ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়েছে SCALP মিসাইল, যা সম্প্রতি ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ ব্যবহার করা হয় বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে(SCALP Missile)। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ভারতের আকাশ থেকে ভূমিতে নিখুঁত ও দূরপাল্লার আঘাত হানার সক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়েছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, SCALP-এর সফল ব্যবহার ভারতের স্ট্র্যাটেজিক ডিটারেন্স বা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
SCALP কী? (SCALP Missile)
SCALP (Système de Croisière Autonome à Longue Portée), যা ব্রিটিশদের Storm Shadow নামেও পরিচিত, একটি long-range, air-launched cruise missile। এটি ফ্রান্সের MBDA সংস্থা তৈরি করেছে। মিসাইলটি মূলত ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং গ্রীস-এর সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ব্যবহৃত হয়, এবং ২০২০ সালের পর ভারতের হাতে আসে রাফাল যুদ্ধবিমান চালুর পর।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য(SCALP Missile)
- দূরত্ব: প্রায় ৫০০ কিমি পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
- গতি: সাব-সনিক (subsonic), কিন্তু অতি উচ্চমানের স্টিলথ প্রযুক্তির কারণে শত্রুপক্ষের রাডারে ধরা পড়ে না।
- উচ্চতা: ভূমির খুব কাছ দিয়ে উড়তে পারে (terrain hugging), যা প্রতিপক্ষের রাডার ফাঁকি দিতে সাহায্য করে।
- Warhead: এটি ৪৫০ কেজি ওজনের BROACH ওয়ারহেড নিয়ে আসে, যা গভীর প্রতিরক্ষা কাঠামো ধ্বংসে সক্ষম।
- নির্দেশনা পদ্ধতি: GPS, inertial navigation এবং terrain reference mapping এর সমন্বয়ে লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে পৌঁছায়।

SCALP ভারতের কাছে এল কীভাবে?(SCALP Missile)
২০১৬ সালে ভারতের সঙ্গে ফ্রান্সের একটি ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা হয়(SCALP Missile)। সেই চুক্তিরই অংশ হিসেবে SCALP ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের হাতে আসে। এটি রাফালের একটি অন্যতম প্রধান অস্ত্র এবং ভারতীয় বায়ুসেনার deep strike capability-এর মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে। ২০২০ সালে রাফাল প্রথম ভারতীয় বায়ুসেনায় (Indian Air Force) যুক্ত হলে, সঙ্গে আসে এই অত্যাধুনিক মিসাইল। ২০২১ সালে ভারতের একটি পরীক্ষামূলক অনুশীলনে এর প্রথম সফল উৎক্ষেপণ হয়।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে SCALP-এর ব্যবহার(SCALP Missile)
২০২৫ সালের ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এ পাকিস্তানের ভিতরে এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিতে বিমান থেকে হামলা চালায়। সামরিক সূত্র অনুযায়ী, রাফাল বিমান থেকে উৎক্ষেপিত SCALP মিসাইল ব্যবহার করেই এই হামলা চালানো হয়।তথ্য অনুযায়ী, বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, মুজাফ্ফরাবাদ ও কোটলি অঞ্চলে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলি এই মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করা হয়।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই মিসাইল?(SCALP Missile)
SCALP-এর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর স্টিলথ ও নিখুঁত লক্ষ্যভেদ ক্ষমতা(SCALP Missile)। এটি শত্রুর গভীরে প্রবেশ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, কিন্তু নিজে রাডারে ধরা না পড়ার মতো ক্ষমতা রাখে।এছাড়া, যেহেতু এটি যুদ্ধবিমান থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য, তাই বিমান বাহিনীর গতি ও রেঞ্জের সঙ্গে মিসাইলের শক্তি মিলে তৈরি করে এক মারাত্মক কৌশলগত ক্ষমতা।বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ঘাঁটিগুলি যেভাবে সুরক্ষিত, সেগুলিকে বাইপাস করে শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানতে SCALP আদর্শ অস্ত্র। এর নিখুঁত লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট অপারেশনে collateral damage কমিয়ে আনে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক তাৎপর্য(SCALP Missile)
ভারতের SCALP ব্যবহার করা শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও এক দৃঢ় বার্তা — ভারত আর সীমান্তপারে জঙ্গি কার্যকলাপ সহ্য করবে না এবং প্রয়োজন হলে সীমান্তের বাইরে গিয়ে জবাব দেবে(SCALP Missile)।তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, হামলায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যার মধ্যে শিশুও রয়েছে। এর ফলে ভারতের উপরে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।তবে ভারত বরাবরের মতো দাবি করেছে, এই হামলায় শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করা হয়েছে এবং এটি আত্মরক্ষার অধিকার।
ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি(SCALP Missile)
SCALP মিসাইলের সফল ব্যবহার ভারতকে ভবিষ্যতে আরও কৌশলগত সুবিধা এনে দেবে(SCALP Missile)। এটি চীন ও পাকিস্তান—উভয়ের বিরুদ্ধেই deterrence নীতিতে শক্তি যোগায়।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের দূরপাল্লার স্টিলথ মিসাইল প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে, ভারত তার ‘precision strike’ ক্ষমতাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে পারবে।SCALP কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এটি ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির রূপান্তরের প্রতীক। সীমান্তের বাইরে গিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানার মতো ক্ষমতা শুধু যুদ্ধের সময় নয়, বরং সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলতেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।