ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রাহুল গান্ধী, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি অপ-এড লেখায় দাবি করেছেন (Rahul Gandhi Claims Match-Fixing In Maharashtra) যে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) মহারাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করার জন্য পাঁচ-পদক্ষেপের মডেল ব্যবহার করেছে।
ভোটে বিরাট জয়ের পেছনে বিজেপির পরিকল্পিত চক্রান্তের দাবি কংগ্রেস নেতার (Rahul Gandhi Claims Match-Fixing In Maharashtra)
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মহারাষ্ট্রের ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন (Rahul Gandhi Claims Match-Fixing In Maharashtra)। তিনি দাবি করেছেন, বিজেপি একটি “ম্যাচ ফিক্সিং”-এর মডেল তৈরি করে জয় নিশ্চিত করেছে।
মহাযুতি জোট, যেখানে বিজেপির সঙ্গে রয়েছে একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা এবং অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (NCP), এই নির্বাচনে ২৮৮টি আসনের মধ্যে ২৩৫টি আসন দখল করে। এর মধ্যে বিজেপির একার দখলে ১৩২টি আসন যায়, যা তাদের ইতিহাসে সেরা ফলাফল।
পাঁচ ধাপের ভোট চক্রান্তের অভিযোগ (Rahul Gandhi Claims Match-Fixing In Maharashtra)
রাহুল গান্ধী The Indian Express-এ একটি মতামত লেখেন। সেখানে তিনি বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ রাজ্যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য পাঁচ ধাপের একটি পরিকল্পনা নিয়েছিল।
তার দাবি অনুযায়ী,
প্রথম ধাপ: নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্যানেলকে নিজেদের অনুকূলে গড়ে তোলা।
দ্বিতীয় ধাপ: ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম যোগ।
তৃতীয় ধাপ: ভোটদানের হার কৃত্রিমভাবে বাড়ানো।
চতুর্থ ধাপ: যেসব আসনে বিজেপির জেতা দরকার, সেখানে জাল ভোট দেওয়া।
পঞ্চম ধাপ: এই সব কারচুপির প্রমাণ লুকিয়ে ফেলা।
তিনি বলেন, “আমি ছোটখাটো জালিয়াতির কথা বলছি না, আমি বলছি একটি শিল্প স্তরের কারচুপির কথা, যার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে কবজা করা হয়েছে।”
বিজেপির বিরুদ্ধে রাহুলের মূল অভিযোগ
রাহুলের প্রথম অভিযোগ ২০২৩ সালে পাস হওয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ঘিরে। এই আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে যে প্যানেল আগে ছিল, তাতে ভারতের প্রধান বিচারপতির বদলে এখন রয়েছেন একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। রাহুল বলেন, “নিরপেক্ষ বিচারককে সরিয়ে মন্ত্রী বসানো মানে পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ। এই প্রশ্ন তুললেই উত্তর পরিষ্কার হয়ে যায়।”
বিজেপির পাল্টা জবাব
রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগকে “লজ্জাজনক” বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র তুহিন সিনহা বলেন, “তিনি আবারও দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিকে কালিমালিপ্ত করার কাজ করছেন। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে।”
বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে. পি. নাড্ডা রাহুলের বিরুদ্ধে পাল্টা পাঁচ ধাপের ‘ফেক ন্যারেটিভ তৈরির ব্লুপ্রিন্ট’ দেন।
তিনি বলেন:
ধাপ ১: রাহুলের কর্মকাণ্ডে কংগ্রেস বারবার পরাজিত হয়।
ধাপ ২: ইন্ট্রোস্পেকশন না করে অদ্ভুত ষড়যন্ত্রের গল্প বানিয়ে ভোটে কারচুপির অভিযোগ করেন।
ধাপ ৩: সব তথ্য উপেক্ষা করে।
ধাপ ৪: প্রমাণ ছাড়াই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে কলঙ্কিত করেন।
ধাপ ৫: সত্যের বদলে শিরোনাম তৈরির চেষ্টা করেন।
নাড্ডা আরও বলেন, “বিহারেও নিশ্চিত পরাজয়ের জন্যই রাহুল এই নাটক করছেন। গণতন্ত্র নাটক চায় না, সত্য চায়।”
ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন
রাহুল গান্ধীর দাবি, মহারাষ্ট্রে ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে ভোটার সংখ্যা ছিল ৮.৯৮ কোটি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯.২৯ কোটিতে। কিন্তু এরপর মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে, নভেম্বরে বিধানসভা ভোটের আগে, ভোটার সংখ্যা আরও ৪১ লাখ বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৭০ কোটিতে।
বিজেপি এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, এটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। কর্ণাটকের ভোটের আগেও এইরকম ভোটার সংযোজন হয়েছিল, যেখানে কংগ্রেসই জিতেছে।
এছাড়া, রাহুল গান্ধী নিজেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন তুহিন সিনহা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নতুন ভোটারদের নিবন্ধনে যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও টার্গেট ক্যাম্পেইনের জন্যই এই বৃদ্ধি। তবে রাহুল এই ব্যাখ্যাকে মানতে নারাজ।