ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: খো খো বিশ্বকাপ (Kho Kho World Cup) জিতে বাড়ি ফিরলেন বাংলার গর্ব সুমন বর্মন (Suman Barman)। ফুল মালা বাজনায় তাঁকে বরণ করল এলাকাবাসী। হুগলির চুঁচুড়া মিলন পল্লীর দিনমজুরের পুত্র সুমনের মাথাতেও উঠেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের শিরোপা। কিন্তু সাফল্য এলেও পেটে ভাত জুটবে কিনা, সংশয় হয়েছে চুঁচুড়ার বর্মন পরিবারে। শুধু সাফল্যই নয়, একটা চাকরি চায় সুমন।
এই প্রথম বার অনুষ্ঠিত হল খো খো বিশ্বকাপ (Kho Kho World Cup)। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে বসেছিল বিশ্বকাপের আসর। উদ্বোধনী খো খো বিশ্বকাপে ভারতে এসেছে জোড়া ট্রফি। ফাইনালে নেপালকে ৭৮-৪০ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারতের মেয়েরা। আর পুরুষদের খো খো বিশ্বকাপ ফাইনালেও নেপালকে ৫৪-৩৬ ব্যবধানে হারায় ভারত। ভারতীয় দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের খো খো বিশ্বকাপজয়ী পুরুষ টিমের সদস্য হুগলির সুমন বর্মন।
সুমনের অভাবের সংসার (Kho Kho World Cup)
অভাবের সংসারে তাঁর দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও জোটেনি ঠিক মতো, সেখান থেকে বিশ্বজয়ী হয়েছেন সুমন (Suman Barman)। আবেগে ভাসছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ছেলে যে ভাবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে, তাতে আনন্দে মেতে উঠেছেন সুমনের মা, বাবা। তাঁরা চান ছেলে আরও খেলুক, এবং আরও নিজের পরিচিতি ছড়িয়ে দিক। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে ১৩-১৯ জানুয়ারি বসেছিল উদ্বোধনী খো খো বিশ্বকাপের (Kho Kho World Cup) আসর। পুরুষদের ২০টি দল ও মহিলাদের ১৯টি দল তাতে অংশ নিয়েছিল। ফাইনালে নেপালের বিরুদ্ধে পুরুষ দলে বাংলা থেকে একমাত্র প্রতিনিধিত্ব করেছেন সুমন বর্মন। তাঁর বাড়ি হুগলির চুঁচুড়া মিলন পল্লীতে।
জানা গিয়েছে, খুব ছোট থেকেই খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন সুমন। পাড়ার বাঘাযতীন মাঠে প্রথম খো খো খেলা শুরু তাঁর। বর্তমানে ব্যান্ডেল হরনাথ স্কুল মাঠে প্র্যাক্টিস করেন। রাজ্য, দেশের হয়ে খেলে বহু পুরস্কার এবং শংসাপত্র মিলেছে। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো তাঁর পরিবারের অবস্থা। দু’বেলা দু’মুঠো ঠিক মত খেতে পাননি, খেলার জুতো-পোশাক কেনার সামর্থ ছিল না। তারপরও খো খো খেলা থামাননি তিনি।
আরও পড়ুন: India beat England: অনবদ্য অভিষেক, একতরফা ম্যাচে ইডেনে ইংরেজ বধ ভারতের
সুমনের বাবা রামদেব বর্মন। তিনি দিনমজুর। মা সুজাতা বর্মন। পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে মুক-বধির। সুমনের বোন এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। আর সুমন কলেজে পড়েন। পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমসিম খান সুমনের বাবা। একটা টালির চালের ঘর। তাতে কোনও ভাবে দিন গুজরান হয়। তবু ছেলে মেয়ের খেলায় রামদেব ও সুজাতা বরাবর উৎসাহ দেন।
বহু পুরস্কার পেলেও বিশ্বকাপ (Kho Kho World Cup) জয়ের অনুভূতি একেবারে আলাদা। জায়ান্ট স্ক্রিন লাগিয়ে খেলা দেখেছে সুমনের বন্ধুরা। ফাইনাল দেখার জন্য দক্ষিণ ভারত থেকে ফিরেছিলেন সুমনের বাবা। ভারত এবার বিশ্বকাপ জেতায় এবং সুমন (Suman Barman) ভালো খেলায় সকলে খুবই খুশি। দাদার কষ্ট, পরিশ্রম ও সাফল্যের কথা বলতে গিলে বোন রিয়া কেঁদে ফেলেন।
আরও পড়ুন: Bally bridge is closed: ডানকুনি লাইনে ১০০ ঘণ্টা বন্ধ ট্রেন-বন্ধ বালি ব্রিজ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
কিন্তু বিশ্বকাপ জিতলেও কি পরিবারের দুর্দশা ঘুচবে? সুমনের বাবা-মা বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। তাই অন্য খেলার জন্য ছেলে মেয়েকে উৎসাহ দিতে পারিনি। খো খো খেলেই ওরা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করছে। কিন্তু সংসার টানতে ওদের কষ্ট করে যেতে হচ্ছে।’ ছেলে বিশ্বকাপ জিতেছে। এ বার তাই আর্থিক কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে, সেই আশাই করছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। মিলন পল্লীর বাসিন্দারা জানান, সুমনের একটা চাকরির প্রয়োজন। (Kho Kho World Cup) ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা হলে যে উন্মাদনা চোখে পড়ে, খো খো খেলায় তার ছিটেফোঁটাও নেই। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা কেউ সুমনের বাড়িতে গিয়ে খোঁজও নেয়নি। সুমনের পাড়ার লোকজন জানিয়েছেন, তিনি বাড়ি ফিরলে উৎসব হবে। ব্যান্ডপার্টি হবে হুগলির চুঁচুড়ার মিলন পল্লীতে।