ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পরাক্রম দিবস (Parakram Diwas 2025) কবে পালিত হয় ভারতে? এর উত্তর সহজ। প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি ভারতজুড়ে পালিত হয় পরাক্রম দিবস। এটি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি তাঁর দেশপ্রেম, সাহসিকতা এবং অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
পরাক্রম দিবসের ইতিহাস (Parakram Diwas 2025)
২০২১ সালে ভারত সরকার ঘোষণা করে যে ২৩ জানুয়ারি পরাক্রম দিবস (Parakram Diwas 2025) হিসেবে পালিত হবে। ২০২৫ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সাহসিকতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটি উদযাপন শুরু হবে। প্রথমবার এটি উদযাপিত হয়েছিল কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে। ২০২২ সালে দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির হলোগ্রাম মূর্তি উন্মোচন করা হয়। ২০২৩ সালে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ২১টি নামহীন দ্বীপ নেতাজি ও ২১ জন পরমবীর চক্রপ্রাপ্ত যোদ্ধার নামে উৎসর্গ করা হয়। ২০২৪ সালে, প্রধানমন্ত্রী দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন, যেখানে আইএনএ-র বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নেতাজির জীবন ও অবদান (Parakram Diwas 2025)
সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটকে এক বিশিষ্ট বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পড়াশোনা শুরু হয় কটকে। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯১৬ সালে জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের জন্য তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবুও তাঁর স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকার অবিচল থাকে (Parakram Diwas 2025)।
আরও পড়ুন: Tri-Services Tableau: ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রথমবার ট্রাই-সার্ভিসেস ট্যাবলো
নেতাজি ১৯২১ সালে ভারতের স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন। কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দলের অন্দরে তিনি দ্রুত উত্থান ঘটান। ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন এবং ১৯৪২ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নেতৃত্ব এবং “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” স্লোগান কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
পরাক্রম দিবসের উদযাপন (Parakram Diwas 2025)
এই দিনটিতে দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্কুল, কলেজ এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে দেশপ্রেমমূলক গান, নাটক এবং নেতাজির জীবনের উপর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। মানুষ নেতাজির মূর্তি এবং স্মৃতিস্তম্ভে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানায়। দিল্লির লালকেল্লার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মিউজিয়ামে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
২০২৫ সালে নেতাজির ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগে লালকেল্লায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানে নেতাজি এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের ইতিহাস ও অবদানকে তুলে ধরা হবে।
পরাক্রম দিবসের তাৎপর্য
২০২৫ সালের পরাক্রম দিবস বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি নেতাজির দেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। তাঁর সাহসিকতা, দৃঢ়তা এবং আত্মনির্ভরতার মূল্যবোধকে মনে করিয়ে দেয়। এই দিনটি দেশের প্রতিটি নাগরিককে এক শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ার অনুপ্রেরণা দেয়।
২৩ জানুয়ারি ভারতের ইতিহাসে এক মহানায়কের অবদানের সাক্ষ্য বহন করে। আসুন, পরাক্রম দিবস ২০২৫-এ নেতাজির আদর্শকে স্মরণ করে তাঁর স্বপ্নের ভারত গড়ার জন্য একসঙ্গে কাজ করি।
এই বছরের অনুষ্ঠান
২০২৫ সালের পরাক্রম দিবস উপলক্ষে, ২৩ জানুয়ারী থেকে ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫ পর্যন্ত নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মস্থান, ঐতিহাসিক শহর কটকের বারাবতী দুর্গে একটি জমকালো উদযাপন অনুষ্ঠিত হবে। বহুমুখী এই উদযাপন নেতাজির ১২৮তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর উত্তরাধিকারকে সম্মান জানাবে। ২৩-২৫ জানুয়ারী, ২০২৫ তারিখে নির্ধারিত তিন দিনের এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি।
ঐতিহ্য বজায় রেখে, এই বছর সংস্কৃতি মন্ত্রক নেতাজির জন্মস্থান এবং তাঁর প্রাথমিক বেড়ে ওঠাকে রূপ দেওয়া শহর কটকে পরাক্রম দিবস উদযাপনের আয়োজন করছে। তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি শুরু হবে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং নেতাজির জন্মস্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে, যা এখন তাঁর নামে নিবেদিত একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।
পরবর্তীকালে, বারাবতী দুর্গে পরাক্রম দিবস উদযাপন প্রধানমন্ত্রীর একটি ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে শুরু হবে এবং নেতাজির জীবনের উপর একটি বই, ছবি এবং সংরক্ষণাগার প্রদর্শনী থাকবে, যেখানে বিরল ছবি, চিঠিপত্র এবং নথিপত্র প্রদর্শিত হবে এবং তার অসাধারণ যাত্রার বর্ণনামূলক একটি এআর/ভিআর প্রদর্শনী থাকবে। এই উপলক্ষে একটি ভাস্কর্য কর্মশালা এবং একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা-সহ-কর্মশালারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে নেতাজির উত্তরাধিকারকে সম্মান জানিয়ে এবং ওড়িশার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও থাকবে। এছাড়াও, নেতাজির জীবন নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলিও এই অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে।