ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষিতে সোমবার পাকিস্তান সেনা পরীক্ষা করল ‘ফতেহ্’ নামক স্বল্পপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (Pakistan Missile Test)। পাক সেনার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর (ISPR)-এর তরফে জানানো হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হয়েছে ‘ইন্ডাস’ (সিন্ধু) নামক চলতি যুদ্ধ মহড়ার অংশ হিসেবে। এই পরীক্ষাকে কৌশলগত মোতায়েনের প্রস্তুতি বলেই ব্যাখ্যা করেছে পাকিস্তান।
ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘আবদালি’ পরিক্ষা (Pakistan Missile Test)
এর আগে গত শনিবার, অর্থাৎ মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে, পাকিস্তান পরীক্ষা করেছিল ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘আবদালি’(Pakistan Missile Test)। আর এবার পরীক্ষিত হল ১২০ কিলোমিটার পাল্লার শর্ট রেঞ্জ ব্যালেস্টিক মিসাইল ‘ফতেহ্’। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় সেনার প্রতি একপ্রকার শক্তিপ্রদর্শন হিসেবেই এই সিরিজ় পরীক্ষায় নামছে পাকিস্তান। কারণ মাস দুয়েক আগেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ‘ফতেহ্’ মোতায়েনের প্রস্তুতির খবর মিলেছিল।
কৌশলগত শক্তি ও বার্তা(Pakistan Missile Test)
ISPR-এর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘উৎক্ষেপণের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেনাদের অপারেশনাল প্রস্তুতি যাচাই, এবং ক্ষেপণাস্ত্রটির নেভিগেশন দক্ষতা ও নির্ভুল লক্ষ্যভেদ ক্ষমতার প্রযুক্তিগত মানদণ্ড যাচাই করা(Pakistan Missile Test)।’’ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে অত্যাধুনিক দিক নির্দেশন প্রযুক্তি, যা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। এর ফলে প্রতিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা, বিশেষত ভারতের এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ সিস্টেমও এই ক্ষেপণাস্ত্রকে থামাতে অক্ষম হতে পারে বলে দাবি করছে ইসলামাবাদ। এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে পাকিস্তানের সরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যান্ড ডিফেন্স সলিউশন’ (GIDS)। এটিকে মোতায়েন করা যায় ট্রাকবাহিত ভ্রাম্যমাণ লঞ্চার থেকে, ফলে দ্রুত কৌশলগত অবস্থানে সরিয়ে আনা বা মোতায়েন করা সম্ভব, যা যেকোনও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিরাট সুবিধা দিতে পারে পাকিস্তান সেনাকে।

আরও পড়ুন:Jammu and Kashmir Terror Attack : কাশ্মীরের জেলগুলিতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা, সতর্কতা জারি করল সিআইএসএফ
ভারতের উদ্বেগ(Pakistan Missile Test)
পাকিস্তানের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ঘিরে ভারতের নিরাপত্তা মহলে উদ্বেগ বাড়ছে(Pakistan Missile Test)। সূত্রের খবর, এই ঘটনার দিকে কড়া নজর রাখছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (Ministry of Defence, Government of India), সেনা বাহিনী এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। বিশেষ করে এমন এক সময়, যখন পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্তে প্রতি রাতেই সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, তখন একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা একটি বড় বার্তা বহন করছে।ভারতের পক্ষ থেকে এ নিয়ে এখনও কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের কার্যকলাপ পাকিস্তানের কূটনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপ তৈরি করার একটি কৌশলও হতে পারে। ইসলামাবাদের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী, তারা শীঘ্রই রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চলেছে পহেলগাঁও কাণ্ড ঘিরে।

যুদ্ধপরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে(Pakistan Missile Test)
বর্তমান পরিস্থিতি শুধু সামরিক উত্তেজনা নয়, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক দিক থেকেও উদ্বেগজনক(Pakistan Missile Test)। সীমান্তের দু’পারে সেনা মোতায়েন, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। একে অপরের উপর দোষারোপের মধ্যেই সীমান্তের আবহ ক্রমশ যুদ্ধপরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে বলেই আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সংলাপ ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বদলে অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা যেন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে।