ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চল জুড়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে ড্রোন প্রবেশের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে (Pak Drone Attack)। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীর থেকে শুরু করে গুজরাট পর্যন্ত অন্তত ২৬টি স্থানে সন্দেহজনক ড্রোনের গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে কিছু ড্রোনকে “সশস্ত্র” বা অস্ত্রধারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলি সম্ভাব্যভাবে বেসামরিক ও সামরিক উভয় লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম বলে জানানো হয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক্স হ্যান্ডেলে(Ministry of Defence)।
ড্রোনের গতিবিধির মানচিত্র(Pak Drone Attack)
এই ২৬টি স্থানের মধ্যে রয়েছে:
উত্তরে— বারামুলা, শ্রীনগর, অবন্তীপোরা, নগরোটা
মধ্য ও পশ্চিম সীমান্তে— জম্মু, ফিরোজপুর, পাঠানকোট, ফাজিলকা, লালগড় জাট্টা
পশ্চিম রাজস্থান ও গুজরাটে— জয়সালমের, বারোমার, ভুজ, কুয়ারবেট, ও লক্ষীনালা।
এইসব অঞ্চলগুলি মূলত আন্তর্জাতিক সীমান্ত (IB) ও নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC)-র কাছাকাছি, যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তাজনিত উত্তেজনা রয়েছে। এখন সেই উত্তেজনার নতুন উপকরণ হয়ে উঠেছে ড্রোন(Pak Drone Attack)।
ফিরোজপুরে সশস্ত্র ড্রোন হামলায় আক্রান্ত সাধারণ নাগরিক (Pak Drone Attack)
সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলায়। সেখানকার একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি সশস্ত্র ড্রোন হঠাৎ করে হামলা চালায়। বিস্ফোরণে একটি স্থানীয় পরিবারের কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হন। আহতদের চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাটি ঘিরে ফেলে ও সম্পূর্ণভাবে শ্ত্রু মুক্ত করে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং হামলার ধরন ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে— এটি রিমোট কন্ট্রোলড ছিল নাকি পূর্বনির্ধারিত রুটে পাঠানো হয়েছিল।

সেনার সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পাল্টা ব্যবস্থা(Pak Drone Attack)
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী চূড়ান্ত সতর্কাবস্থায় রয়েছে (Pak Drone Attack)। প্রত্যেকটি সন্দেহজনক ড্রোনকে নজরে রাখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অংশে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছে এবং যেকোনো আকাশপথের হুমকি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”সূত্র অনুযায়ী, সেনাবাহিনী বর্তমানে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পদ্ধতি যেমন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার, লেজার গন, এবং ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার ব্যবহার করে এসব ড্রোন প্রতিরোধ করছে।

সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আতঙ্ক, নাগরিকদের জন্য জারি সতর্কতা(Pak Drone Attack)
প্রশাসনের তরফে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে জনসাধারণকে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে(Pak Drone Attack)। বিশেষত রাতে অপ্রয়োজনে বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং যেকোনো সন্দেহজনক বস্তুর খবর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনসাধারণের জন্য জারি করা নির্দেশাবলি:
- প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না বেরোনো।
- অচেনা ড্রোন বা আকাশে উড়ন্ত বস্তুর গতিবিধি লক্ষ্য করলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশকে জানানো।
- সামাজিক মাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানো থেকে বিরত থাকা।
- কোনও সন্দেহজনক প্যাকেট বা বস্তুর সংস্পর্শে না যাওয়া।
পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ(Pak Drone Attack)
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এই ধরনের ধারাবাহিক ড্রোন অনুপ্রবেশ পাকিস্তানের তরফে এক নতুন কৌশলগত প্রচেষ্টা, যার উদ্দেশ্য সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করা এবং ভারতের অভ্যন্তরে গোপন হামলা চালানো। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক বা নকল মুদ্রা পাচারের প্রবণতা গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে প্রস্তুতি(Pak Drone Attack)
সরকার ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সীমান্তবর্তী সন্ত্রাস, মদতপ্রাপ্ত ড্রোন আক্রমণ ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে আরও কড়া কূটনৈতিক বার্তা পাকিস্তানকে দেওয়া হতে পারে (Pak Drone Attack)। ভারত জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিমান নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একটি ডোজিয়ার প্রস্তুত করছে বলেও জানা গেছে।ড্রোন প্রযুক্তি এখন কেবলমাত্র নজরদারির সীমায় সীমাবদ্ধ নেই, এটি হয়ে উঠেছে এক নতুন প্রজন্মের যুদ্ধাস্ত্র। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সশস্ত্র ড্রোনের ব্যবহার কেবল নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এক গভীর উদ্বেগের বিষয়। ভারতের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সতর্কতা ও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ প্রশংসনীয় হলেও, এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন আরও সমন্বিত, প্রযুক্তিনির্ভর ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ।