ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জি-৭ ভুক্ত দেশগুলি (Putin’s Shadow Fleets)। মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার (Putin) জ্বালানি রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে তাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করে ফেলা। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনায় চিড় ধরেছে। কারণ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অত্যন্ত চতুরভাবে বিকল্প কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন — যার অন্যতম দৃষ্টান্ত হল ‘ছায়া নৌবহর’।
ছায়া নৌবহর (Putin’s Shadow Fleets)
‘ছায়া নৌবহর’ বলতে বোঝানো হচ্ছে (Putin’s Shadow Fleets) এমন সব তেলের ট্যাঙ্কারবাহী পুরনো জাহাজের বহর, যেগুলোর মালিকানা ও চলাচল গোপন রাখা হয়, আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মানা হয় না এবং অনেক সময় সেগুলো বিমাহীন অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে চলাচল করে। রাশিয়া মূলত এই নৌবহর ব্যবহারের মাধ্যমেই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রফতানি করছে।
রুশ মালিকানা আড়াল (Putin’s Shadow Fleets)
এই জাহাজগুলোর বেশিরভাগই নথিভুক্ত করা হয়েছে পানামা, লাইবেরিয়া, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ ও গ্যাবনের মতো দেশগুলিতে (Putin’s Shadow Fleets)। এই রকম রেজিস্ট্রেশনের ফলে সহজেই রুশ মালিকানা আড়াল করা সম্ভব হয়, এবং নিষেধাজ্ঞার আওতা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। তদুপরি, রাশিয়া তাদের অনেক জাহাজের মালিকানা ট্রান্সফার করে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানির নামে, যাতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে কার্যকর না হয়।

শনাক্ত করা কঠিন (Putin’s Shadow Fleets)
আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই জাহাজগুলো চলাচলের সময় ‘অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম’ (AIS) বন্ধ রাখে, ফলে সেগুলোর গতিবিধি স্যাটেলাইট বা সমুদ্রপথ নজরদারি দ্বারা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি, মাঝসমুদ্রেই এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে তেল সরবরাহ করে তারা, যা রফতানির উৎস গোপন রাখতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: Thai Canal : চিনের নয়া বানিজ্য কূটনীতি! “তাই খাল”-কে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে ড্রাগন?
নৌবহরের সম্প্রসারণে বিনিয়োগ (Putin’s Shadow Fleets)
২০২২ সাল থেকে রাশিয়া এই ছায়া নৌবহরের সম্প্রসারণে হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে জানিয়েছে কিভ স্কুল অফ ইকোনমিক্স। বর্তমানে প্রায় ৪০০টিরও বেশি ট্যাঙ্কার রয়েছে রাশিয়ার এই নেটওয়ার্কে। ২০২৩ সালের জুন মাসে রাশিয়ার তেল রফতানি পৌঁছেছিল দৈনিক ৪১ লক্ষ ব্যারেলে। পশ্চিমা দেশগুলির দাবি অনুযায়ী, এই ছায়া নৌবহরের মাধ্যমেই প্রায় ৭০ শতাংশ তেল রফতানি করে চলেছে মস্কো, যার বিনিময়ে ৮৯ শতাংশ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করছে তারা।
দুর্ঘটনার সম্ভাবনা (Putin’s Shadow Fleets)
আরও পড়ুন: US Tariff War : ট্রাম্পের শুল্কনীতি স্থগিতের সিদ্ধান্তে স্বস্তির ছায়া নাকি মন্দার পূর্বাভাস?
অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও এই ছায়া নৌবহর পরিবেশ ও নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক (Putin’s Shadow Fleets)। ব্যবহৃত জাহাজগুলোর ৭২ শতাংশই ১৫ বছরের বেশি পুরনো এবং সেগুলোর বিমা নেই। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল, যেমন ২০২৩ সালের মার্চে ডেনমার্ক উপকূলে একটি রুশ জাহাজের সংঘর্ষের ঘটনা, অথবা ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে উস্ত-লুগা বন্দরে একটি ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ।
অপরিশোধিত তেল রফতানি (Putin’s Shadow Fleets)
এই নৌবহরের সর্বাধিক সক্রিয়তা দেখা যায় বাল্টিক সাগরে, যেখান দিয়ে রাশিয়া তার ৫০ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত তেল রফতানি করে। একমাত্র ভারত, চিন এবং তুরস্কের মতো দেশগুলির সঙ্গেই এই তেল রফতানি তুলনামূলকভাবে উন্মুক্তভাবে হচ্ছে; বাকি দেশগুলোর ক্ষেত্রে তা প্রায় পুরোপুরি গোপন।
গুপ্তচরবৃত্তির কাজেও ব্যবহার (Putin’s Shadow Fleets)
রুশ ছায়া নৌবহর যে শুধু অর্থনৈতিক কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে তা নয়, কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই জাহাজগুলোর একটি অংশ গুপ্তচরবৃত্তির কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার দিক থেকেও এটি এক বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ছায়া নৌবহর’ কৌশল রাশিয়াকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অর্থনৈতিকভাবে টিকিয়ে রেখেছে এবং এক নতুন ধরণের ‘জেলাবিহীন যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার এক সফল উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তবে এই কৌশলের দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি কী হবে, তা সময়ই বলবে।