ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁওয়ে মঙ্গলবার বিকেলে জঙ্গিদের নির্বিচারে গুলিচালনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জন নিরীহ পর্যটক ও এক স্থানীয় বাসিন্দা (Pahalgam Terror Attack)। আহত বহু। এই মর্মান্তিক ঘটনার অভিঘাত উপত্যকায় যেন নেমে এসেছে কালো ছায়া। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে, আর ভয় আর অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে পর্যটকদের মন।এই ঘটনার জেরে গত ৪৮ ঘণ্টায় বদলে গিয়েছে কাশ্মীর উপত্যকার চেনা দৃশ্য। বহু পর্যটক হোটেল ছেড়ে যাচ্ছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই। যাঁদের আগমনের কথা ছিল, তাঁদের অনেকেই বুকিং বাতিল করে দিচ্ছেন। যাদের জীবিকা নির্ভর করে এই পর্যটনের উপর, তাঁদের কাছে এই পরিণতি গভীর দুশ্চিন্তার।
পর্যটক ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ (Pahalgam Terror Attack)
তবে ভয় আর হাহাকারের মধ্যেও মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা (Pahalgam Terror Attack)। তাঁদের মধ্যে অন্যতম, পেশায় শালবিক্রেতা সাজাদ আহমেদ ভাট। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে আহত পর্যটকদের হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে সাজাদ বলেন, “পর্যটকেরা না এলে আমাদের ঘরে আলো জ্বলে না। ওদের ছাড়া আমাদের জীবন অসম্পূর্ণ।”সাজাদের মতো অনেকেই সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন পর্যটকদের সাহায্য করতে। তারা জল জুগিয়েছেন, যাঁরা হাঁটতে পারছিলেন না, তাঁদের কাঁধে তুলে নিয়ে গিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। এই মানবিকতা কাশ্মীরের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরে, যা সন্ত্রাসের ছায়াকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ (Pahalgam Terror Attack)
পহেলগাঁওয়ের বাসিন্দা আদিল হোসেনও সেদিন ছিলেন আক্রান্তদের পাশে (Pahalgam Terror Attack)। পেশায় ঘোড়াচালক আদিল জঙ্গিদের বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারান। তাঁকে নিয়ে আজ গর্ব করছে গোটা পহেলগাঁও। মঙ্গলবার রাত থেকেই রাস্তায় নামেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। মোমবাতি মিছিল করে তাঁরা প্রতিবাদ জানান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। স্লোগানে মুখরিত হয় শহর—“সন্ত্রাস নিপাত যাক”, “আমরা ভারতীয়”, “হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ”। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ(Omar Abdullah) এই মানবিক প্রতিবাদের প্রশংসা করে বলেন, “সাধারণ কাশ্মীরিরা সন্ত্রাসের পাশে নেই। তাঁদের শত্রু ভাববেন না।”

সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না (Pahalgam Terror Attack)
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনাগুলি কেবল উপত্যকার নিরাপত্তার ইঙ্গিত দেয় না, বরং সমাজের মনস্তত্ত্বও স্পষ্ট করে দেয় (Pahalgam Terror Attack)। কাশ্মীরবাসী আজ আর সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না। বরং তারা মানবিকতাকে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে যায় নিরস্ত্র সত্যের পক্ষে।পর্যটন, যা কাশ্মীরের অর্থনীতির এক অন্যতম স্তম্ভ, এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। প্রশাসনকে দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, পাশাপাশি দরকার কাশ্মীরিদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।এই অন্ধকার সময়ে সাজাদ, আদিলদের মতো মানুষেরা যেন আশার আলো। তাঁদের মানবতা আজ প্রমাণ করে দেয়—কাশ্মীর এখনও ভালোবাসার উপত্যকা। সন্ত্রাস যতই আঘাত হানুক, ভালোবাসা তাকে পিছু হঠাতেই বাধ্য করবে।