ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কাতার থেকে গিফট পাওয়া বোয়িং ৭৪৭ বিমান পেন্টাগন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ (Ramaphosa at Oval) করার বিষয়ে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর আলোচনা কিছুক্ষণের জন্য থেমে যায়।
ট্রাম্প বনাম রামাফোসা (Ramaphosa at Oval)
ওভাল অফিসের আলো নিভে গেল (Ramaphosa at Oval)। “লাইটগুলো নিভিয়ে দাও,” বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন শুরু হতে চলেছে এক অদ্ভুত কূটনৈতিক দৃশ্য। পাশে বসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। তার উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য বিষয়ে নতুন চুক্তির দিক এগোনো। কিন্তু ট্রাম্পের মন ছিল অন্য জায়গায়।
অভিযোগের ভিডিও দেখালেন ট্রাম্প (Ramaphosa at Oval)
ট্রাম্প একটি টিভি রুমে আনিয়ে সেখানে একটি ভিডিও চালান (Ramaphosa at Oval)। ভিডিয়োতে দেখা যায়, কিছু কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান রাজনীতিক—যারা রামাফোসার সরকার বা দলে নেই—শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে পুরনো বর্ণবাদবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। ভিডিয়োটি প্রায় চার মিনিট ধরে চলে। ট্রাম্প মনোযোগ দিয়ে ভিডিয়োটি দেখেন, কিন্তু রামাফোসা মুখ ঘুরিয়ে নেন।
ভিডিওর শেষে সাদা ক্রসের সারি দেখানো হয়, যেগুলোকে ট্রাম্প বলেন শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের মৃত্যু স্মরণে বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, “এটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য। আমি এরকম কিছু কখনও দেখিনি।” রামাফোসা তাতে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি জানতে চাই এটা কোথায়। কারণ আমি কখনও এমন কিছু দেখিনি।”
আরও অভিযোগ এবং দলিল (Ramaphosa at Oval)
ট্রাম্প এরপর কিছু ছাপানো রিপোর্টের কাগজ বের করে দেখাতে থাকেন, যেখানে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর হামলার কথা লেখা ছিল (Ramaphosa at Oval)। তিনি বলেন, “মৃত্যু। মৃত্যু। ভয়াবহ মৃত্যু।” তিনি বলেন, তার প্রশাসন এর আগেও বহু আফ্রিকানকে শরণার্থী হিসেবে আমেরিকায় স্বাগত জানিয়েছে, কারণ তারা দেশে বৈষম্য ও হিংসার শিকার।
রামাফোসার জবাব
রামাফোসা এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় গণহত্যা হচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকা এক সময় ছিল বর্ণবাদী রাষ্ট্র, যেখানে শাসন করত শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান সংখ্যালঘুরা। তিন দশক আগে সেই বর্ণবাদ শেষ হয়েছে। এখন কিছু উত্তেজনা থাকলেও দেশ সাধারণভাবে পুনর্মিলনের পথেই চলছে। তিনি একা ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব না দিয়ে তার প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের কথা বলার সুযোগ দেন। এদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত গল্ফার এর্নি এলস ও রেটিফ গুসেন।
গল্ফপ্রেমী ট্রাম্পের মন জয়
ট্রাম্প বলেন, “ওরা চ্যাম্পিয়ন। আমি চ্যাম্পিয়নদের সম্মান করি।” আরও ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, বিলাসবহুল পণ্যের ব্যবসায়ী আফ্রিকান জোহান রুপার্ট। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, শুধু শ্বেতাঙ্গ কৃষক নয়, সব শ্রেণির মানুষই আক্রান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবা থাকুক।” তিনি ইঙ্গিত করেন এলন মাস্কের তৈরি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংকের দিকে। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এলন মাস্ক, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম এবং বর্তমানে ট্রাম্পের পরামর্শদাতা। মাস্ক বলেন, তাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্টারলিংক চালাতে লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না, কারণ তিনি শ্বেতাঙ্গ।
রুপার্টের অতীত স্মৃতি
রুপার্ট বলেন, “আপনি আর আমি ৭০-এর দশকে নিউ ইয়র্কে ছিলাম। তখন ভাবতেই পারিনি নিউ ইয়র্ক আজ যা হয়েছে তা হতে পারবে।” তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি এতটাই আশাবাদী যে তিনি তার নাতি-নাতনিদের জন্য খামারে কটেজ তৈরি করছেন। “আমি প্রায়ই দরজা না বন্ধ করেই ঘুমোতে যাই।”
আরও পড়ুন: Muhammad Yunus: ইউনূসের পদত্যাগের ইঙ্গিত, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত!
ট্রাম্পের বিমান বিতর্ক
এই বৈঠকের মাঝেই এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কাতার থেকে উপহার পাওয়া একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানকে এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন কেন। ট্রাম্প রেগে যান এবং বলেন, “তুমি শুধু শ্বতাঙ্গ কৃষকদের বিষয়টা থেকে দৃষ্টি সরাতে চাইছো।” রামাফোসা তখন হাসতে হাসতে বলেন, “আমার যদি একটা বিমান থাকত তোমায় দেওয়ার জন্য!” ট্রাম্প মুচকি হেসে বলেন, “ইচ্ছা করি তোমার থাকত। আমি সেটা নিতাম।”
বৈঠকের পর প্রতিক্রিয়া
হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রামাফোসা। তিনি বলেন, “তোমরা ভাবছিলে এখানে বিশাল কোনও নাটক হবে। কিন্তু আমি দুঃখিত, তোমাদের সেইরকম কিছু দিতে পারলাম না।” একজন সাংবাদিক বলেন, “আপনার ‘নাটক’ সংজ্ঞা কী জানি না, কিন্তু ওটা আমাদের জন্য যথেষ্ট নাটকীয় ছিল। ওটা একেবারে অন্যরকম ওভাল অফিস বৈঠক।”