ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কাশ্মীর সীমান্তে দীর্ঘদিন পর সংঘর্ষবিরতি কার্যকর হলেও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি যে স্থিতিশীল নয়, তা ফের স্পষ্ট হল বালোচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ার সাম্প্রতিক ঘটনার মাধ্যমে(Pakistan Army Vs TTP and BLA)। সোমবার থেকে এই দুই প্রদেশে একের পর এক সেনা অভিযান চালিয়ে মোট ১২ জন বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান সেনা। এই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন পাক সেনার দুই জওয়ানও।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কী জানাচ্ছে? (Pakistan Army Vs TTP and BLA)
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা আইএসপিআরের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এক সরকারি বিবৃতিতে জানান, বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA) এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP)-এর ঘাঁটিতে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। তাঁর দাবি, নিহত বিদ্রোহীরা ভারতের মদতপুষ্ট, যদিও এই অভিযোগের কোনও নিরপেক্ষ প্রমাণ এখনও পর্যন্ত সামনে আনা হয়নি।
সংঘর্ষের বিবরণ (Pakistan Army Vs TTP and BLA)
প্রথম সংঘর্ষটি ঘটে বালোচিস্তানের লাক্কি মারওয়াত জেলায়। এখানে পাকিস্তান সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোরের যৌথ অভিযানে ৭ জন বিএলএ বিদ্রোহী নিহত হয়। এরপর বালোচিস্তানেরই বান্নু জেলায় দ্বিতীয় সংঘর্ষে নিহত হয় আরও ২ বিএলএ সদস্য।সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় খাইবার পাখতুনখোয়ার উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার মির আলি এলাকায়। সেখানে টিটিপি জঙ্গিরা সেনার একটি কনভয় লক্ষ্য করে হামলা চালায়। পাল্টা গুলির লড়াইয়ে নিহত হয় ২ জন জঙ্গি এবং পাকিস্তান সেনার ২ জন জওয়ান।পরে সেনা ও কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট (CTD)-এর যৌথ বাহিনী এলাকাজুড়ে তল্লাশি অভিযান চালায়। সেনার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিদ্রোহীদের কাছ থেকে অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে।

বিদেশি মদতের অভিযোগ(Pakistan Army Vs TTP and BLA)
আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, BLA এবং TTP — উভয় সংগঠনের পিছনে বিদেশি মদত রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের দিকে অভিযোগের তির ছুঁড়ে বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্থিরতা বাড়াতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পরোক্ষ সহায়তা করছে।তবে ভারত সরকার বরাবরই এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নয়াদিল্লির বক্তব্য, পাকিস্তান তার অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে ব্যর্থ, সেই দায় ভারতের উপর চাপানো রাজনৈতিক কৌশলমাত্র।

প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য (Pakistan Army Vs TTP and BLA)
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানে তালিবান সরকার আসার পর থেকে পাকিস্তানে টিটিপির তৎপরতা বাড়ছে। পাশাপাশি বালোচিস্তানে বহু দশক ধরে স্বাধীনতার দাবিতে বিদ্রোহ চলছে। কাশ্মীর সীমান্তে শান্তির আবহ থাকলেও, বালোচিস্তান ও ওয়াজিরিস্তানে এই সহিংসতা পাকিস্তানের (Shehbaz Sharif) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কাঠামোর দুর্বলতাকেই তুলে ধরছে।
উপমহাদেশের নিরাপত্তায় উদ্বেগ(Pakistan Army Vs TTP and BLA)
সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, সম্পূর্ণ উপমহাদেশের নিরাপত্তার দিক থেকে উদ্বেগজনক। বিশেষ করে যখন দুই প্রতিবেশী দেশ সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছে, তখন পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে এমন উত্তেজনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। সেনার বক্তব্য অনুযায়ী, অভিযান চলবে। আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ধারণ করবে জঙ্গি সংগঠনগুলির প্রতিক্রিয়া এবং সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।