ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সময়টা ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস (Saheb Bhattacharya)। রাসবিহারীর কাছে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল অভিনেতা বিক্রম চ্যাটার্জির (Bikram Chatterjee) গাড়ি। সেই সময় গাড়িতে ছিলেন সনিকা সিংহ চৌহান (Sonika Singh Chauhan)। তড়িঘড়ি দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা সনিকাকে মৃত ঘোষণা করেন। জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন বিক্রম। সেই ঘটনা এখনও দগদগে ঘায়ের মতো হয়ে রয়েছে অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যের (Saheb Bhattacharya) মনে।
সনিকা যে সাহেবের (Saheb Bhattacharya) ঠিক কতটা কাছের মানুষ ছিলেন, সেটা টলি পাড়ার অন্দরে কান পাতলেই শোনা যেত। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঠাকুরপুকুরের মর্মান্তিক ঘটনার মাঝে সাহেবের মুখে বারংবার শোনা গেল ২০১৭ সালের কথা। মদ্যপান অবস্থায় গাড়ি চালালে তার ফলাফল যে কতটা ভয়ানক হতে পারে, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটি তার বড় প্রমাণ।
ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত পরিচালক ভিক্টো গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কোথায়? এই ঘটনা প্রসঙ্গে অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য বললেন, “কারোর উল্লাস, কারোর হা হুতাশের কারণ হতে পারে না।” ট্রাইব টিভির সাক্ষাৎকারে, অভিনেতা দিলেন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। বলা ভালো সচেতনতা। যা প্রত্যেককে মানা উচিত।
অসতর্কতার কারণে প্রাণহানি (Saheb Bhattacharya)
সাহেব ভট্টাচার্যের (Saheb Bhattacharya) কথায়, “সেই ২০১৭ সাল থেকে আমি সব সময় বলছি ডোন্ট ড্রিঙ্ক অ্যাণ্ড ড্রাইভ। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রচুর সুবিধা। ফোনে বুক করলেই একাধিক গাড়ি চলে আসবে। সে ক্ষেত্রে এমন রিস্ক নেওয়া রীতিমত নিজের বিপদ ডেকে আনার সমান। কেয়ারলেসনেসের কারণে যদি একটা মানুষের জীবন চলে যায়, তার থেকে আর আফসোসের কিছু থাকতে পারে না। একটা মানুষ সকালবেলা বাজার করতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরল না। সেটা কারোর কেয়ারলেসের জন্য। আমার মনে হয়, ড্রিঙ্ক অ্যান্ড ড্রাইভ নিয়ে আগের তুলনায় প্রশাসন অনেকটাই কঠিন হয়েছে। চেকিং হয়। কিন্তু এই বিষয়ে সচেতনতা আমাদের মধ্যে নেই। অনেকে রীতিমত বীরের মতো বলে যে, ড্রিঙ্ক করার পর গাড়ি চালানোর সময় হাত কাঁপে না। এটা যে কতটা বোকা বোকা, অযৌক্তিক এটা কাউকে বলে বিশ্বাস করানো যায় না।”
আরও পড়ুন: Divyani Mondal: “পাগল হয়ে গিয়েছিলাম”, ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা! কী হয়েছিল ‘ফুলকি’র দিব্যানীর সাথে?
কালিমালিপ্ত টলিউড, উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি! (Saheb Bhattacharya)
ঠাকুরপুকুরের ঘটনায় যিনি গাড়ি চালাচ্ছেন কিংবা ওই গাড়িতে যারা ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই বিনোদন জগতের মানুষ (Saheb Bhattacharya)। পরিচালক ভিক্টো বেশ কয়েকটি প্রজেক্টে কাজ করেছেন। ঘটনা প্রসঙ্গে বারংবার প্রশ্ন উঠছে , তবে কি উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যাচ্ছে টলিউড?
এক্ষেত্রে সাহেবের (Saheb Bhattacharya) বক্তব্য, “শুধু টলিউড নয়, বেশিরভাগ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে কালিমা লিপ্ত করা হয়। এখানে ছেলে মেয়ে উভয়কেই খুব খারাপ নজরে দেখা হয়। কিন্তু যেটা ভয়ের, যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন না তার প্রতিও যে মানুষের আক্রোশ। সেটা মানুষের মধ্যে একটা চাপা ভায়োলেন্সের প্রতিচ্ছবি”।
তিনি আরও বলেন, “ঠিক ভুল বিচার করার যে সঠিক মাত্রাটা, সেটা আমরা হারিয়ে ফেলছি। মানুষের যদি আস্থা থাকতো যে, সুবিচার হবে এবং পুলিশ অপরাধীকে ছাড়বে না, তাহলে হয়ত মানুষ অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দিত। কিন্তু মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই চাপা ভায়োলেন্স খুব ভয়ের। ছোট ঘটনাটাতেও দেখেছি প্রচণ্ড রকম হাতাহাতি, গণধোলাই শুরু হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কোথাও গিয়ে, আইন-শৃঙ্খলার উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। মানুষ যদি এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তাহলে আগামী দিনে সমাজে আর কোনও শৃঙ্খলাই থাকবে না।”
আরও পড়ুন: Thakurpur Car Accident: সেলিব্রিটি মানেই সাত খুন মাফ নয়, বলছে টলিউড
“ড্রিঙ্ক করে প্যাসেঞ্জার হয়ে যাওয়া অপরাধ নয়”
ঠাকুরপুকুরের ঘটনায় যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে, সেই ভিডিওটা দেখে কিন্তু এখন দ্বিমত তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, দোষীর কোনও নারী-পুরুষ হয় না। আবার অনেকেই বলছেন, সেলিব্রিটি বলেই শুধুমাত্র থানায় গিয়ে জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। এক্ষেত্রে অভিনেতা সাহেব বলেন, “যারা এমনটা মনে করছেন তারা হয়ত আইন জানেন না। ড্রিঙ্ক করে গাড়িতে প্যাসেঞ্জার হয়ে যাওয়াটা আইনত অপরাধ নয়। যারা বলছেন তারা মানবিক দিক থেকেই বলছেন যে, সবার শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু ড্রিঙ্ক করে প্যাসেঞ্জার হয়ে যাওয়াটা তো অপরাধ নয়। ড্রিঙ্ক করে গাড়ি চালানোটা অপরাধ কিংবা গাড়ির মধ্যে ড্রিঙ্ক করাটা অপরাধ।”
অভিযুক্তকে চেনেন সাহেব!
সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত পরিচালকের নাম নাকি অনেকেই শোনেননি। এমনটাই বলেছেন অনেকে। সাহেবের সাথে কি পরিচালক ভিক্টোর পরিচিতি ছিল? সাহেব বলেন, “আমাদের পাশের ফ্লোরেই উনি কাজ করতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে ওনাকে আমি চিনি না।”
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান অভিনেতা
একদিকে সাহেব অভিনেতা, অপরদিকে তিনি সাধারণ মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সবটা বিবেচনা করে তিনি কী চাইছেন? অভিনেতা বলেন “আমি চাই প্রশাসনিক ভাবে একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। বিশেষ করে যারা ড্রিঙ্ক করে গাড়ি চালাচ্ছেন তাদের। লাইসেন্স তো ক্যান্সেল হবেই। তার সাথে গ্রেফতারও হওয়া উচিত। ২০১৭ এর পর ওই ঘটনার কোনও সুরাহা হয়নি। সেলিব্রিটি হলে বেঁচে যাবে, এমনটা কিন্তু হয়ে এসেছে। আমি নিজে একজন সেলিব্রিটি হয়ে এই কথাটা বলছি। ক্রাইম করে বেরিয়ে চলে যাবে, এমনটা হতে পারে না।”