ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সুইডেনে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেল সালওয়ান মোমিকার (Salwan Momika) দেহ। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরান পোড়ানোর জন্য কুখ্যাত সালওয়ান মোমিকাকে সুইডেনে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। স্টকহোম আদালতের সূত্র ধরে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, ২৯ জানুয়ারি স্টকহোমের কাছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার করা হয়।
৩৮ বছর বয়সি মোমিকা (Salwan Momika) একসময় ইরাকি মিলিশিয়ার নেতা ছিলেন। ক্ষমতার লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর তাকে ইরাক ছাড়তে হয়। যদিও তিনি জন্মসূত্রে একজন খ্রিস্টান ছিলেন এবং পরে নাস্তিকতাকে গ্রহণ করেন, তার কর্মকাণ্ড একজন প্রাক্তন মুসলিমের মতোই ছিল।
আদালতের রায় ঘোষণার আগেই মৃত্যু (Salwan Momika)
মোমিকার (Salwan Momika) মৃত্যুর সময় স্টকহোমের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে ‘জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর’ অভিযোগে রায় ঘোষণা করতে চলেছিল। ২০২৩ সালের বিক্ষোভের সময় তিনি কোরান পোড়ানোর মতো বিতর্কিত কাজ করেছিলেন, যার কারণে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের শুনানি ৩০ জানুয়ারি হওয়ার কথা ছিল, তবে তার মৃত্যুর কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে।
২০২৪ সালেও একবার তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যখন তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। তবে কয়েকদিন পরে তিনি প্রকাশ্যে এসে জানান, এটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।
কোরান পোড়ানোর ঘটনায় মুসলিম দেশগুলোর ক্ষোভ (Salwan Momika)
২০২৩ সালের জুন মাসে ঈদের সময়, মোমিকা (Salwan Momika) স্টকহোমের সবচেয়ে বড় মসজিদের সামনে কোরানের ওপর পা রেখে সেটি পুড়িয়ে দেন। তার এক বন্ধু পুরো ঘটনাটি ভিডিয়ো করেন। এই ঘটনার পর মুসলিম দেশগুলির মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: Trump vs Meta: ট্রাম্প ও মেটার মধ্যে মামলার মীমাংসা, ট্রাম্পের লাইব্রেরির জন্য মিলবে ২২ মিলিয়ন ডলার
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং সুইডেনের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর এর প্রভাব পড়ে। এই ঘটনাকে ইসলামবিদ্বেষী আচরণ বলে মনে করা হয়, যা ইউরোপে ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতির বিষয়টিকে সামনে এনে দেয়।
কে ছিলেন সালওয়ান মোমিকা? (Salwan Momika)
ইরাকি মিলিশিয়া নেতা থেকে সুইডেনে শরণার্থী
মোমিকা ইরাকের তাল আফার শহরের এক খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমাম আলি ব্রিগেড নামে একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মিলিশিয়া গোষ্ঠী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। এটি ইরাকি সেনাবাহিনীর সঙ্গে একত্রিত হয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
২০১৭ সালে তিনি মসুল শহরের বাইরে নিজস্ব একটি সশস্ত্র দল চালাতেন। তবে ২০১৮ সালে রায়ান আল-কালদানি নামে এক খ্রিস্টান মিলিশিয়া নেতার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এবং প্রাণের ভয়ে ইরাক ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
প্রথমে তিনি সুইডেনে আশ্রয় চান, পরে নরওয়েতেও আবেদন করেন। ২০২১ সালে তাকে সুইডেনে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সুইডেনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হতে থাকে।
নাস্তিক হয়ে উঠলেও আচরণ ছিল প্রাক্তন মুসলিমের মতো
নিজেকে “উদারপন্থী নাস্তিক সমালোচক ও চিন্তাবিদ” বলে দাবি করতেন মোমিকা। যদিও তিনি খ্রিস্টান থেকে নাস্তিক হয়েছিলেন, তার আচরণ একজন প্রাক্তন মুসলিমের মতো ছিল।
প্রাক্তন মুসলিম বলতে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একসময় ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিলেন কিন্তু পরে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে ইসলাম ত্যাগ করেন। কেউ কেউ ধর্মের শিক্ষার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন, আবার কেউ কেউ ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে নিরাশ হয়ে পড়েন।
সুইডেন তার থাকার অনুমতি বাতিল করেছিল
২০২৪ সালে সুইডেনের সরকার তার আশ্রয় অনুমতি বাতিল করে। তদন্তে দেখা যায়, তিনি তার শরণার্থী আবেদন করার সময় মিথ্যে তথ্য দিয়েছিলেন। তবে তার জীবনহানির আশঙ্কার কারণে তাকে সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।
ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড ও বিতর্ক
মোমিকা প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা করতেন এবং কোরানকে “বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক বই” বলে অভিহিত করেছিলেন।
একটি পোস্টে তিনি লেখেন, “আমি ইসলামের বিরুদ্ধে আমার লড়াই চালিয়ে যাব। আমি এই লড়াইয়ে অনেক মূল্য দিয়েছি এবং দিতে রাজি আছি, যে কোনো মূল্যে।”
সুইডেনের সরকার তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
সুইডেনে তার কর্মকাণ্ডের পরিণতি
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সুইডেনের মালমো শহরে মোমিকার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে হিংসাত্মক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সুইডেনের আদালত তার বাকস্বাধীনতার অধিকারের স্বপক্ষে রায় দিলেও, এই ঘটনা দেশের ভিতরে ও বাইরে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়।
আরও পড়ুন: Denmark Boost Security: আর্কটিক ও উত্তর আটলান্টিকে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে ডেনমার্ক
সুইডেনের বিদেশমন্ত্রী তার কার্যকলাপকে “ইসলামফোবিয়া” বলে অভিহিত করেন।
এক ব্যতিক্রমী জীবনের সমাপ্তি
মোমিকার জীবন ছিল ঘটনাবহুল। ইরাকের তাল আফারে এক সাধারণ মানুষ থেকে তিনি হয়ে ওঠেন মিলিশিয়া নেতা, তারপর শরণার্থী হয়ে সুইডেনে গিয়ে ইসলামবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রে চলে আসেন।
এবং শেষ পর্যন্ত, সুইডেনে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে মৃত পাওয়া গেল, যখন তিনি সুইডেনে থাকার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন।