ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সম্প্রতি মুম্বইয়ে প্রয়াত হয়েছেন শিল্পপতি রতন টাটা। ৯ অক্টোবর মুম্বইয়ের হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এবার জানা গিয়েছে কী রয়েছে তাঁর উইলে (Ratan Tata’s will)। জানা গিয়েছে নিজের উইলে তিনি তাঁর পোষ্য জার্মান শেফার্ডটির আজীবন যত্নের ব্যাবস্থা করে গিয়েছেন। পশ্চিমী দেশগুলিতে এই ধরনের ঘটনার উদাহরন থাকলেও ভারতে এই ঘটনা বিরল।
টাটার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০,০০০ কোটি টাকারও বেশি। তিনি নিজের সম্পদে তাঁর ফাউন্ডেশন, তার ভাই জিমি টাটা, সৎ-বোন শিরিন এবং ডিনা জেজীভয়, পরিবারের কর্মচারী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের মনোনীত করেছেন।
রতন টাটা তাঁর পোষ্য জার্মান শেফার্ড টিটোকে প্রায় পাঁচ বছর আগে দত্তক নিয়েছিলেন। একই নামে এর আগেও তাঁর একটি পোষ্য কুকুর ছিল। সেটির মৃত্যুর পরে টিটোকে দত্তক নেন তিনি। টাটার দীর্ঘদিনের বাবুর্চি রাজন শ টিটোর দেখাশোনা করবেন বলে জানা গিয়েছে। উইলে টাটার বাটলার, সুব্বিয়ার জন্যও ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সুব্বিয়া তিন দশক ধরে টাটার সঙ্গে ছিলেন। রতন টাটা তার আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় তাদের জন্য ডিজাইনার পোশাক কিনতেন বলেও জানা যায়।
টাটার দাতব্য ফাউন্ডেশনকে দেওয়া সম্পদ এবং শেয়ার
গ্রুপ কোম্পানিগুলিতে টাটার শেয়ারের বিষয়ে উইলে একটি উত্তরাধিকার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শেয়ারগুলি রতন টাটা এনডাউমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরটিইএফ)-এ স্থানান্তর করা হবে। এটি টাটা গ্রুপের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি দাতব্য ট্রাস্ট। টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন RTEF-এর প্রধান হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Modi-Xi Meeting: মুখমুখি মোদী-শি! কী হল বৈঠকে?
টাটা সন্সের শেয়ার ছাড়াও, টাটা মটোরসের মতো অন্যান্য টাটা গ্রুপের কোম্পানিতে থাকা রতন টাটার শেয়ার RTEF-তে স্থানান্তরিত হবে। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ফাউন্ডেশনটি। এটি বিভিন্ন অলাভজনক উদ্যোগকে সাহাজ্য করেছে এবং উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের IPO এর আগে টাটা টেকনলজির শেয়ার কেনা এবং টাটা নিউ-এর পরিচালক টাটা ডিজিটালের শেয়ার। আরএনটি অ্যাসোসিয়েটস এবং আরএনটি অ্যাডভাইজারস-এর মাধ্যমে তাঁর স্টার্টআপ বিনিয়োগগুলি বিক্রি করা হবে, এবং সেই আয় পাঠানো হবে RTEF-এ।
টাটার ইচ্ছা অনুযায়ী বাড়ি এবং গাড়ি বিতরণ
রতন টাটার সহকারী, শান্তনু নাইডু-ও এই উইলে রয়েছেন। নাইডুর সহযোগীতা সংস্থা, গুডফেলোতে নিজের অংশীদারিত্ব পরিত্যাগ করেছিলেন টাটা এবং নাইডুর বিদেশে পড়াশোনার ঋণও মুকুব করেন।
কোলাবার হালেকাই হাউসে টাটা বাস করতেন। এটি ইওয়ার্ট ইনভেস্টমেন্টের মালিকানাধীন। ইওয়ার্ট আসলে টাটা সন্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই বাড়িটির ভবিষ্যৎ নির্ধারন করবে ইওয়ার্ট। পাশাপাশি আলিবাগের হালেকাই বাসভবন এবং একটি বাংলো ডিজাইন করেন টাটা। এর ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।
টাটার ২০-৩০টি বিলাসবহুল গাড়ির রয়েছে। এগুলি তাঁর কোলাবার বাসভবন এবং তাজ ওয়েলিংটন মেউস অ্যাপার্টমেন্টে রাখা হয়েছে। এগুলি হয় টাটা গ্রুপ তাদের পুনের যাদুঘরের রাখার জন্য অধিগ্রহণ করতে পারে অথবা নিলামে তুলতে পারে। তাঁর উত্তরাধিকার সংরক্ষণের জন্য তাঁর অসংখ্য পুরস্কার টাটা সেন্ট্রাল আর্কাইভসকে দান করা হবে।
আরও পড়ুন: Brics Summit 2024: বিশ্ব দরবারে ভারত বন্দনা, ব্রিকস শেষে দেশে ফিরলেন মোদি
১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদের টাটা গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়া সত্ত্বেও, রতন টাটা কোনদিন ধনীদের তালিকায় আসেননি। কারন গ্রুপ কোম্পানিতে ব্যক্তিগত অংশীদারিত্ব অত্যন্ত সীমিত ছিল। তার উইল, বোম্বে হাইকোর্টে প্রোবেটের মধ্য দিয়ে যাবে। তাই এই উইল চূড়ান্ত হতে বেশ কিছু মাস সময় লাগতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
রতন টাটার নেতৃত্ব
রতন টাটা, ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর মুম্বইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। নেতৃত্ব, ব্যবসাকে নৈতিক ভাবে পরিচালনা করা এবং জনহীতকর কাজের একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছেন তিনি। ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ২০১৬ সালে সংক্ষিপ্তভাবে অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯১ সালের ৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে টাটার ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডোলার সম্পদ বিশিষ্ট কোম্পানি হয়ে ওঠার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল রতন টাটার।