ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সম্প্রতি, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ফের উত্তেজনার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) জারি করা এক বিবৃতিকে কেন্দ্র করে (Pakistan After Pahalgam)। এই বিবৃতি শুধু ভারতের বিরুদ্ধে সরব নয়, বরং একাধিক কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপেরও ঘোষণা করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতাকে বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
পাকিস্তানের অভিযোগ (Pakistan After Pahalgam)
পাকিস্তান তাদের বিবৃতিতে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে(Pakistan After Pahalgam)। বলা হয়েছে, কাশ্মীর একটি অমীমাংসিত বিরোধ, যা রাষ্ট্রপুঞ্জের একাধিক প্রস্তাবে স্বীকৃত। পাকিস্তানের দাবি, কাশ্মীরের জনগণ ভারতের “রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন” মেনে নেয়নি, এবং সেখানে হিংসা ও অস্থিরতা ভারতের দমননীতি থেকেই উৎসারিত। সেই সঙ্গে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন, ওয়াকফ বিলের মতো পদক্ষেপেরও সমালোচনা করা হয়েছে।
দায় চাপানোর অভিযোগ
আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক এক জঙ্গি হানার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা নিয়ে ইসলামাবাদ সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছে(Pakistan After Pahalgam)। পাকিস্তানের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে “বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই” দায় চাপানো হচ্ছে, যা রাজনৈতিক চাপে ভারতের “হেরে যাওয়ার যুক্তি” ছাড়া কিছু নয়। উলটে তারা ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতের অভিযোগ তোলে এবং পাক জেলে বন্দি কুলভূষণ যাদবকে তার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে।

কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ(Pakistan After Pahalgam)
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো পাকিস্তান কর্তৃক ঘোষিত আট দফা কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ(Pakistan After Pahalgam)। এর মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত রাখার ভারতীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান, ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, ভারতীয়দের দেওয়া সার্ক ভিসা বাতিল, ভারতীয় সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার, ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা হ্রাস, ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, এবং সম্পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিতকরণ।

ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতি আরও জটিল(Pakistan After Pahalgam)
এই পদক্ষেপগুলি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে(Pakistan After Pahalgam)। সিন্ধু জলচুক্তি, যা ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা এতদিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যতই অবনতি হোক না কেন, অক্ষুণ্ণ থেকেছে। একে ‘জাতীয় স্বার্থ’ হিসেবে দেখিয়ে পাকিস্তান যদি এটিকে যুদ্ধের ঘোষণার সামিল বলে ধরে, তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।ভারতের তরফে এখনও কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া না এলেও, কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, এই বিবৃতি এবং পদক্ষেপগুলিকে ভারত ‘উস্কানিমূলক’ ও ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও জোরদার হতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনা(Pakistan After Pahalgam)
এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপুঞ্জ, বিশ্বব্যাঙ্ক, ও অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে(Pakistan After Pahalgam)। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথে ফিরে আসাই শ্রেয় হবে। নচেত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধির নামে নেওয়া এমন কঠোর পদক্ষেপগুলি গোটা অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
পাকিস্তানের ঘোষিত ৮টি সিদ্ধান্ত(Pakistan After Pahalgam)
১. সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ভারতের সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা একতরফাভাবে স্থগিত করা যায় না। পাকিস্তান (Shehbaz Sharif) হুঁশিয়ারি দিয়েছে—এই চুক্তি লঙ্ঘনের যে কোনও প্রচেষ্টাকে “যুদ্ধ” হিসাবে গণ্য করা হবে এবং পূর্ণ শক্তিতে জবাব দেওয়া হবে।
২. ভারতের “বেপরোয়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ” আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাব লঙ্ঘন করছে। ফলে পাকিস্তানও শিমলা চুক্তিসহ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার অধিকার সংরক্ষণ করে।
৩. পাকিস্তান ওয়াঘা সীমান্ত অবিলম্বে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের সব ধরনের আন্তঃসীমান্ত পরিবহণ বন্ধ থাকবে। যাঁরা বৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়েছেন, তাঁদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প (SVES)-এর অধীনে দেওয়া ভারতীয়দের সমস্ত ভিসা বাতিল করা হয়েছে(Pakistan After Pahalgam)। শুধুমাত্র শিখ পুণ্যার্থীদের ভিসা এই সিদ্ধান্তের বাইরে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থানকারী ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।
৫. ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ (persona non grata) ঘোষণা করে পাকিস্তান। তাঁদের এবং তাঁদের সহযোগীদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৬. ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনা হয়েছে।
৭. ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারতের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সব বিমান সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে(Pakistan After Pahalgam)।
৮. ভারতের সঙ্গে সমস্ত ধরনের বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। অন্য কোনও দেশের পণ্যও পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতে বা ভারত থেকে অন্য দেশে যেতে পারবে না।