ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ রাজ্যে নতুন কোনো ইস্যু নয়। এবারে সেই দুর্নীতির খাতায় নাম উঠলো রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের? (Raiganj University) বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর সংস্কার, গাড়ি কেনা থেকে শুরু করে সিসিটিভি, উপাচার্যের বাংলো; নেই লক্ষ লক্ষ টাকার কোনও হিসেব! ক্যাগ রিপোর্ট ঘিরে নতুন করে শুরু হল রাজনৈতিক তরজা।
কয়েক বছর ধরেই দুর্নীতির অভিযোগ (Raiganj University)
গত কয়েক বছর ধরেই দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত রাজ্যের শিক্ষা দফতর। একাধিক ক্ষেত্রে উঠেছে চাঞ্চল্যকর সব দুর্নীতির অভিযোগ। এবারে সেই তালিকায় যুক্ত হলো রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের (Raiganj University) নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে দেদার গরমিলের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি। ক্যাগ এর নয়া রিপোর্টের জেরে ফের একবার নতুন করে প্রশ্ন উঠল রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। সূত্রের খবর, ক্যাগের তরফে দেওয়া হয়েছে ৭৩ পাতার রিপোর্ট, আর সেই রিপোর্টেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর গরমিল। কী সেই গরমিল?
বিশ্ববিদ্যালয়ে পুকুর সংস্কার (Raiganj University)
বিশ্ববিদ্যালয়ের (Raiganj University) পুকুরের সংস্কারে খরচ হয়েছে ২৮ লক্ষেরও বেশি টাকা। ক্যাগ রিপোর্টে ধরা পড়েছে এমনই তথ্য। কিন্তু কী সংস্কার হয়েছে, যার জন্য এত টাকা খরচ করতে হল? অডিট কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলেও, বিশেষ কোনও সদুত্তর মেলেনি বলেই অভিযোগ।
সিসিটিভি ও বায়োমেট্রিকে গরমিল !
সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও বায়োমেট্রিক হাজিরা সিস্টেম বসাতে খরচ প্রায় ৪৪ লক্ষ ৮০ হাজার ১৬৫ টাকা। কিন্তু সেই হিসেবেও মিলেছে যথেষ্ট গরমিল। ক্যাগ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, GeM সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু আধিকারিক ও Webel এর প্রতিনিধিরা সার্ভে করলেও, উচ্চ শিক্ষা দফতরের বরাদ্দ টাকায় ওয়েবেলকেই টেন্ডার দেওয়া হয়। যা অবৈধ বলেই মনে করছে ক্যাগ কমিটি।
উপাচার্যের বাংলো তৈরিতে গরমিল !
রায়গঞ্জের কর্নজোড়ায় উপাচার্যের বাংলো তৈরির জন্য বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে ২৫ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। এই বাংলো নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনও থার্ড পার্টিকে ৫৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়েছিল। আর সেই অ্য়াডভান্স দেওয়া পুরোপুরি অবৈধ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাগ রিপোর্টে।
বিনা টেন্ডারে গাড়ি ক্রয় !
টেন্ডার না করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি কেনা হয়েছে ৪৩ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা খরচ করে। কোনও টেন্ডার প্রক্রিয়া না করেই আরও প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা বাড়তি খরচ করা হয়েছে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে। এই সব টাকারও মেলেনি কোনও হিসেব। কিভাবে সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘটানো হলো এমন কান্ড? উঠছে প্রশ্ন।
কলকাতা ভবন
শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলকাতা ভবনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডিনের বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়, যার বিনিময়ে মাসে খরচ হয় কয়েক লক্ষাধিক টাকাও। কিন্তু তারপরও কলকাতায় শিক্ষাভবনে কাজে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীরা অন্যত্র বাড়ি ভাড়া নিয়ে থেকেছেন। যার ফলে খরচ হয়েছে বিপুল টাকা।একের পর এক হিসেবে গরমিলের অভিযোগে কার্যত চক্ষু চড়কগাছ সকলের। সূত্রের খবর, ক্যাগের তরফে এই সব প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়েছে এবং উত্তর দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য দীপক কুমার রায়।
আরও পড়ুন: Tab Scam: উত্তর থেকে দক্ষিণে ট্যাব দুর্নীতির জাল, শিক্ষক সহ ধৃত ৩
কী বলছে শাসকদল?
তবে তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তবে আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার সুরাহা করা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অরিন্দম সরকার।
সরব গেরুয়া শিবির
এদিকে এই প্রসঙ্গে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবিরও। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিল ভুইঁমালি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে বিজেপির তরফে।
কোথায় গেলো এই বিপুল পরিমান টাকা? কোটি কোটি টাকার এই গরমিলের আদৌ কী কোনও
হিসেব মিলবে?