ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে (Pakistan Nuclear Weapons)। শঙ্কায় কাঁপছে ইজ়রায়েল, উদ্বিগ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ থেকে বিরত করতে একাধিকবার কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজ়রায়েল। এমনকি সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ইরানকে সরাসরি হামলার হুমকি দিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে উঠে এসেছে ইহুদি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের কার্যকলাপ ও তাদের পূর্ববর্তী গোপন অভিযানগুলির প্রসঙ্গ।
পরমাণু অস্ত্র নির্মাণকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার (Pakistan Nuclear Weapons)
১৯৮০-র দশকে পাকিস্তান দ্রুত পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার পথে এগোতে থাকে (Pakistan Nuclear Weapons)। ইসলামাবাদের কাহুতায় পাক বিজ্ঞানীরা গোপনে পরমাণু গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই কর্মসূচিতে চীন ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছিল পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে ভারতের কাছে পরাজয়ের পরই পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার দেয় ইসলামাবাদ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো ঘোষণা করেন, ‘‘প্রয়োজনে ঘাস-পাতা খেয়েও আমরা আণবিক বোমা বানাবো।’’
‘র’ ও মোসাদ যৌথভাবে পরিকল্পনা (Pakistan Nuclear Weapons)
পাকিস্তানের এই মনোভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলে ভারতের কূটনীতিতে (Pakistan Nuclear Weapons)। গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ রাওয়ালপিন্ডির কাহুতা কেন্দ্র থেকে চুলের নমুনা সংগ্রহ করে জানতে পারে, সেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ গবেষণা চলছে। এরই মাঝে ইজ়রায়েলও পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে দেখতে শুরু করে, কারণ ইসলামাবাদ কখনও ইহুদিদের রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং প্যালেস্টাইনের জোরালো সমর্থক হিসেবে বরাবরই তেল আভিভের বিরোধিতা করেছে। ১৯৮১ সালে ইরাকের ওসিরাক চুল্লিতে ইজ়রায়েলের ‘অপারেশন ব্যাবিলন’-এর সাফল্যের পর পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই রকম আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। ‘র’ ও মোসাদ যৌথভাবে পরিকল্পনা করে পাকিস্তানের কাহুতা চুল্লি ধ্বংসের। প্রাথমিক ভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সবুজ সংকেত দিলেও পরে সিআইএ’র মাধ্যমে ইসলামাবাদ এই পরিকল্পনার বিষয়ে আগাম জানতে পারে। ফলে কড়া সতর্কতা নেওয়ায় বাতিল হয়ে যায় সেই অপারেশন।

আরও পড়ুন: Iran America Conflict : ইরান-আমেরিকা উত্তেজনার মাঝেই সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব ট্রাম্পের
অ্যাড্রিয়ান লেভি-এর লেখায় (Pakistan Nuclear Weapons)
এই ঘটনা যদিও কখনও প্রকাশ্যে স্বীকৃত হয়নি, পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদনে সেই গোপন পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে (Pakistan Nuclear Weapons)। গার্ডিয়ানের সাংবাদিক অ্যাড্রিয়ান লেভি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন, ভারত-ইজ়রায়েলের যৌথ পরিকল্পনায় ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান গুজরাতের জামনগর থেকে ওড়ে কাশ্মীর ঘুরে কাহুতায় হামলা চালানোর ছক ছিল। ‘র’ এই পরিকল্পনায় ভূ-প্রাকৃতিক কৌশল ব্যবহার করে পাকিস্তানের রাডার ফাঁকি দেওয়ার ছক কষে।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস (Pakistan Nuclear Weapons)
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে শেষপর্যন্ত মোসাদ ও ভারতের পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও, ইরানের ক্ষেত্রে অনেকটাই সাফল্য পায় ইজ়রায়েলি গোয়েন্দারা। ২০২০ সালে তেহরানের শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী মহসেন ফাখরিজ়াদেহকে হত্যা করে তারা। যদিও এই হত্যাকাণ্ডের পরও ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসেনি।বর্তমানে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে বলে মনে করছে আমেরিকা ও ইজ়রায়েল। একদিকে ট্রাম্পের সরাসরি হামলার হুমকি, অন্যদিকে ইরানের অনড় অবস্থান, গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এক বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কার কাছে কত পরমাণু অস্ত্র? (Pakistan Nuclear Weapons)
এই পরমাণু উত্তেজনার আবহে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের দিকেও দৃষ্টি রাখছে বিশ্ব। ২০২৩ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে পাকিস্তানের হাতে ১৭০টি এবং ভারতের হাতে ১৭২টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে। যদিও পারমাণবিক আক্রমণের তিনটি মাধ্যম—স্থল, জল ও আকাশ—থেকে হামলা চালাতে সক্ষম হওয়ায় ‘নিউক্লিয়ার ট্রায়েড’ ক্ষমতায় ভারতেরই আধিপত্য রয়েছে।ইরান, পাকিস্তান ও ভারতের পরমাণু সমীকরণ এবং এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইজ়রায়েল ও আমেরিকার কৌশল ভবিষ্যতের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।