীলমণির আড়ালে দেশপ্রেমী-বিপ্লবী শান্তিদার নাটকীয় আত্মপ্রকাশ দেবশঙ্করের দুর্দান্ত অভিনয়ে সবার মন কেড়েছে এই চরিত্র। পুলিশকর্তা হিতেন দাশগুপ্তর চরিত্রায়ণে পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্দান্ত অভিনয়। পাশাপাশি প্রকাশ মুকুটির চরিত্রে অনুরণ সেনগুপ্ত। কস্তুরী চক্রবর্তী (শচী), দেবযানী সিংহ দত্ত (রাধারানি), সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত (বঙ্গবাসী) আর ছোট্ট গোপার চরিত্রে ঐশিকী চক্রবর্তী, কুমুদের চরিত্রে ঋক দেব এবং ফাদার এবং ডাক্তারের চরিত্রে অরিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় এছাড়াও বাকি সব চরিত্র যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মঞ্চ জুড়ে অভিনেতাদের প্রতিটি সংলাপের সাথে যথাযথ অভিনয়, আলোর ব্যবহার, দৃশ্যায়ন— সব মিলিয়েই ফেরারি ফৌজের সফল পুনর্নির্মাণ করেছে নৈহাটি নাট্য সমন্বয়। সফল এর ৫০ তম অভিনয়।