ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: অবশেষে শেষ বাঘ-বন্দি খেলা (Tigress Zeenat)। গত ন’দিন ধরে যে বাঘিনি তিন জেলা দাপিয়ে বেরিয়েছে বাঘিনি। কার্যত নাকানিচোবানি খাইয়েছিল বন দফতরকে। সেই বাঘিনিই অনায়াসে ধরা পড়ল রবিবার বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহির জঙ্গলে। বন দফতর পরিকল্পনা বদল করাতেই সাফল্য এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বাগে বেপরোয়া বাঘিনি (Tigress Zeenat)
শনিবারই বাঁকুড়ার (Bankura) মুকুটমণিপুর থেকে গোঁসাইডিহিতে (Gosaindihi) ঢুকেছিল বাঘিনি। রাতেই জিনাতকে লক্ষ্য করে তিনটি ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ে বন দফতর। এলাকা ঘিরে জ্বালানো হয়েছিল আগুন। কিন্তু তাতেও ধরা দেয়নি সে। শেষে রবিবার বিকেলে চতুর্থ ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয় জিনাতকে লক্ষ্য করে। এরপরই ক্ষেতে লুটিয়ে পড়ে জিনাত। বেপরোয়া বাঘিনি (Tigress Zeenat) বাগে আসায় অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তাঁরা।
বারবার ঠিকানা বদল (Tigress Zeenat)
ন’দিন আগে ঝাড়খণ্ডের কুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা হয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার কাটুচুয়া জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল বাঘিনি জিনাত (Tigress Zeenat)। তার পর দু’দিন ধরে কখনও ময়ূরঝর্ণার জঙ্গলে, আবার কখনও কাকড়াঝোড় জঙ্গলে নিজের ঠিকানা বদল করছিল সে। পরে তেলিঘানার জঙ্গল হয়ে জিনাত প্রবেশ করে পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানা এলাকার রাইকা পাহাড়ে। রাইকা পাহাড় ও পার্শ্ববর্তী ভাঁড়ারি পাহাড়ে দিন চারেক কাটিয়ে মানবাজারের ডাঙ্গরডিহির জঙ্গলে হাজির হয় সে। সেখান থেকেই শুক্রবার ভোরের দিকে জ়িনত কুমারী নদী পেরিয়ে ঢুকে পড়ে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের গোঁসাইডিহির জঙ্গলে। বন দফতরের লাগাতার চেষ্টায় রবিবার সন্ধ্যার মুখে সেখানেই ধরা দেয় বাঘিনি।
আরও পড়ুন: Malotipur Case Investigation: চাঁচল কাণ্ডে নয়া মোড়! মহিলার অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার!
বাঘিনির লুকোচুরি খেলা
দীর্ঘ ন’দিন ধরে বন দফতরের সঙ্গে চলেছে বাঘিনির লুকোচুরি খেলা। সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় থাকার সময় সে ভাবে বাঘিনিকে ধরার চেষ্টা করেনি বন দফতর। শুধুমাত্র তার গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছিল। বন দফতরের আশা ছিল বাঘিনি স্বেচ্ছায় ফিরে যাবে ওড়িশার সিমলিপালের পুরনো ঠিকানায়। কিন্তু বন দফতরের সেই আশায় জল ঢেলে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের দিকে চলে যায় বাঘিনি। ফলে পরিকল্পনা বদল করে তাকে খাঁচাবন্দি করার কৌশল নেয় বন দফতর। রাইকা পাহাড়, ভাঁড়ারি পাহাড়ে বিভিন্ন সময় ছাগল ও মোষকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে জিনাতকে ধরার চেষ্টা চালায় বন দফতর। কিন্তু লোভনীয় খাবারে রুচি না-দেখিয়ে নিজেই শিকার ধরে খেতে থাকে জিনাত। যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বন দফতরের আধিকারিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হতে শুরু করে।
শনিবার বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহির জঙ্গলে দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে নাইলনের জালের ঘেরাটোপে তিন বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়েও কাবু করা যায়নি তাকে। ঘুমপাড়ানি গুলি শরীরে লাগার পর প্রাথমিক ভাবে ঝিমুনিভাব এলেও কিছু ক্ষণ পরেই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে জিনাত। আবার জঙ্গলেই কোথাও লুকিয়ে পড়ছিল সে। ফলে শনিবারও অধরা থেকে যায় ওই বাঘিনি। এর পর গোটা জঙ্গল ঘিরে ফেলে জায়গায় জায়গায় আগুন লাগিয়ে তাকে খাঁচাবন্দি করার কৌশল নেওয়া হয়।
রবিবারই শেষ বাঘবন্দি খেলা
রবিবার আবার কৌশল বদল করে বন দফতর। সকালে বাঘিনিকে আরও কাছ থেকে সঠিক নিশানায় ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ার সিদ্ধান্ত নেয় বন দফতর। গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে জাল পেতে জিনাতের গতিবিধি আরও ছোট এলাকায় সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। দুপুর ঠিক ৩টে ৫৮ মিনিটে বিশেষজ্ঞ দল জঙ্গলের ঘেরা অংশে প্রবেশ করে অত্যন্ত কাছ থেকে জিনাতের শরীরের নির্দিষ্ট স্থান লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ে। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শিথিল হয়ে পড়ে জ়িনতের শরীর। এ বার আর অপেক্ষা না-করে তড়িঘড়ি কাবু হয়ে পড়া বাঘিনিকে ওড়িশার সিমলিপাল থেকে আনা বিশেষ খাঁচায় বন্দি করে ফেলে বন দফতর। রাজ্যের মুখ্য বনপাল এস কুনাল ডাইভাল বলেন, “বাঘিনি ধরা পড়ার পর সুস্থ রয়েছে।”
আরও পড়ুন: Passport Verification News: পাসপোর্ট জালিয়াতির হটস্পট পশ্চিমবঙ্গ,
বাঘিনি ধরা পড়ায় অভিনন্দন মুখ্যমন্ত্রীর
বাঘিনি ধরা পড়ার পরেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বন দফতরের আধিকারিকদের এবং জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং এলাকার বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা শুধুমাত্র এক প্রাণীকেই রক্ষা করেনি, আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্বকেও শক্তিশালী করেছে। আপনাদের এই অসামান্য কাজের জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ!”
এনক্লোজারে চিকিৎসাধীন বাঘিনি
বিগত ৯ দিন ধরে দীর্ঘ পথ ঘুরে, মানুষের তাড়া খেয়ে ক্লান্ত বাঘিনি। এই কয়েকদিনে ঠিকমতো খাবার পায়নি সে। তাই এখন দরকার সঠিক খাবার এবং বিশ্রাম। তার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলাদা এনক্লোজারে রেখে চিকিৎসা চলছে তাঁর। বিগত দুইদিনে চারবার ট্রাঙ্কুলাইজ করা হয়েছে জিনাতকে। তিন বছরের বাঘিনির শরীরে এর প্রভাব কতটা পড়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকরা। বন দফতর সূত্রে খবর, জিনাত সুস্থ হয়ে উঠলে, তাকে ফের পাঠানো হবে ওড়িশায়। তবে ঘুমের গুলির প্রভাব কাটিয়ে কবে সুস্থ হবে জিনাত, কবে তাঁকে ওড়িশায় ফেরত পাঠানো হবে, তার এখনও স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই বলেই বন দফতর সূত্রে খবর।