ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ডিএসএসসি ওয়েলিংটনে নিজের ভাষণের সময়ে বহুমুখি যুদ্ধক্ষেত্রের কথা বলেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh in DSSC)। এই বিহয়ে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “সরকার সেনাবাহিনীকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত যুদ্ধ-প্রস্তুত বাহিনীতে রূপান্তরিত করছে। একটি দেশীয় ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত প্রতিরক্ষা বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলা একটি কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা”।
আধুনিক যুদ্ধের যুগে যৌথভাবে কাজ করাই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি (Rajnath Singh in DSSC)
২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল, তামিলনাড়ুর ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজে (DSSC) ৮০তম স্টাফ কোর্সের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন (Rajnath Singh in DSSC), “আজকের দিনে সাইবার, মহাকাশ এবং তথ্য যুদ্ধ যতটা কার্যকরী, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রচলিত যুদ্ধের কৌশল। তাই সশস্ত্র বাহিনীকে একত্রে কাজ করতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের যুগে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ (Rajnath Singh in DSSC)
তিনি বলেন (Rajnath Singh in DSSC), আজকের বিশ্ব রাজনীতি বদলে যাচ্ছে তিনটি বড় কারণে—জাতীয় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি, এবং দ্রুত উদ্ভাবন। রাজনাথ সিংহ বলেন (Rajnath Singh in DSSC), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিটি দিক থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক ও বহুমুখী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রভাব (Rajnath Singh in DSSC)
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও অন্যান্য উদীয়মান প্রযুক্তি যুদ্ধের রূপ পাল্টে দিচ্ছে। তিনি বলেন, “ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ড্রোন এক নতুন অস্ত্র হয়ে উঠেছে। অনেক সেনা ও সরঞ্জামের ক্ষয়ক্ষতি ড্রোনের কারণেই হয়েছে। মহাকাশ প্রযুক্তিও আজ যুদ্ধক্ষেত্রে নজরদারি, টার্গেটিং ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।”
হাইব্রিড যুদ্ধ ও ভারতের চ্যালেঞ্জ
তিনি বলেন, আজকের যুগ ‘গ্রে জোন’ ও হাইব্রিড ওয়ারফেয়ারের যুগ। যেখানে সাইবার হামলা, ভুল তথ্য ছড়ানো ও অর্থনৈতিক চাপ দিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা হয়। ভারতের সীমান্তে অব্যাহত হুমকির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা সন্ত্রাসবাদ ও প্রক্সি ওয়ার বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভূ-রাজনৈতিক চাপ ও নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
রাজনাথ সিংহ বলেন, পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উত্তেজনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন—সব মিলিয়ে নিরাপত্তার হিসাব-নিকাশকে আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য নিজেদের আরও উপযোগী করে তুলতে সশস্ত্র বাহিনীকে রূপান্তরের পথে অগ্রসর হতে হবে। ‘২০২৪ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্নের ভিত গড়ে উঠেছে একটি সুরক্ষিত ও শক্তিশালী ভারতের ওপর।
আরও পড়ুন: Fact check: নাগপুরে মুসলিমদের উপর পুলিশি অত্যাচার বলে ভাইরাল মধ্যপ্রদেশের পুরনো ভিডিও
আত্মনির্ভরতার মাধ্যমে আধুনিকিকরণ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “চলমান যুদ্ধ থেকে আমরা শিখেছি—স্বনির্ভর, প্রযুক্তিনির্ভর এবং ভবিষ্যতপ্রস্তুত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই কৌশলগতভাবে জরুরি। কম খরচে বেশি কার্যকর প্রযুক্তি তৈরি করতে হবে। শুধু প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা নয়, আমাদের বাহিনীকেই নেতৃত্ব দিতে হবে সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে।”
সমন্বিত জাতীয় নিরাপত্তার দিশা
তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। কূটনৈতিক, তথ্যভিত্তিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত—এই পাঁচটি স্তরে ‘Whole of Nation’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করাই হবে সাফল্যের চাবিকাঠি।
গ্লোবাল সাউথ-এর উন্নয়নে ভারতের ভুমিকা
প্রধানমন্ত্রীর ‘MAHASAGAR’ (Mutual and Holistic Advancement for Security and Growth Across Regions) দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “ভবিষ্যতের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কেবল যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমেই সম্ভব। দেশগুলির পারস্পরিক সংযোগ ও নির্ভরশীলতা আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় একত্রে এগোতে সাহায্য করবে।”
ভবিষ্যতের জন্য ৫টি গুণের ওপর জোর
রাজনাথ সিংহ অফিসারদের ‘Awareness, Ability, Adaptability, Agility এবং Ambassadors’ এই পাঁচটি গুণ আত্মস্থ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার রক্ষক হিসেবে তোমাদের সচেতন, দক্ষ, দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সমাজে পরিবর্তনের প্রতিনিধি হতে হবে।”
প্রতিবেশী দেশের পাশে ভারত
ভাষণের শুরুতেই তিনি মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, “সংকটে পড়লে ভারত সব সময় বন্ধুদের পাশে দাঁড়ায়। এই কঠিন সময়ে আমরা মায়ানমারের মানুষের পাশে আছি।”
আরও পড়ুন: Air India Pilot Death: অবতরণের পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের পাইলটের
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের অন্যান্য দিক
এই ৮০তম স্টাফ কোর্সে মোট ৪৭৯ জন অফিসার অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে ২৬টি মিত্র দেশের ৩৮ জন এবং ৩ জন মহিলা অফিসারও রয়েছেন। অনুষ্ঠানের আগে রাজনাথ সিংহ মাদ্রাজ রেজিমেন্ট ওয়ার মেমোরিয়ালে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান এবং প্রাক্তন সেনাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসএসসি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি ভারতের একটি অন্যতম প্রধান ত্রিসেনা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। ভারত ও বিদেশের সেনা অফিসারদের নেতৃত্বদানের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত এখানে ১৯ হাজারের বেশি ভারতীয় অফিসার ও ২ হাজার বিদেশি অফিসার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অনেকেই পরবর্তীতে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সেনাপ্রধান হয়েছেন।