ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাল পাকিস্তান(Pakistan Iran Relation)। রবিবার ইসলামাবাদে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেকশিয়ান-এর উপস্থিতিতে এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন,
“শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য তেহরান যে পরমাণু কর্মসূচি চালাচ্ছে, তাতে ইসলামাবাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।”
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি হল।
বাণিজ্য থেকে নিরাপত্তা, ১২টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি (Pakistan Iran Relation)
পেজ়েকশিয়ানের পাকিস্তান সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে ১২টি চুক্তি সই হয়েছে(Pakistan Iran Relation)। এর মধ্যে রয়েছে—
- বাণিজ্য সম্প্রসারণ
- কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা
- গবেষণা ও উদ্ভাবন
- যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন
- সামুদ্রিক নিরাপত্তা
দুই দেশ মিলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রকের দাবি, নতুন চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দু’দেশের মধ্যে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কৃষিপণ্য বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটবে।
ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার মাঝেই সমঝোতা (Pakistan Iran Relation)
প্রসঙ্গত, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump) ইতিমধ্যেই তেহরানের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন(Pakistan Iran Relation)। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যের আড়ালে ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।
এই প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদ-তেহরান সমঝোতাকে কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, পাকিস্তান শুধুমাত্র চুক্তি করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং প্রকাশ্যে ইরানের পারমাণবিক পরিকল্পনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

আরও পড়ুন: Jair Bolsonaro : প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোকে গৃহবন্দি করল ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট!
সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও উত্তেজনা (Pakistan Iran Relation)
গত ১৩ জুন ইরানের একাধিক পরমাণুকেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটিতে বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইজরায়েল(Pakistan Iran Relation)। ওই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। ইরানের পক্ষ থেকে এই হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়। ইসলামাবাদও তখন তেল আভিভকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
এরপর ২২ জুন ভোরে মার্কিন ‘বি-২’ বোমারু বিমান ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায়। কিন্তু সে সময় পাকিস্তান ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
অতএব, বর্তমান সমর্থন ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইসলামাবাদ যে খোলাখুলি ইরানের পাশে দাঁড়াল, তা স্পষ্ট।
ইরানের দাবি বনাম বিতর্কিত স্বীকারোক্তি (Pakistan Iran Relation)
পেজেকশিয়ান সরকারের বক্তব্য— “আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ করছি। এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।”
কিন্তু বিতর্ক শুরু হয় ইরানের পার্লামেন্টের প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার আমি মোতাহারির মন্তব্য ঘিরে। গত মাসে তিনি প্রকাশ্যে বলেন—“আমাদের পরমাণু কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা।”
এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে। ওয়াশিংটন ও তেল আভিভ বরাবরই দাবি করছে, ইরানের গোপন লক্ষ্য অস্ত্র উন্নয়ন।

আরও পড়ুন: India US Tarif War : ট্রাম্পের শুল্ক হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই রাশিয়া থেকে তেল কেনায় অনড় ভারত!
পাকিস্তানের কৌশল, নতুন আঞ্চলিক জোটের ইঙ্গিত? (Pakistan Iran Relation)
কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, পাকিস্তানের এই অবস্থান দক্ষিণ এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে(Pakistan Iran Relation)। এর প্রভাব হতে পারে—
১. আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি: পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনের সন্দেহের তালিকায়। ইরানের পাশে দাঁড়ানোয় সেই অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
২. নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ: নিষেধাজ্ঞার জেরে ইরান বৈশ্বিক বাণিজ্যে সমস্যায়। পাকিস্তান সেই ফাঁক পূরণ করে তেল ও গ্যাস সরবরাহে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে।
৩. আঞ্চলিক জোটের উত্থান: ইরান-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা ভবিষ্যতে চীন, রাশিয়া-সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বড় আঞ্চলিক জোট গঠনের পথ খুলতে পারে।
ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া কী হবে? (Pakistan Iran Relation)
ট্রাম্প প্রশাসন এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছে—“যে কোনো দেশ যদি ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে, তবে তাকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
এর মানে, পাকিস্তানের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্যিক চাপ আসতে পারে।
ইসলামাবাদ-তেহরান সমঝোতা শুধু দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নয়, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতেও বড় বার্তা দিয়েছে। একদিকে যখন আমেরিকা ইরানকে একঘরে করতে চাইছে, তখন পাকিস্তান প্রকাশ্যে তাদের পাশে দাঁড়ানোয় মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্য পাল্টানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন নজর ওয়াশিংটনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।