ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বিশেষ নিবিড় সংশোধনের লক্ষ্য হল ভোটার তালিকায় যোগ্য নাগরিকদের নাম যুক্ত করা (Supreme Court Refuses Interim Stay) এবং অযোগ্য ভোটারদের বাদ দেওয়া। বিহারের জন্য সর্বশেষ এই ধরনের সংশোধন ২০০৩ সালে করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টে উঠল ভোটার তালিকা সংশোধনের ইস্যু (Supreme Court Refuses Interim Stay)
সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার শুনানি করবে বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ তীব্র পুনর্বীক্ষণ (Special Intensive Revision বা SIR)-এর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলির বিষয়ে। আদালত মামলাকারীদের তরফে দ্রুত শুনানির আবেদন মঞ্জুর করলেও, আপাতত এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে (Supreme Court Refuses Interim Stay)।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের এই তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একাধিক পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। এই আবেদনের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-এর সাংসদ মনোজ ঝা, নির্বাচনী স্বচ্ছতা রক্ষাকারী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR), মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (PUCL), অ্যাক্টিভিস্ট যোগেন্দ্র যাদব, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং প্রাক্তন বিধায়ক মুজাহিদ আলম।
“দলিত, নারী ও গরিবরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন” (Supreme Court Refuses Interim Stay)
মামলাকারীদের পক্ষে প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি, শাদান ফারাসত ও গোপাল শংকরনারায়ণ শুনানিতে জানান, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে (Supreme Court Refuses Interim Stay)। বিশেষ করে মহিলারা, দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কী এই ‘স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন’? (Supreme Court Refuses Interim Stay)
২৪ জুন থেকে শুরু হওয়া এই স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের লক্ষ্য হল উপযুক্ত নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং অনুপযুক্ত বা অযোগ্যদের বাদ দেওয়া। বিহারে শেষবার এই ধরনের পুনর্বীক্ষণ হয়েছিল ২০০৩ সালে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, দ্রুত নগরায়ন, স্থানান্তরের হার বেড়ে যাওয়া, নতুন ভোটারদের সংযোজন, মৃত্যুর খবর সময়মতো না পাওয়া, এবং অবৈধ বিদেশিদের নাম উঠে আসার মতো সমস্যার কারণে এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়।
প্রক্রিয়াটি কীভাবে চলবে?
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের নথি যাচাই করবেন। ভোটার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার নির্দিষ্ট নিয়মাবলি অনুসরণ করেই কাজ চলবে। কমিশন জানিয়েছে, বয়স্ক, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, দরিদ্র ও অন্যান্য প্রান্তিক মানুষদের যেন হয়রানি না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে যাতে তালিকা প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়েই সমস্যা চিহ্নিত হয়ে যায়।
বিরোধীদের অভিযোগ: রাজ্য ক্ষমতা ব্যবহার করে ভোটার বাছাই
কংগ্রেসের অভিযোগ, এই তালিকা সংশোধনের নামে ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটারদের বাদ দেওয়া হতে পারে। কংগ্রেস বলেছে, “লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মচারী এখন ঠিক করবেন কার নথি সঠিক, কে ভোট দিতে পারবেন এবং কে পারবেন না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোটারদের বাদ দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তেজস্বী যাদব বললেন, “এটা একটা ষড়যন্ত্র”
বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব এই তালিকা সংশোধনকে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “২০০৩ সালে যখন শেষবার এই ধরনের তালিকা সংশোধন হয়েছিল, তখন তা শেষ হতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছিল। এবার ভোট নভেম্বর মাসে। এখন থেকে মাত্র দু’মাসের মধ্যে ৮ কোটি মানুষের নতুন তালিকা তৈরি করতে হবে! তার ওপর ৭৩ শতাংশ বিহার এখন বন্যায় আক্রান্ত!”
আরও পড়ুন: Kangana Ranaut: ‘আমি মন্ত্রিসভার সদস্য নই!’ বন্যা বিধ্বস্ত মান্ডিতে গিয়ে বিতর্কে কঙ্গনা
বিজেপির পাল্টা: “ভুয়ো ভোটার সরানোয় দোষ কোথায়?”
বিহারে এনডিএ জোটের শরিক বিজেপি এই প্রক্রিয়াকে নির্বাচনী স্বচ্ছতা রক্ষার প্রয়াস বলে ব্যাখ্যা করেছে। বিজেপি নেতা ও বিহারের মন্ত্রী নিতিন নবীন বলেন, “যদি আসল ভোটারদের যাচাই করা হয় আর ভুয়ো ভোটারদের বাদ দেওয়া হয়, তাহলে কংগ্রেস এতে আপত্তি করছে কেন? বিরোধীরা কি ভুয়ো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়?”
কী হবে বৃহস্পতিবার?
সুপ্রিম কোর্টে এই বিতর্কিত ইস্যুতে বৃহস্পতিবার শুনানি হবে। আদালতের রায়ে নির্ভর করবে বিহারে ভোটার তালিকার ভবিষ্যৎ, এবং তার প্রভাব পড়বে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের উপরেও।