ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশ্ব রাজনীতির ক্রমবর্ধমান জটিল প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান যে দৃঢ় ও বিবেচনাপ্রসূত, তা ফের একবার প্রমাণ করেছে সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’(Shashi Tharoor)। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের পর, সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের বার্তা বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দেওয়া হয়। ভারতের তরফে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিচালিত কূটনৈতিক প্রচার মিশন ঘিরে দেশজুড়ে চর্চা তুঙ্গে। এই মিশনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারক শশী থারুর।অবাক করা বিষয় হল, থারুর এই মিশনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে সরাসরি প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের। দ্য হিন্দু-তে প্রকাশিত তাঁর কলামে তিনি মোদীকে আখ্যায়িত করেছেন ‘ভারতের এক প্রধান সম্পদ’ হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রীর কর্মোদ্যম-আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা (Shashi Tharoor)
শশী থারুর লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কর্মশক্তি, দৃষ্টিভঙ্গির গতিশীলতা এবং বৈশ্বিক মঞ্চে সক্রিয় উপস্থিতির মানসিকতা ভারতকে আজ আন্তর্জাতিক স্তরে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে(Shashi Tharoor)। এই নেতৃত্ব শুধু প্রশাসনিক নয়, কূটনৈতিক শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।’ এই বক্তব্য ঘিরেই তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য। কংগ্রেসের অন্দরে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও থারুরের মত স্পষ্ট , ‘জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে রাজনৈতিক পার্থক্য নয়, ঐক্যই শেষ কথা।’ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর বৈঠকের প্রশংসা করেছিলেন থারুর। তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্নও উঠেছিল। সেই সময় তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে জানিয়েছিলেন, তিনি কংগ্রেসের জন্য কাজ করতে সব সময়েই প্রস্তুত।

‘অপারেশন সিঁদুর’ (Shashi Tharoor)
তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদের মতে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে কূটনৈতিক সফর ছিল দেশের সংকল্প এবং বিশ্বকে সঠিক ভাবে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি মুহূর্ত(Shashi Tharoor)। এর ফলে বোঝা যায়, ভারত ঐক্যবদ্ধ থাকলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্পষ্ট এবং দৃঢ় ভাবে নিজেদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা যায়। থারুরের দাবি, ওই সফর থেকে বেশ কিছু শিক্ষাও মিলেছে। যেমন একতার শক্তি, স্পষ্ট বার্তার ক্ষমতা, ‘সফ্ট পাওয়ার’ (দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি)-এর মূল্য এবং কূটনীতির অপরিহার্যতা-এগুলি গুরুত্ব অনুধাবন করা গিয়েছে বলে মত কংগ্রেস নেতার।তিনি জানান,’আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছি ভারতের পদক্ষেপ ছিল আত্মরক্ষার এক ন্যায্য ও দায়িত্বশীল প্রতিক্রিয়া, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বৈধ। আমাদের বক্তব্যের সাফল্য ছিল বিভিন্ন দেশের নীতিগত অবস্থানে পরিবর্তন।’
আরও পড়ুন-BJP MLA: বন্দে ভারতে বিজেপি বিধায়কের দাদাগিরি! যাত্রীকে বেধড়ক মারধর
‘টেক, ট্রেড, ট্র্যাডিশন’ (Shashi Tharoor)
আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভারতের তিনটি ‘টি’-এর প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন কংগ্রেস নেতা- ‘টেক, ট্রেড, ট্র্যাডিশন’ (প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং ঐতিহ্য)। তাঁর মতে এই তিনটি বিষয়ই আগামী দিনে ভারতের কৌশলগত অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে(Shashi Tharoor)। তাঁর কথায়, ‘আজকের বিশ্বে ভারতের উচিত তিনটি স্তম্ভে নিজেদের অবস্থান গড়ে তোলা প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং ঐতিহ্য। এই তিনের সমন্বয়েই গঠিত হতে পারে এক আধুনিক, মানবিক ও বিশ্বগ্রহণযোগ্য ভারত।’ভারত যে বিশ্বকে আরও ‘ন্যায়বিচারপূর্ণ, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ’ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া ওই সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সফরের সময়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। থারুরের দাবি, প্রতিনিধিদল ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সফল হয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশের রাজধানীতে যে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে, তা থেকেই এটি স্পষ্ট বলে মত কংগ্রেস সাংসদের।

আরও পড়ুন-By-Election: উপনির্বাচনের ৩ কেন্দ্রে শাসকদলের জয়জয়কার! গুজরাটে চমক আপের, কেরলে কংগ্রেসের দাপট
কংগ্রেসে অস্বস্তি (Shashi Tharoor)
শুধু নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভূমিকাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে কেরলে বাম জোট শাসিত সরকারের ‘প্রশংসা’ করেও কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন শশী থারুর(Shashi Tharoor)। একটি নিবন্ধে কেরলে নতুন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান (স্টার্ট আপ) বৃদ্ধির প্রশংসা করেন তিনি। কেরলে কংগ্রেস বিরোধী শিবিরে রয়েছে। যদিও কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্য, তিনি বামেদের জোট সরকারের প্রশংসা করেননি, কেবল রাজ্যের উন্নয়নকে তুলে ধরেছেন। কংগ্রেসের কেরল নেতৃত্ব ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, দলের হাজার হাজার কর্মীর সঙ্গে যেন ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ না-করেন থারুর। এবার ফের বৈশ্বিক কূটনীতিতে মোদীর ভূমিকার প্রশংসা করলেন তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ।
