ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: আগামীকাল শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস (Paramhansa Ramakrishna Dev Birthday) দেবের জন্মবার্ষিকী। আজ থেকেই বেলুড় মঠে সাজো সাজো রব। কামারপুকরেও কাল ধুমধাম করে পালিত হবে ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী। তাঁর জন্মদিনের প্রাক্কালে জেনে নেওয়া যাক গদাধর থেকে রামকৃষ্ণ হয়ে ওঠার নানান জানা-অজানা কথা।
জন্মস্থান ও জন্মদিবস (Paramhansa Ramakrishna Dev Birthday)
১৮৩৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হুগলি জেলার কামারপুকুর জন্মগ্রহণ করেন (Paramhansa Ramakrishna Dev Birthday) রামকৃষ্ণ দেব। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল গদাধর চট্টোপাধ্যায়। ছোট থেকেই ধর্মেই মন ছিল তাঁর। নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন মা কালীকে।
যত মত, তত পথ (Paramhansa Ramakrishna Dev Birthday)
চারিদিকে যখন ধর্ম নিয়ে হানাহানি, ঠিক সেইসময় অমূল্য বাণী দিয়ে (Paramhansa Ramakrishna Dev Birthday) গিয়েছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব। তিনি বলেছিলেন, “যত মত, তত পথ”। তাঁর এই কথার অর্থ হল যে পথ দিয়েই ঈশ্বরের কাছে যাওয়া হোক না কেন, ঈশ্বরকে পেলেই সাধনা সম্পূর্ণ হয়। আজও নানান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দিশাহীনকে পথ দেখান ঠাকুর। তাঁর অমৃত বাণীর মধ্য দিয়েই মেলে সমস্যার সমাধান। গুরুগম্ভীর ভাষায় নয়, অত্যন্ত সহজ সরলভাবে, জীবনের সার সত্যকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে গেছেন রামকৃষ্ণ দেব।
আরও পড়ুন: Maghi Purnima Vastu Tips: মাঘী পূর্ণিমার দিন ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি, রুষ্ট হতে পারেন মা লক্ষ্মী
ইসলাম ধর্ম নিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ দেব (Paramhansa Ramakrishna Dev Birthday)
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস ইসলাম ধর্মের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন ১৮৮৬-৮৭ সালে, যখন তিনি গোবিন্দ রায়কে গুরু হিসেবে গ্রহণ করেন। গোবিন্দ রায়, যিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে ওয়াজেদ আলি খান নাম ধারণ করেছিলেন, তিনি সুফি সাধক ছিলেন। রামকৃষ্ণ নিয়মিত নমাজ পড়তেন এবং মসজিদে যেতেন। তিনি ইসলাম নিয়ে গভীর সাধনা করে অচিরেই সিদ্ধিলাভ করেন। এই সময় তিনি অন্য ধর্মের দিকে চিন্তা করেননি। রামকৃষ্ণ শুধু ইসলাম নয়, খ্রিস্ট ও বৌদ্ধধর্মও গ্রহণ করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তাঁর এই কর্মকাণ্ডে ধর্মজীবনের নতুন বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।
গো-ভক্ষণ করেছিলেন কি?
রামকৃষ্ণ দেব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গো-ভক্ষণ-এর ইচ্ছে জাগলেও মথুর বাবুর অনুরোধে তা খাননি তিনি। তিনদিন ইসলাম ধর্মে গভীর সাধনা করেন ঠাকুর। কথামৃতকার ঠাকুরের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গোবিন্দ রায়ের কাছে আল্লা মন্ত্র নিলাম। কুঠিতে প্যাঁজ দিয়ে রান্না ভাত হলো। খানিক খেলুম।’ আরও এক জায়গায় লেখা আছে, “বটতলায় ধ্যান করছি, দেখালে একজন দেড়ে মুসলমান সানকি করে ভাত নিয়ে সামনে এলো। সানকি থেকে ম্লেচ্ছদের খাইয়ে আমাকে দুটি দিয়ে গেল। মা দেখালেন, এক বই দুই নাই। সচ্চিদানন্দই নানা রূপ ধরে রয়েছেন। তিনিই জীবজগৎ সমস্তই হয়েছেন। তিনিই অন্ন হয়েছেন।” সেই তিনদিন সম্পূর্ণ অহিন্দুদের মতোই মন্দিরের বাইরে দিন কাটিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ দেব। সম্পূর্ণরূপে ইসলাম ধর্মে মন দিয়ে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন তিনি।

খাদ্যরসিক ছিলেন ঠাকুর
ঠাকুরের জীবনী সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা পড়লে জানা যায় ঠাকুর খাবার খেতে কতটা ভালোবাসতেন। পুজো করার সময় ঠাকুর মা কালীকে বলতেন, “আমায় শুকনো সাধু করিসনি মা, আমাকে রসে বশে রাখিস।” এছাড়া ঠাকুর বলে গেছেন, “খালি পেটে কখনও ধর্মাচরণ হয় না।” অমৃতি, লুচি, সুজি খেতে খুব ভালোবাসতেন ঠাকুর। এছাড়া, জানা যায়, স্নানের পরে ঠাকুর আর খিদে সহ্য করতে পারতেন না।
সকলকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন যেদিন
১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর ভক্তদের বলেছিলেন, “তোমাদের চৈতন্য হোক।” ওই সময় তিনি গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এবং চিকিত্সার জন্য কাশীপুরের একটি বাগানবাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ হয়ে তিনি বাগানে হাঁটতে বের হন এবং সেখানে উপস্থিত ভক্তদের স্পর্শ করেন। ভক্তরা জানিয়েছেন, সেদিন তাঁদের মধ্যে অদ্ভুত আধ্যাত্মিক অনুভূতি হয়েছিল। মাত্র কয়েক দিন পর, তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি কল্পতরু দিবস বা কল্পতরু উত্সব পালন করা হয়, যা তাঁর শিক্ষা ও আদর্শকে স্মরণ করার উপলক্ষ।