ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আবারও রক্তের ছাপ রেখে গেল জঙ্গিদের বর্বর হামলা (Pahalgam Terror Attack)। মঙ্গলবার দুপুরে অনন্তনাগ জেলার পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় গুলি চালায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। স্থানীয় সূত্র ও সেনাবাহিনীর তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে, হামলার টার্গেট ছিলেন সাধারণ পর্যটকরা। যারা ছুটি কাটাতে এসেছিলেন উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে, তাদেরই ঘিরে ধরে গুলি চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন। আহত বহু। নিহতদের মধ্যে রয়েছে একাধিক নারী ও শিশু।
কীভাবে আত্মপ্রকাশ টিআরএফের? (Pahalgam Terror Attack)
এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছড়ানোর লক্ষ্যে লশকর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন হিসেবে TRF-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে (Pahalgam Terror Attack)। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মতে, TRF-এর নাশকতামূলক কার্যকলাপের নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও লশকর-ই-তৈয়বা। TRF প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাশ্মীরের শান্তি বিঘ্নিত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে।
হামলার পরিকল্পনায় সইফুল্লা (Pahalgam Terror Attack)
সূত্র মারফত জানা গেছে, পহেলগাঁও হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সইফুল্লা খলিদ। বর্তমানে তিনি লশকর-ই-তৈয়বার ডেপুটি চিফ পদে রয়েছেন। তাঁর আরেক পরিচিত নাম সইফুল্লা কসুরি। তিনি কট্টর ভারতবিরোধী, এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত।

কাশ্মীর স্বাধীন করার হুমকি (Pahalgam Terror Attack)
তথ্য অনুযায়ী, হামলার প্রায় দুই মাস আগে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কঙ্গনপুরে পাক সেনার একটি ব্যাটালিয়নের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সইফুল্লাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় (Pahalgam Terror Attack)। সেখানে তিনি বক্তৃতায় ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি হুমকি দেন এবং বলেন, “২০২৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাশ্মীর স্বাধীন করব।” গোয়েন্দা সূত্রের মতে, এই বক্তৃতার পরই কাশ্মীরে হামলার প্রস্তুতি শুরু হয়।

আরও পড়ুন: Chinese Hydrogen Bomb : চিনের অ-পরমাণু হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা! বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা
জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ও অনুপ্রবেশ (Pahalgam Terror Attack)
পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ অঞ্চলের গভীর জঙ্গলে TRF ও লশকর যৌথভাবে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির আয়োজন করে (Pahalgam Terror Attack)। শতাধিক যুবক সেখানে অংশ নেয়। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, এই শিবিরেই ‘টার্গেট কিলিং’-এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং পহেলগাঁও হামলার জন্য কয়েকজনকে নির্বাচন করা হয়। প্রশিক্ষণের পর তারা সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে। প্রত্যেকের হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র, যার মধ্যে ছিল একে-৪৭, নাইট ভিশন ডিভাইস, কমিউনিকেশন গ্যাজেট ইত্যাদি।

হামলার দিন কী ঘটেছিল? (Pahalgam Terror Attack)
মঙ্গলবার দুপুরে বৈসরন উপত্যকায় কয়েকটি পর্যটক দল রিসর্ট ও আশেপাশের সবুজ উপত্যকায় ঘুরছিলেন (Pahalgam Terror Attack)। তখনই আচমকা পুলিশ ও সেনার পোশাক পরা ৪ থেকে ৬ জন জঙ্গি গুলি চালাতে শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জঙ্গিরা ধর্ম পরিচয় যাচাই করে বিশেষভাবে হিন্দু পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে ২০ জনের বেশি মানুষ নিথর হয়ে পড়েন। স্থানীয় এক গাইড জানায়, “সব কিছু এত দ্রুত ঘটল, বুঝতেই পারিনি। ওরা নাম জেনে জেনে গুলি চালাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, ওরা কারা, আমাদের নিরাপত্তারক্ষী না শত্রু — বোঝার উপায় ছিল না!”

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা (Pahalgam Terror Attack)
হামলার খবর পেয়েই সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) রাতেই দেশে ফেরেন (Pahalgam Terror Attack)। দিল্লি বিমানবন্দরে নেমে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (Dr. S. Jaishankar) ও বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) ফোন করে কাশ্মীরে দ্রুত পৌঁছনোর নির্দেশ দেন। অমিত শাহ ইতিমধ্যেই উপত্যকায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী ও উপরাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নিরাপত্তা বাহিনী চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে।একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, “এই জঘন্য হামলার জন্য যারা দায়ী, তাদের কঠিন মূল্য দিতে হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও শক্তিশালী হবে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া (Pahalgam Terror Attack)
পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump)। ফোনে মোদীর সঙ্গে কথা বলে তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে রয়েছে আমেরিকা। একই বার্তা এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকেও।
অতীতেও টিআরএফের ছায়া (Pahalgam Terror Attack)
২০২৩ সালের জুন মাসে রেইসি জেলায় পুণ্যার্থীদের বাসে হামলার নেপথ্যেও ছিল TRF (Pahalgam Terror Attack)। সেখানে মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে TRF-এর বিস্তার এবং পাকিস্তান থেকে এর সক্রিয় মদত নিয়েই উদ্বিগ্ন নিরাপত্তা মহল।পহেলগাঁও হামলা আবারও মনে করিয়ে দিল, কাশ্মীরের মাটিতে শান্তি এখনো অস্থির। TRF-এর মতো সংগঠন এবং পাকিস্তানপৃষ্ঠপোষক জঙ্গি নেতারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ছড়াতে। কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই হুমকি রোধ কঠিন। এখন দেখার, কীভাবে ভারত এই নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে।